গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কেটে রেস্তোরাঁ ও রাস্তা (ওয়াকওয়ে) নির্মাণের প্রতিবাদ করে চলেছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। কেউ সশরীরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে, কেউবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা করছেন এই সিদ্ধান্তের। পাশাপাশি অবিলম্বে গাছ কাটা বন্ধ করে উদ্যানটির পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আরও ১০ হাজার গাছ লাগানোর দাবি জানিয়েছেন কেউ কেউ।
জানা গেছে, উদ্যানের শতাধিক গাছ কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে সাতটি রেস্টুরেন্টসহ জনসাধারণের চলাচলের জন্য 'ওয়াকওয়ে'। ইতোমধ্যে উদ্যানের ৩৮টি গাছ কাটা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় লাল 'ক্রস' দিয়ে কাটার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে আরও কমপক্ষে ৪০টি গাছ।
এরই মধ্যে গাছ কাটার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়। কেন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এলাকায় এ রকম রেস্টুরেন্ট করতে হবে, আর কেনইবা তার জন্য গাছের ওপর খগড় নেমে আসবে, এমন প্রশ্ন গাছকাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন অনেকে।
এ ছাড়া গত বুধবার (৫ মে) সাধারণ নাগরিকদের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলে একটি প্রতিবাদী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মানববন্ধনে ‘আইনের পাঠশালা' সংগঠনের সভাপতি আইনজীবী সুব্রত কুমার দাস বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের পীঠস্থান। এখানে জাতির পিতা ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছেন। কিন্তু উন্নয়নের নামে এই মহামারির মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৫০ বছর বয়সী শতাধিক গাছ রাতারাতি কেটে ফেলেছে গণপূর্ত বিভাগ। এখানে খাবারের দোকান বানানোর নামে প্রকৃতি হত্যার একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে কর্পোরেট সংস্কৃতির বিকাশ ঘটছে। যার মূলে রয়েছে লুটপাটের অশুভ উদ্দেশ্য। অবিলম্বে এই প্রকৃতি হত্যার প্রকল্প বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
মানববন্ধন থেকে গাছ কাটা বন্ধের পাশাপাশি আগামী বর্ষায় কমপক্ষে ১০ হাজার গাছ লাগানোর দাবি জানানো হয়।
মোকাররম হোসেন নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী উদ্যানের গাছকাটার প্রতিবাদ করে লিখেছেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নিয়ে অরাজকতা বন্ধ হোক। কারা উদ্যানের ভেতর হোটেল বানানোর অনুমতি দিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
গো গ্রীন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ফজলুর রহমান রাজু বলেন, ‘শহরে শ্বাস নেওয়ার সর্বশেষ জায়গাগুলোর মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান একটি। সেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করে খাবারের দোকান ও হাঁটার রাস্তা নির্মাণ কোনো যুক্তির মধ্যেই পড়ে না। আমরা চাই গাছগুলো বাঁচিয়ে রেখেই উন্নয়নকাজ চলুক।’
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সদস্যরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শন করে গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা রেস্টুরেন্ট স্থাপনের নামে নির্বিচারে গাছ নিধন নিধনের প্রতিবাদ করছি। সৌন্দর্যের নামে যারা এ ঘৃণ্য কাজে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পবার সদস্য আবু নাসের বলেন, ‘কাটা গাছগুলো দেখলে বুঝতে পারবেন কী অন্যায় ঘটে গেছে। আমরা অনলাইনে প্রতিবাদ আলোচনা সবই করছি কিন্তু কাজ অব্যাহত আছে।’
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী গাছ কাটা প্রসঙ্গে বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটা কোনোমতেই সমর্থন করা যায় না। কেননা, ঢাকা শহর এমনিতেই গাছশূন্য হয়ে গেছে। অনেক কষ্টে আমরা ওসমানী উদ্যানের গাছগুলো রক্ষা করেছিলাম। সেখানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটা হবে- এটা ভাবা যায় না।'
তিনি বলেন, ‘মানুষ বিশ্রাম নিতে, একটু স্বস্তির জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যায়, বিভিন্ন পার্কে যায়। দিনে দিনে সেই উদ্যানগুলো, পার্কগুলো নষ্ট করা হচ্ছে। ওসমানী উদ্যান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কোনোটিই এখন আর আগের মতো নেই। নানাভাবে এগুলোর ক্ষতি করা হয়েছে। নগরবাসীর বিচরণের উন্মুক্ত জায়গাগুলো নষ্টের এই অপতৎপরতা বন্ধ করা দরকার।'
কথাসাহিত্যিক ও নিসর্গপ্রেমী বিপ্রদাশ বড়ুয়া বলেন, 'কোনোভাবেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটা যাবে না। উদ্যানের খোলা মাঠ, বৃক্ষরাজি, জলাধার যেটা যেমন আছে, তেমন রেখেই যা কিছু করার করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গাছ না কেটেই ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। প্রকল্প-সংশ্নিষ্টরা চাইলে গাছগুলোরেখেই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থাপনাগুলো নির্মাণ করতে পারেন।'
তবে গাছ কাটার পক্ষে যুক্তি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি হবে আন্তর্জাতিক মানের। বিদেশিরাও এখানে ঘুরতে আসবেন। এ জন্য কিছু স্থাপনা নির্মাণের প্রয়োজনে গাছ কাটা হচ্ছে।’
মন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকেও গাছ কাটার বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কিছু গাছ কাটা হচ্ছে। তবে এরই মধ্যে উদ্যানে এক হাজার গাছ লাগানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।