রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা
সোনালি আঁশ পাটের ফরিদপুর খ্যাত সালথার পাট চাষিদের মাঝে চরম দুর্দিন নেমে এসেছে। পাটের কাঙ্খিত মূল্য না পেয়ে তারা ক্রমেই পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে যেতে পারে। গতবারের তুলনায় উপজেলায় পাটের আবাদ কিছুটা কমে গেছে। পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, পোকামাকড়ের আক্রমণ রোধে কৃষি বিভাগের সহায়তা না পাওয়া, পাট জাগ দিতে জলাশয়ের অভাব, ভালো মানের বীজ ও সার সঙ্কটে পাটের আবাদ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে কৃষকেরা জানিয়েছেন। দেশের সর্বাধিক গুণগত মানসম্পন্ন পাট উৎপাদিত হয় এই সালথা অঞ্চলে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, উপজেলার মোট আয়তন ১৮৫.১১ বর্গকিলোমিটার। কৃষকের চাষাবাদি জমির পরিমাণ ১৩ হাজার ৬৭৫ হেক্টর। এখানে ৩০ হাজার ১২২টি কৃষি পরিবার রয়েছে। উপজেলায় এবছরে ১১ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। ২০১২-১৩ মৌসুমে পাটের ভালো মূল্য পাওয়ায় কৃষকেরা ব্যাপকহারে পাট আবাদে ঝুঁকে পড়েছিল। কিন্তু কাঙ্খিত মূল্য না পেয়ে তারা ক্রমেই হতাশ হচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন প্রসিদ্ধ হাটে পাট বিক্রি করতে এসে কৃষকেরা অনেকটা বাধ্য হয়েই লোকসান দিয়ে পাট বিক্রি করছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে পাটের আবাদ কমে যাবে বলে কৃষকদের আশঙ্কা। তবে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর দাবি করছে, বর্তমানে উচ্চ ফলনশীল জাতের পাটবীজ ব্যবহারের মাধ্যমে পাটের আবাদ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। সালথার প্রসিদ্ধ সদর বাজার, বালিয়া বাজার, ফুলবাড়িয়া, রসুলপুর, নকুলহাটিসহ পাটের বড় হাটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ভালো মানের এক মণ সোনালি আঁশ বিক্রি হচ্ছে ১৫শ’ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৭শ’ টাকা দরে। আর সাধারণ মানের পাট বিক্রি হচ্ছে ১২শ’ থেকে ১৪শ’ টাকা দরে। পাটকলগুলোর ফাঁন্দে পড়ে ফড়িয়া মহাজনদের সিন্ডিকেট দখল করেছে এসব বাজার। কৃষকেরা বাধ্য হয়ে কমমূল্যে পাট বিক্রি করছেন তাদের নিকট। সংঘবদ্ধ এই চক্র আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের দাম কমে যাওয়ার অজুহাতে পাটের দরপতন ঘটাচ্ছে। কৃষকেরা জানান, বাজারে ঘুরে কৃষকদের পাট বিক্রি করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আগে পাট নিয়ে বাজারে গেলে ব্যবসায়ীরা টানা-হেঁচড়া শুরু করে দিতেন। সেখানে এখন পাট নিয়ে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বসে থেকে বাধ্য হয়ে কম মূল্যে পাট বিক্রি করছেন। সিন্ডিকেটের কারণে পাটের বাজার ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় বর্তমানে ১ মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১২শ’ থেকে সর্বোচ্চ ১৭শ’ টাকা দরে। পাটচাষিরা জানান, চলতি বছর যে হারে পাটের দাম পাওয়া যাচ্ছে তাতে লাভতো দূরের কথা পাট চাষের খরচই উঠবে না। বীজ রোপণ থেকে বাজারে আনা পর্যন্ত সব মিলিয়ে পাট চাষ করতে কৃষককে উচ্চহারে নগদ টাকা গুনতে হয়। অনেকে টাকা ঋণ নিয়ে বর্গা জমিতে পাট চাষ করেছেন। এখন দ্রুত পাট বিক্রি করে তাদের ঋণ শোধ করতে হবে। তা নাহলে প্রতিদিনই বাড়বে সুদের কিস্তি। বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১ একর জমিতে পাওয়া যাচ্ছে ১২ থেকে ১৬ মণ পাট। এতে সবমিলিয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অথচ বাজারে বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ২০/২২ হাজার টাকার মতো। এর ফলে পাট বিক্রি করে খরচের টাকাই উঠছে না। এরপর আছে ব্যাংক লোন, দাদন ও বর্গা নেয়ার ব্যয়। সব মিলিয়ে মোটা অংকের লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। কৃষকেরা জানান, পাটের দাম কম হওয়া সত্ত্বেও দেনা পরিশোধ করার জন্য অনেকটা বাধ্য হয়েই কৃষকরা এখন পাট বিক্রি করে দিচ্ছেন। এ সুযোগে মুনাফা লুটে নিচ্ছেন মজুদদারেরা। কৃষকরা মনে করেন, এসব পাট যদি এখন বিক্রি না করে সংরক্ষণ করা যেত এবং পরে কোনো সুবিধাজনক সময়ে সরাসরি পাটকলগুলোতে বিক্রি করা যেত তাহলে মজুদদাররা মুনাফা লুটতে পারত না। কৃষকেরাও উপকৃত হতো। কৃষি অফিসার মোহাম্মাদ বিন ইয়ামিন বলেন, এ অঞ্চলে মণপ্রতি পাটের মূল্য কিছুটা কম রয়েছে। সালথায় হেক্টরপ্রতি ৮-৯ বেল পাট উৎপাদন হয়েছে। প্রতি মণ পাট সাড়ে ১৩শ’ থেকে সাড়ে ১৭শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।