বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মুসলিম মিল্লাতের জন্য ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা আল্লাহ পাকের দেয়া এক অনন্য নেয়ামত। এতদ প্রসঙ্গে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদের ময়দানে গমন করতেন। সর্বপ্রথম তিনি নামাজ পড়াতেন। নামাজ শেষ করে লোকদের দিকে ফিরে খুতবা দেয়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়াতেন। তখন লোকেরা শৃঙ্খলা সহকারে কাতারে বসে থাকত। এ সময়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) সমবেত মুসল্লীদের ওয়াজ ও নসীহত করতেন। শরীয়তের আদেশ-নিষেধ শোনাতেন। তখন যদি কোনো সেনাবাহিনী গড়ে তুলে কোনো দিকে পাঠানোর ইচ্ছা করতেন, তাহলে তিনি (উভয় ঈদের খুতবার পর) তা’ পাঠিয়ে দিতেন। অথবা কোনো বিশেষ বিষয়ে কোনো নিষেধজারী করা তাঁর লক্ষ্য হলে সে সময়ে তিনি তাও সম্পন্ন করতেন। অতঃপর তিনি ঈদগাহ হতে প্রত্যাবর্তন করতেন। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)।
তবে, বৃষ্টিপাত ও অন্য কোনো কারণে ময়দানে সমবেত হওয়া সম্ভব না হলে মসজিদেও ঈদের নামাজ আদায় করা যায়। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) এমনটিও করেছেন। হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন : একবার ঈদের দিন বৃষ্টি হওয়ায় রাসূলুল্লাহ (সা.) লোকদের নিয়ে মসজিদে নবুবীতেই ঈদের নামাজ আদায় করলেন। (সুনানে আবু দাউদ; সুনানে ইবনে মাজাহ)।
ঈদের নামাজে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) পায়ে হেঁটে গমন করতেন। হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, ঈদের নামাজের জন্য পায়ে হেঁটে যাওয়া এবং বের হওয়ার পূর্বে (ঈদুল ফিতর-এর দিন) কিছু খাওয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাত বা রীতি। (মোসনাদে আহমাদ)।
ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য ময়দানে গমন ও প্রত্যাবর্তনকালে রাসূলুল্লাহ (সা.) পথ পরির্বতন করতেন। এক পথে গমন করতেন এবং অন্যপথে প্রত্যাবর্তন করতেন। এ প্রসঙ্গে হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদের দিনে ময়দানে যাতায়াতের পথ পরিবর্তন করতেন। ময়দানে যাতায়াতের প্রাক্কালে রাসূলে পাক (সা.) তাকবীর পাঠ করতেন। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা তোমাদের ঈদ সমূহকে তাকবীর বলার মাধ্যমে সুন্দর ও আনন্দমুখর করে তোল।
ঈদ সার্বজনিন উৎসব ও এবাদত। এই এবাদতে মহিলারাও অংশগ্রহণ করতেন। এ সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) দুই ঈদের নামাজে ময়দানে গমনের জন্য তাঁর কন্যা ও অন্যান্য মহিলাদের আদেশ করতেন। (মোসনাদে আহমাদ)।
প্রসঙ্গত : উল্লেখ্য যে, ঈদের নামাজে গমনের পূর্বে গোসল করা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাত। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদগাহে গমনের পূর্বে গোসল করতেন। (মোসনাদে আহমাদ)। এই হাদীসের আলোকে স্পষ্টতঃই বুঝা যায় যে, পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা লাভের অন্যতম উপায় হচ্ছে গোসল করা। এতে শারীরিক পবিত্রতা যেমন অর্জিত হয়, তেমনি মানসিক প্রশান্তি ও বহুগুণে অনুভূত হয়।
আর ঈদুল আযহার নামাজ আদায়ের পূর্বে কোনো কিছু পানাহার না করাই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাত। হযরত বুরাইদাহ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন কিছুই আহার না করে সকাল বেলা নামাজের জন্য যেতেন না এবং ঈদুল আযহার দিন ময়দানে নামাজ আদায়ের পূর্বে কিছুই খেতেন না। (জামেয়ে তিরমিজী, সুনানে ইবনে মাজাহ)। আল্লাহপাক আমাদেরকে ঈদের দিনের কর্মসূচি যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক এনায়েত করুন। আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।