পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে জেরবার ভারতে মোদি ভক্তদের সোশ্যাল মিডিয়ার টাইম লাইন ভরে গিয়েছে ‘স্ট্যান্ড উইথ ইসরাইল’ হ্যাশটাগে। তাদের ভাবখানা এমন, মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিমরা মার খাচ্ছে, অতএব ভারতবর্ষে বিজেপির জনপ্রিয়তা বাড়বে! সমস্যা হচ্ছে মোদির ভক্তকুলের সাধারণ জ্ঞান এতই খারাপ, যে তারা এটাও জানে না, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কোন পক্ষের সমর্থনে দাঁড়ালে ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল হয়।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনে লাফিয়ে পড়ে নরেন্দ্র মোদি নিজে এবং তার অনুগামীরা যথেষ্টই সমালোচিত হয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও শিক্ষা না নিয়ে আবার আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে নিজেদের হাতিয়ার করতে ব্যাগ্র মোদির ভক্তকুল। সমস্যা হচ্ছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে জেরবার। ভক্তকুল হয়তো জানে না, গত দু’বছরে ইসরাইলে কোনও স্থায়ী সরকার তৈরি হতে পারেনি। একের পর এক নির্বাচন হয়েছে, কিন্তু কোনও নির্বাচনই নেতানিয়াহু সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আসতে পারেননি। তাই ভারতবর্ষে যেমন রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে গেরুয়া শিবিরকে আগ্রাসী হতে হয়, ঠিক তেমনই ইসরাইলের রাজনীতিতেও কোণঠাসা নেতানিয়াহু-র জন্য একমাত্র অবলম্বন ছিল ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরা। এবং ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী, ঘটনাচক্রে যাকে আবার ভারতবর্ষের গেরুয়া শিবির ‘রোল মডেল’ এবং নরেন্দ্র মোদির বন্ধু বলে প্রচার করতে বদ্ধপরিকর, সেই নেতানিয়াহু একই রকম ভাবে আগ্রাসী রাজনীতির পথে হেঁটে ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছেন। সেই সংঘর্ষ এমনই রক্তক্ষয়ী ও বিধ্বংসী চেহারা নিয়েছে, যে গোটা বিশ্বের রাজনৈতিক সমীকরণ আবার নতুন করে তৈরি হতে শুরু করেছে।
গাজায় ইসরাইলি সেনার হামলায় শনিবারই আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ইউ এস অ্যাসোসিয়েট প্রেস এবং আলজাজিরার ১২ তলা ভবন গুঁড়িয়ে গিয়েছে। তাতে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়লেও, নেতানিয়াহু বলেন, ‘এখনও অভিযান চলছে। যত দিন প্রয়োজন, তত দিন পর্যন্ত অভিযান চলবে। হামাসের মতো ইচ্ছাকৃত ভাবে সাধারণ নাগরিকদের নিশানা করছি না আমরা। বরং নিরীহ নাগরিকদের এড়িয়ে সন্ত্রাসবাদীদের উপরই সরাসরি আঘাত হানছি।’ তবে তিনি যে মিথ্যাচার করছেন তার প্রমাণ, ইসরাইলের হামলায় ৪১ শিশুসহ প্রায় দুইশ’ ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন।
ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের এবারের সংঘর্ষের সবচেয়ে খারাপ দিক হচ্ছে, সেটা ক্রমশই ইসরাইলের ভেতরেও জাতিদাঙ্গা এবং জাতিবিদ্বেষে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ, ইসরাইলের ভিতরেও ইহুদি এবং আরবদের মধ্যে বিভিন্ন শহরে সংঘর্ষ হচ্ছে। যা রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাইলের জন্য মোটেই স্বস্তিকর বিষয় হতে পারে না। তাছাড়া ইসরাইল যেভাবে ফিলিস্তিনের উপর বোমাবর্ষণ এবং সামরিক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে গোটা বিশ্বের মুসলিম সমাজ নতুন করে আলোড়িত হচ্ছে এবং ফিলিস্তিনের সমর্থনে