যেভাবে ৫০০
ক্লাব ফুটবলে গোলের প্রায় সব রেকর্ডই তার দখলে। এবার সেই লিওনেল মেসি উঠে গেলেন আরেক উচ্চতায়। বার্সেলোনার জার্সি গায়ে ৫০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন মেসি।
তাপস বড়–য়া রুমু
সব ক্রীড়াবিদেরই স্বপ্ন থাকে জাতীয় পুরস্কারের। ক্রীড়াঙ্গণের সবচেয়ে বড় এ পুরস্কারের জন্য চট্টগ্রামের সাবেক তারকা ফুটবলার আশিষ ভদ্রকে অপেক্ষা করতে হয়েছে বহুবছর। অবশেষে মর্যাদাপূর্ণ এ পুরস্কার পেয়ে এ ফুটবলার হয়েছেন খুশি। ক্রীড়াক্ষেত্রে নৈপুণ্যের জন্য আশিষ ভদ্র সম্প্রতি ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে এ পদক গ্রহণ করেন। সংক্ষিপ্ত অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ফুটবল ছিল আমার ধ্যান-জ্ঞান। এ সম্মান আমার নয়, পুরো চট্টগ্রামবাসীর। চট্টগ্রামকে দেশের বুকে ধন্য করতে পেরে আমি গর্ববোধ করছি। তবে আজ আমার এ অবস্থানের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ক্যারিয়ারের প্রথম কোচ মরহুম ইকবাল খানের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। উল্লেখ্য, ক্রীড়া পরিবারের সন্তান ইকবাল খান চট্টগ্রাম ও ঢাকার মাঠ মাতানো এক চৌকষ ফুটবলার ছিলেন। তার দুই ছেলে নাফিস ইকবাল ও তামিম ইকবাল খেলেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলে। তামিম ইকবাল ওয়ানডে ম্যাচের সহ-অধিনায়কের দায়িত্বে আছেন। এছাড়া ইকবাল খানের ছোট ভাই আকরাম খান বিসিবির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি এ পুরস্কার মরহুম ইকবাল খানের স্মৃতির উদ্দেশে উৎসর্গ করে বলেন, তিনি বেঁচে থাকলে আজ সবেচেয়ে বেশি খুশি হতেন। দেশের ক্রীড়াঙ্গণে অবদান রাখার জন্য ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রবর্তন করেন। ঐ বছর ৮জনকে দেয়া হয়েছিল জাতীয় পুরস্কার। টানা ৬ বছর নিয়মিত দেয়ার পর ১৯৮২ সালে বন্ধ হয়ে যায় জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদান। ১৯৯৬ সালে আবার শুরু হয়ে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রায় ২১৯জন ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক এ পুরস্কার পেয়েছেন। সাবেক তারকা ফুটবলার চট্টগ্রামের আশিষ ভদ্রের খেলা যারা দেখেছেন তাদের চোখে এখনো ভেসে ওঠে সেই ছন্দময় ফুটবল।
১৯৭৬ সালে খেলা শুরু করার পর ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও ঢাকার মাঠে আলো ছড়িয়েছিলেন আশিষ ভদ্র। ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবলে কেকেআরসি’র হয়ে খেলা শুরু করেন এবং ’৭৮ সালে চট্টগ্রাম ফুটবল লীগে খেলা অবস্থায় মাঝপথে ঢাকা রহমতগঞ্জে যোগ দেন। চট্টগ্রামে স্ট্রাইকার পজিশনে খেললেও রহমতগঞ্জে তিনি অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে খেলেন। ঐ বছর আপন নৈপুণ্যে ভাস্বর হয়ে বাংলাদেশ জাতীয় যুবদলে খেলার সুযোগ পান। সেই বছর ব্যাংককে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেই যে শুরু ফুটবলের আশিষ ভদ্রকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলে খেলেছেন টানা ১২ বছর। অথচ এর আগে তার চেয়ে অনেক কম সাফল্য পাওয়া ফুটবলাররা পেয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কার! কিন্তু ক্রীড়াঙ্গণের সবচেয়ে বড় এ পুরস্কার পেতে তাকে অনেক চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করতে হয়েছে। যা ছিল অত্যন্ত দুঃখজনক। অনেকের মতে বিগত দিনে জাতীয় পুরস্কারের জন্য ছিল না কোন নীতিমালা। তাই ঐ দিনগুলোতে জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার ক্ষেত্রে ছিল অথৈবচ অবস্থা।
১৯৭৮ ও ৭৯ সালে ঢাকা রহমতগঞ্জে খেলার পর ১৯৮০ সালে তার প্রিয় দল ঢাকা আবাহনীতে যোগ দেন। ’৮১ সালে ঢাকা আবাহনী লীগ চ্যাম্পিয়ন হন। ’৮২ সালেও আবাহনীতে এবং ’৮৩ সালে আশিষ ভদ্রের অধিনায়কত্বে ঢাকা লীগ শিরোপা জয় করে। এর পরের বছর ঢাকা মোহামেডানে যোগ দিলেও ক্লাবের মায়া ও সমর্থকদের টানে ঘরের ছেলে আবারো ফিরে এসে ’৯০ সাল পর্যন্ত ঢাকা আবাহনীতে খেলেছেন। ঠিক একইভাবে তিনি খেলোয়াড়ী জীবনের পুরো সময়টা কাটিয়ে দেন চট্টগ্রাম আবাহনীতে। তবে মাঝখানে এক বছর কাস্টম এক্সাইজ এন্ড ভ্যাট ক্লাবে যোগ দিলেও পরের বছরই আবার ফিরে আসেন পুরনো দলে। পরে কয়েক বছর চট্টগ্রামে কোচিংয়ের সাথে যুক্ত থাকলেও সেটা সেভাবে নেয়নি। বর্তমানে চট্টগ্রামের সোনালী অতীত ক্লাবের সভাপতির দায়িত্বে আছেন আশিষ ভদ্র। এ ক্লাবের মাধ্যমে মাঠে টেনে এনেছেন চট্টগ্রামের সাবেক জাতীয় এবং বিভিন্ন দলের খেলোয়াড়কে। এছাড়া তিনি চট্টগ্রাম জেলা দল, বিশ্ববিদ্যালয় দল, বিভাগীয় দলসহ জাতীয় লীগে অনেকবার অংশ নেন এবং অধিনায়কত্ব করেন। জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য আশিষ ভদ্রকে ফুটবল ক্যারিয়ারে কখনো সাইডলাইনে বসতে হয়নি। তিনি এমন এক ফুটবলার যিনি প্রায় কয়েক বছর জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন। জাতীয় দলের হয়ে ব্যাংকক, ইন্দোনেশিয়া ও কুয়েতে অনুষ্ঠিত তিনটি এশিয়া কাপ এবং দক্ষিণ কোরিয়া, নিউ দিল্লী ও ব্যাংককে সম্পন্ন তিনটি এশিয়ান গেমসে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন। ক্যারিয়ারের প্রথম কোচ মরহুম ইকবাল খানও ছিলেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের মাঠ কাঁপানো ফুটবলার। তার নিজহাতে গড়া আশিষ ভদ্র পরবর্তীতে ওয়ার্নার বেকেলহফ ও জেরার্ড স্মিথের সংস্পর্শে এসে আরো পরিণত ফুটবলার হয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।