বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মাহে রমজানে নানা আনুষ্ঠানিকতার নামে বেহুদা অর্থ ব্যয় ও অপচয়ের মাধ্যমে অনেক রোজাদার রমজানের পবিত্রতা মর্যাদা যেমন ক্ষুণ্ন করে থাকে, তেমনি রোজা রেখেও রোজা ভঙ্গকারীর ন্যায় পাপ অর্জন করে থাকে। কোরআনের ভাষায়, ‘অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই’। জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে যে সব রোজাদার এমন সব কাজ করে থাকে যেগুলো অপচয়ের পর্যায়ভুক্ত, এবং রোজা বিনষ্টের জন্য যথেষ্ট।
সামাজিক অপরাধ হিসেবেও এগুলো বিবেচিত হয়ে থাকে। লৌকিকতা প্রদর্শন, মিথ্যাচার, গীবত বা পরনিন্দা, অহঙ্কার, দাম্ভিকতা ইত্যাদি রোজাদারদের কিছুতেই করা উচিত নয়। অহঙ্কার ও দাম্ভিকতা প্রদর্শনের মাধ্যমে সুনাম-সুখ্যাতি লাভের উদ্দেশ্যে যদি অর্থ অপচয়ের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় অথচ তার আশপাশের ভুখা দরিদ্র, ফকির, মিসকিন, অসহায়, অনাথ, এতিম এবং গরিব আপন-স্বজন ও অক্ষম প্রতিবেশী প্রভৃতি শ্রেণির লোকেরা নিদারুণ আর্থিক দুর্ভোগ কষ্টে দিন যাপন করে তাহলে দায়ী থাকতে হবে।
সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রদর্শনের যে মহৎ উদ্দেশ্য এ মাসে নিহিত, এবাদত বন্দেগির পাশাপাশি সেটা প্রদর্শন করার মাধ্যমে বাড়তি সাওয়াব হাসিল করা যায়। তা সমাজ কল্যাণেরও উপায় হয়। আর এ সমাজ কল্যাণ রমজান মাসে বহু রকমে হতে পারে, রোজাদারের উপকার ছাড়াও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিতেও এর ভূমিকা রয়েছে। হাদীসে রোজাদারকে ইফতার করানোর বহু ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। ইফতার করানোর ফলে রোজার প্রতি রোজদারের সম্মান বেড়ে যায়। ইফতার অনুষ্ঠান দেখে রোজা রাখার মন মানসিকতা সৃষ্টি হয়।
রোজাদারগণ পরস্পর ইফতারসামগ্রী বা সেহরির খাদ্য বিনিময় করলে কিংবা উপহার হিসেবে কিছু বিনিময় করলে উভয়ের মধ্যে ভালোবাসা সম্পর্কে বেড়ে যায়। সুতরাং রোজাকালীন সময়ে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব তথা পরস্পরের মধ্যে উপহার বিনিময় করলে একদিকে যেমন অধিক সাওয়াব হাসিল হয়, তেমনি অপরদিকে সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়। ‘মাওয়াসাত’ বা পরস্পর সহমর্মিতার আরো বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে, কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া (ইয়াদত করা), তার খবরগিরি করা, মৃত্যু বরণ করলে তার জানাজা-কাফন দাফনে শরিক হওয়া এবং মৃত ব্যক্তির পরিবার বর্গের প্রতি সমবেদনা-সহমর্মিতা প্রকাশ করা ইত্যাদি।
এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি এক ইহুদী অসুস্থকে দেখতে গিয়েছিলেন। ঘটনাটি হজরত আনাস (রা.)-এর বর্ণনা অনুযায়ী এই: এক ইহুদীর পুত্র হুজুর (সা.)-এর খেদমতে নিয়োজিত ছিল। সে অসুস্থ হয়ে পড়লে হুজুর (সা.) তাকে দেখতে গমন করেন এবং তার মাথায় হাত রেখে বলেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ কর।
ছেলেটি সেখানে উপস্থিত তার পিতার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার পিতা বলেন, আবুল কাসেমের (হুজুর সা.)-এর অনুসরণ কর। অর্থাৎ তিনি যা বলেছেন তা কবুল কর। তাই ছেলেটি ইসলাম গ্রহণ করল। হুজুর (সা.) যখন সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করেন, তখন সাহাবাগণকে জানালেন, মহান আল্লাহ তাআলার প্রতি সর্ব প্রকারের প্রশংসা, যিনি এ ছেলেটিকে দোজখ হতে মুক্তি দান করেছেন। (বোখারী)।
এতে প্রমাণিত হয় যে, ইহুদী ছেলেটি যতদিন হুজুর (সা.)-এর খেদমতে নিয়োজিত ছিল, সে সময় কখনো তিনি ইসলাম গ্রহণের জন্য তাকে বলেননি, তাকে ইহুদী ধর্ম ত্যাগ করতে উৎসাহিতও করেননি, কিন্তু যখন বুঝতে পারলেন যে, এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তার পরিণতি হবে দোজখ, তাই তিনি এ ইহুদী ছেলেটির প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন করেন এবং তার শেষ মুহূর্তে তাকে ইসলামের দাওয়াত দেন এবং ছেলেটি ইসলাম গ্রহণ করে বেহেশতের অধিকারী হয়। সুতরাং, ইসলামে সহানুভূতি প্রদর্শন সব সময়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ ও উত্তম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।