একজোট হচ্ছে। মুসলিম বিশ্বে এই ক্ষোভ এবং আলোড়ন তুরস্কের ক্ষেত্রে যেমন সত্যি, তেমনই বাংলাদেশেও একই চিত্র ধরা পড়েছে। যখন গোটা বিশ্ব করোনার থাবায় জর্জরিত, তখন কোন আক্কেলে ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি বা স্থিতাবস্থাকে বদলে দিতে চাইলো, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ইসরাইলের বরাবরের বন্ধু আমেরিকা পর্যন্ত চুপ করে বসে থাকতে পারেনি, ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে বিশেষ প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। আমেরিকা যদিও ইসরাইলের আত্মরক্ষার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে, অর্থাৎ ইসরাইলি আগ্রাসনের জবাবে ফিলিস্তিনের ক্ষমতাসীন হামাসের রকেট হামলার থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য তেল আভিভের সামরিক পদক্ষেপের পাশে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু একইসঙ্গে ওয়াশিংটন বুঝতে পেরেছে গাজা ভ‚খন্ডে চলতে থাকা বোমাবর্ষণ আন্তর্জাতিক রাজনীতির সমীকরণকে পুরোপুরি বদলে দিতে পারে। মধ্যপ্রাচ্য বা আরবদেশগুলোর সঙ্গে এতদিন ওয়াশিংটনের যে ঘনিষ্ঠতা বা সখ্যতার সম্পর্ক ছিল, তা নষ্ট হয়ে যাবে যদি গাজাতে মুসলিমদের রক্ত এইভাবে ঝড়তে থাকে। এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আমেরিকার চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী রাশিয়া ইতিমধ্যেই চীনকে সঙ্গে নিয়ে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। রাশিয়া এবং চীন জাতিসংঘে গাজা ভ‚খন্ডে হামলা নিয়ে আলোচনা চায়। ফিলিস্তিনের পাশে মস্কো এবং বেইজিং, আর ঈদের সময় মুসলিমদের উপর আক্রমণের প্রতিবাদে ফুঁসতে থাকা ইসলামি বিশ্ব ওয়াশিংটনের জন্য খুব স্বস্তিদায়ক বিষয় হতে পারে না।
গাজায় ইসরাইলের আক্রমণ আরও আলোড়ন তৈরি করেছে, কারণ এই গোটা ঘটনাটাই ঘটেছে মধ্যপ্রাচ্যে ঈদ উদ্যাপনের সময়। এবং ইসরাইলের সঙ্গে ফিলিস্তিনের বাসিন্দাদের প্রাথমিক সংঘর্ষের কারণ মুসলিমদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র বলে পরিচিত একটি মসজিদে নেতানিয়াহু-র পুলিশবাহিনী ঢুকে পড়া। একটি স্থানীয় সংঘর্ষ, কিন্তু যা গোটা বিশ্বের মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়, তাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা আবার মধ্যপ্রাচ্যকে বারুদের স্ত‚পের উপর বসিয়ে দিয়েছে। ওই পবিত্র মসজিদকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা দিয়ে যে স্ফুলিঙ্গ জ্বলে ওঠে, তাই আজ ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধে পরিণত হয়েছে।
ফিলিস্তিনের শাসক হামাস গোষ্ঠী যেমন ইসরাইলকে লক্ষ্য করে রকেট ছুঁড়ছে, এবং তার পরিণতিতে ইতিমধ্যেই ১০ জন মারা গিয়েছেন, তেমনই তেল আভিভও পাল্টা আক্রমণে গিয়ে গাজা ভ‚খন্ডে যথেষ্ট বোমাবর্ষণ করেছে। ইসরাইলের এই বোমাবর্ষণে গাজাতেও ৫৩ শিশুসহ মৃতের সংখ্যা দু’শোর কাছাকাছি। ইসরাইল- ফিলিস্তিনের সংঘর্ষে মৃত্যু এবং অনিশ্চয়তা গত ৫০ বছরের একমাত্র বাস্তব। কিন্তু সেই বাস্তব যখন গোটা বিশ্বের মুসলিম সমাজকে আন্দোলিত করে, তুরস্ক থেকে ইরান একই সুরে কথা বলে, আর সেই মুসলিম কণ্ঠস্বরের পাশে দাঁড়ায় রাশিয়া এবং চীনের মতো শক্তিধর রাষ্ট্র, তখন গোটা বিশ্বতে উত্তেজনাকার পরিস্থিতি তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। সূত্র : কলকাতা ২৪।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।