Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাবার হাতের স্মৃতি দেখতে বৃটিশ থেকে স্মলার ভ্রাতৃদ্বয় এলেন কুষ্টিয়ার গড়াই রেল ব্রীজে

কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রির্পোটার | প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০২১, ৬:১৩ পিএম

নস্টালজিয়ায় আক্রন্ত দুইজন মানুষ। আবেগে আপ্লুত, বাকরুদ্ধ। তাদের ত্রিশ বছরের স্বপ্ন আজ সফল হলো। এ যে কি আনন্দের ! হোক বাঙালি কিম্বা অন্য কোনো ভাষা ভাষির মানুষ, আবেগে সবাই আপ্লুত হয়। যা দেখা গেলো গতকাল কুমারখালির গড়াই নদীর ওপর রেলওয়ে ব্রীজে পা রাখতেই। নাইজেল স্মলার ও অড্রিন স্মলার দুই সহোদর।

তাদের বাবা অল্ডউইন স্মলার ছিলেন তৎকালীন ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানীর ব্রীজ ইঞ্জিনিয়ার। অল্ডউইন স্মলারের কর্মস্থল ছিলো কুষ্টিয়া। ১৯৩৭ সালে কুমারখালিতে গড়াই নদীর ওপর রেলওয়ে ব্রীজের কাজ শুরু হলে তিনি ছিলেন সার্বিক দায়িত্বে। ব্রীজটি নির্মন কাজ ১৯৩৭ সালে শুরু হয়ে সম্পন্ন হয় ১৯৩৯ সালে। সে সময় সৃষ্টির উল্লাসে আন্দোলিত নাইজেল স্মলারের বাবা অল্ডউইন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্রীজের অনেক ছবি তোলেন।

বৃটিশ নাগরিক অল্ডউইন ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ের প্রকৌশলীর চাকরি নিয়ে ভারতে আসেন ত্রিশের দশকে প্রথম দিকে। তাঁর কর্মস্থল নির্ধারন হয় কুষ্টিয়াতে। নাইজেলের নানা ব্রিটিশ নাগরিক হলেও চাকরি সুত্রে বসবাস করতেন ভারতের নাগপুরে। তাঁর মেয়ে তেরেসার সঙ্গে অল্ডউইনের বিয়ে হয়। ১৯৫১ সালে অল্ডউইন ইংল্যান্ডে ফিরে যান। ১৯৭৮ সালের ১৯ অক্টোবর ৭৪ বছর বয়সে তিনি মারা যান। মারা যাবার পূর্বে তিনি বড় ছেলে নাইজেল স্মলারকে অনেক ছবি দেখান ও গড়াই ব্রীজ তৈরির গল্প বলেন। বলেন বাংলাদেশ তথা কুষ্টিয়া-কুমারখালির অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা। বাবার মৃত্যুর ২ বছর পর হঠাৎই যেন নাইজেল আক্রন্ত হন নষ্টালজিয়ায়। বাবার সৃষ্টি গড়াই ব্রীজ দেখতে হবে।

সেই থেকে স্বপ্ন দেখা শুরু। কিন্তু সময় ও সুযোগ হয়ে ওঠে না। ৩০ বছর ধরে স্বপ্ন দেখার পর গত ২৮ মার্চ নাইজেল স্মলার ও তার ছোট ভাই অড্রিন স্মলার এবং ভিয়েতনামী বন্ধু হুয়াং লি বাংলাদেশে আসেন। এদেশে তারা দি বেঙ্গল টুরিস্ট লিমিটেডের তত্বাবধানে ওঠেন। গতকাল দুপুরে তারা টুর ম্যানেজার মহিউদ্দিন জিয়ার নেতৃত্বে আসেন কুমারখালি প্রেস ক্লাবে। কুমারখালি প্রেস ক্লাবের সভাপতি বাবলু জোয়ারদার তাদের সফর সঙ্গী হন ।

