বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) উপজেলা সংবাদদাতা : এবারের ঈদুল আযহায় প্রায় দশ সহ¯্রাধিক চামড়া মজুদ করেছেন রাজবাড়ীর ব্যবসায়ীরা। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা। তবে ঈদকে ঘিরে সক্রিয় রয়েছে সিন্ডিকেট। যে কারণে ন্যায্য মূল্য পাননি এবার কোরবানির পশু জবাই দেয়া ব্যক্তিরা। আর তারা টাকা কম পাওয়ায় হতদরিদ্র হকদার ব্যক্তিরাও পেলেন না এবার চাহিদামাফিক অর্থ।
গত মঙ্গলবার ছিল কুরবানি ঈদের দিন। ওই দিন বিকালে রাজবাড়ীর প্রেসক্লাব চত্বর, মিলিনিয়াম মার্কেট, ইংলিশ মার্কেট এবং ইউ মার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ীদের নিযুক্ত অর্ধশতাধিক ফড়িয়ারা চামড়া কেনেন। আর ফড়িয়ারা শতাধিক মৌসুমী ব্যবসায়ী এবং সরাসরি পশু জবাইকারীদের কাছ চামড়া ক্রয় করেন।
ওই দিন সরজমিনে দেখা যায়, ফড়িয়ারা ইচ্ছামত দামে কিনছেন চামড়া। সে সময় জেলা সদরের রামকান্তপুর থেকে আসা আবুল হোসেন বলেন, তিনি সাড়ে ১২ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছিলেন একটি খাসি। ওই খাসির চামড়া স্থানীয়ভাবে বিক্রি করতে না পেরে তিনি তা এখানে নিয়ে এসেছেন। তবে এখানে আসার পরও কেউ তার ওই চামড়া কিনতে চাচ্ছেন না। একজন ব্যবসায়ী চামড়াটির দাম বলেছেন মাত্র ৩০ টাকা। বাধ্য হয়ে ওই দামেই চামড়াটি তিনি বিক্রি করেছেন। জেলা সদরের চন্দনী থেকে আসা আশরাফুল ইসলাম নামে এক স্কুল শিক্ষক বলেন, তাদের কোরবানির গরুর দাম ছিল ৯০ হাজার টাকা। গরুটির আকারও ছিল বড়সর। অথচ মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ওই গরুর চামড়ার দাম বলেছিল মাত্র এক হাজার টাকা। যে কারণে চামড়াটি তিনি এখানে নিয়ে আসেন। তবে এখানে আনার পর তিনি পরেছেন মহা-বিপদে। কোনো ফড়িয়াই তার এ চামড়ার দাম আট শত টাকার বেশি বলছেন না। ফলে বাধ্য হয়ে ওই মূল্যেই তিনি চামড়াটি বিক্রি করেছেন। তিনি আরো বলেন, কুরবানীর চামড়ার টাকার হকদার হলো হতদরিদ্র গরিব মানুষ। আর চামড়ার দাম কম হওয়ায় মূলত ওই গরিব মানুষের হক নষ্ট করা হলো। তিনি আরো বলেন, চামড়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে গরিব মানুষের হক এবার নষ্ট করল। এতে আল্লাহ তায়ালা নারাজ হবেন।
চামড়া কিনতে থাকা ফড়িয়া আবুল কালাম বলেন, তাদের কিছু করার নেই। ব্যবসায়ীরা খাসি ৪০ টাকা আর গরুর চামড়া ১২ শত টাকা উপরে কিনতে নিষেধ করেছেন। যে কারণে গরুর আকার ভেদে চামড়া তারা ৫ শত থেকে ১১ শত টাকা মূল্যে কিনেছেন। সেই সাথে ছাগল ও খাসির চামড়া ২০ থেকে ৩০ টাকা পিট দরে কিনেছেন।
অপর ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, এবার ট্যানারী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করেছেন। ফলে উচ্চ মূল্যে চামড়া তারা কিনতে পারছেন না। আর উচ্চ মূল্যে চামড়া কিনলে লাভতো হবেই না বরং লোকশান নিয়ে বাড়ী ফিরতে হবে। যে কারণে তারা ব্যবসায়ীদের বেঁধে দেয়া মূল্যে চামড়া কিনেছেন।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজবাড়ীর চামড়া বাজারের গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ী ও তাদের নিযুক্ত শ্রমিকরা চমড়ায় লবণ লাগিয়ে প্রক্রিয়াজাত করতে মহাব্যস্ত। বাজারের ব্যবসায়ী বিপ্লব মিয়া বলেন, তিনি এবার ১৬ শত গরু এবং ২ হাজার ছাগলসহ ২১ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের চামড়া মজুদ করেছেন। এখনো কিনছেন। তিনিও বলেন, স্থানীয়ভাবে কোন সিন্ডিকেট তৈরী হয়নি। মূলত রাজধানী ঢাকা ও কুষ্টিয়া জেলাসহ ট্যানারী মালিক ও বড় বড় ব্যবসায়ীরা এবার সিন্ডিকেট করেছে। ওই সিন্ডিকেটের কারণে তারা এবার উচ্চ মূল্যে চামড়া কিনতে পারেননি।
অপর ব্যবসায়ী জাফর আলী মোল্লা বলেন, এবার তাদেরকে লবন যুক্ত চামড়া ৪০ টাকা ফুট দরে কিনতে বলা হয়েছে। যে কারণে তারা নিজেদের ইচ্ছামত দামে চামড়া কিনেছেন। তিনি আরো বলেন, রাজবাড়ীর ব্যবসায়ীরা প্রায় ৫০ লাখ টাকা মূল্যের দশ সহ¯্রাধিক চামড়ার মজুদ করেছেন। তবে তারা এবার ট্যানারী মালিকদের কোন সহযোগিতা পাননি। ট্যানারী মালিকরা অন্যান্য বার বকেয়া টাকা পরিশোধ করার পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করেছেন জেলা ভিত্তিক ব্যবসায়ীদের। অথচ এবার হয়েছে উল্টা। অতিরিক্ত টাকা তো দূরের কথা বকেয়া টাকাও তাদের পরিশোধ করা হয়নি। ফলে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী অর্থকষ্টে দিনপাত করছেন।
অপর ব্যবসায়ী সোহেল রানা বলেন, চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার প্রধান উপকরণ হলো লবন। আর ওই লবন এক লাফে ১০ টাকা থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। একটি ছাগলের চামড়ায় ১২ টাকা এবং গরুর চামড়ায় ১২৫ টার লবণ লাগছে। ফলে তাদের চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে বেগ পোহাতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, চামড়ায় লবণ না লাগালে তা পচে নষ্ট হয়ে যায়। লবণ লাগিয়ে দেড় থেকে দুই মাস পর্যন্ত চামড়া মজুদ রাখা যায়। রাজবাড়ীর চামড়া মূলত কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে ট্যানারী মালিকদের কাছে পৌঁছায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিবেশী দেশে চামড়ার বাজারদর অনেক বেশি। ফলে দেশের চামড়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধ না করলে বিপুল পরিমাণ চামড়া পরবর্তীতে পচার হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।