কুমারখালি প্রেস ক্লাব থেকে মাইক্রো গড়াই ব্রীজের দিকে যতো এগুতে থাকে, ততোই আবেগ তাড়িত হতে থাকেন স্মলার ভ্রাতৃদ্বয়। অবশেষে স্বপ্নের গড়াই ব্রীজ। স্পন্দিত বুকের স্পর্শ নিয়ে স্বপ্ন নেমে আসে ধরা তলে। আবেগে আপ্লুত, বাকরুদ্ধ স্মলার দুই ভাই। বাবার সৃষ্টি তারা ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখেন। যেনো বাবাকেই ছুঁয়ে দেখছেন তারা গভীর মমতায়। এ এক অন্য অনুভুতি। ব্রীজ তৈরির সময়ের তোলা স্মৃতিময় ছবি দেখিয়ে তারা বলেন, এই হচ্ছে গড়াই ব্রীজ, আর এই আমাদের বাবা।

তারা বলেন, বাবা এই ব্রীজ তৈরির অনেক গল্প আমাদের শুনিয়েছেন। শুনিয়েছের এদেশের প্রকৃতি, লালন, টেগর ও এদেশের মানুষের কথা। নাইজেল স্মলার পেশায় একজন মানষিক রোগের চিকিৎসক ও তার ভাই অড্রিন স্মলার ব্যাংকার। নাইজেল বলেন, আমরা চার ভাই, মা আছেন। তাঁর বয়স ৭৪ বছর। আমরা এ ব্রীজের ছবি ও ভিডিও চিত্র দেশে গিয়ে আমাদের মা ও অন্য দু’ ভাইকে দেখাবো। আমাদের বন্ধুদের দেখাবো বাবার সৃষ্টি। তাঁরা আবার গড়াই ব্রীজের কাছে আসবেন। কুমারখালি থেকে তাঁরা বিদায় নেন পড়ন্ত বিকালে ট্রেনের ইঞ্জিনে চড়ে। উদ্দেশ্যে, চলন্ত ট্রেন থেকে ব্রীজের ভিডিও চিত্র ধারন করা।



 

Show all comments
  • ইকরাম ৮ মে, ২০২১, ৭:২৩ পিএম says : 1
    Lucky kids
    Total Reply(0) Reply
  • Arifur Rahman Bhuiyan Arif ৮ মে, ২০২১, ৮:১৬ পিএম says : 1
    এই করোনার মাঝে এদের বাংলাদেশে আসতে দেয়া আর এই মাক্স বিহীন ঘুড়া ফেরা উচিত হয় নি! আগে স্বাস্থ্যবিধি পরে বাবার স্মৃতি
    Total Reply(0) Reply
  • Mahfuzur Rahman Shovon ৮ মে, ২০২১, ৮:১৮ পিএম says : 0
    তাঁদের বাবা সৎ ছিলেন, প্রায় একশো বছর পরেও দাঁড়িয়ে থাকা এই ব্রিজ-ই তার প্রামান দেয়, অথচ এখনকার সৃষ্টি গুলো.....!!
    Total Reply(0) Reply
  • Ferdous Arefin ৮ মে, ২০২১, ৮:১৮ পিএম says : 2
    Welcome brothers
    Total Reply(0) Reply
  • Md Zakir Hossain Aknda ৮ মে, ২০২১, ৮:২০ পিএম says : 0
    অভিনন্দন
    Total Reply(0) Reply
  • Dinesh Halder ৮ মে, ২০২১, ১১:০৪ পিএম says : 0
    Welcome
    Total Reply(0) Reply
  • sukhendra mohan das ৯ মে, ২০২১, ১২:০৭ পিএম says : 0
    Wel come to bangladesh.we are proud of you.
    Total Reply(0) Reply
  • Saiful Islam ১০ মে, ২০২১, ৮:৩৮ এএম says : 0
    বাবার কীর্তিকে দেখতে আসা মানে,বাবার প্রতি তাদের ভালবাসার বহি:প্রকাশ।
    Total Reply(0) Reply
  • Engr Md Shamsul Hoque ১১ মে, ২০২১, ২:১৭ পিএম says : 0
    Really they are very good son. Their visit indicated their endless love and respect to their father. Allah Bless them. I pray O Allah convert them to Islam.
    Total Reply(0) Reply
  • Engr Md Shamsul Hoque ১১ মে, ২০২১, ২:১৯ পিএম says : 0
    বাবার কীর্তিকে দেখতে আসা মানে, বাবার প্রতি তাদের ভালবাসার বহি:প্রকাশ। তাঁদের বাবা সৎ ছিলেন, প্রায় একশো বছর পরেও দাঁড়িয়ে থাকা এই ব্রিজ-ই তার প্রামান দেয়.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বৃটিশ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