রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
নজরুল ইসলাম, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) থেকে : ভাঙা-গড়ার মাঝেও গোয়ালন্দ ঘাটে ছিল রমরমা অবস্থা। পদ্মার প্রচÐ ¯্রােত আর মেঘের গর্জনের মতো শব্দ করা ঢেউয়ের পর ঢেউ এসে কুল ঘেঁষে ধাক্কা দিয়ে যেত। কেয়া, ইরানী, মেলমিস্টেম, গাজী, মাসুদসহ ওয়েজস্ট্রিজের মতো বড় বড় স্টিমারগুলো নদীতে দুলতে থাকতো। এই পদ্মায় জেলেদের জালে প্রতিদিন ধরা পড়ত হাজার হাজার মণ ইলিশ। দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে চালান দেয়া হতো গোয়ালন্দের স্বনামধন্য সুস্বাদু ইলিশ। পদ্মার গর্জন, বরফ ভাঙার শব্দ আর লাল পোশাক পরিহিত কুলিদের হৈ চৈ এ সারাক্ষণ গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশন কর্মব্যস্ততায় মুখরিত থাকত। সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে গোয়ালন্দের সেই রূপ। গোয়ালন্দ নামকরণের সঠিক কোনো ইতিহাস খুঁজে না পাওয়া গেলেও এব্যাপারে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মত। কারো কারো মতে, এ এলাকায় অনেক গোয়ালার (ঘোষ স¤প্রদায়) বাস ছিল। সে সময়ে ‘নন্দন’ নামের এক গোয়ালা পুত্রের কর্মকাÐে ব্যাপক আলোচিত ছিলেন। যার কারণে তার নাম অনুসারেই গোয়াল নন্দ থেকেই গোয়ালন্দ নামের উৎপত্তি। ভাঙাগড়া দিয়ে শুরু আজকের এই গোয়ালন্দ। ভারতের গঙ্গা নদীর বাংলাদেশের প্রবাহমান পথকে বলা হয় পদ্মা। যার দৈর্ঘ প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। এ নদীটি গোয়ালন্দ এসে যমুনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে ফরিদপুর-হাজিগঞ্জ হয়ে চাঁদপুর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। সর্বগ্রাসী পদ্মার ছোবলে গোয়ালন্দ ঘাটকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তর করা হয়েছে। তাই অনেকের কাছে গোয়ালন্দের ঘাটকে ৬ নম্বর ঘাট হিসেবে পরিচিত। প্রথমদিকে যখন গোয়ালন্দ ঘাট নামকরণ করা হয় তখন এই গোয়ালন্দের ঘাট ছিল পোড়া বাজার, এরপর কুশাহাটা, জামালপুর, চর জংশন, উরাকান্দায়, সবশেষে রেলস্টেশন ঘেঁষে গড়ে ওঠে গোয়ালন্দ নৌবন্দর। মানুষের পদচারণায় সবসময় মুখরিত থাকত এই নৌ-বন্দর। সব সময় ২ থেকে ৩ হাজার মানুষ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত থাকত এই বন্দরে জানিয়েছেন সেই সময় নৌ-বন্দরে কর্মরত শ্রমিকরা। তৎকালীন জনপ্রিয় দুটি যোগাযোগের মাধ্যম গোয়ালন্দে হওয়ায় উপমহাদেশে এ রেলস্টেশন ও নৌবন্দর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। পূর্ব ভারত থেকে বাংলাদেশে গোয়ালন্দ হয়ে আসতে হতো। এমনকি পাঞ্জাব বা দিল্লি থেকে ট্রেন হাওড়া-কলিকাতা হয়ে চুয়াডাঙ্গা-পোড়াদাহ অতিক্রম করে কুষ্টিয়া হয়ে গোয়ালন্দ ঘাটে আসত। আবার গোয়ালন্দ ঘাট থেকে স্টিমারে চাঁদপুর হয়ে নারায়ণগঞ্জসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া যেত। হকার, কুলি, রেল শ্রমিক, ছোট-মাঝারি দোকানি এবং লাখো মানুষের পদচারণায় গোয়ালন্দ ঘাট সারাক্ষণ মুখরিত থাকত। উপ-মহাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাট আজ আপন ঐতিহ্যের সবটুকু হারিয়ে ফেলেছে। ১৮৭১ সালে জগতি ঘাট থেকে গোয়ালন্দঘাট পর্যন্ত রেলপথ স্থাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ অঞ্চলের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। ১৯৮০ সালে মহকুমাগুলোকে জেলায় পরিণত করার ঘোষণায় তৎকালীন গোয়ালন্দ মহকুমাকে নদী ভাঙনের দোহাই তুলে বঞ্চিত করে রাজবাড়ীকে জেলায় পরিণত করা হয়। গোয়ালন্দ প্রপার হাইস্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও এনজিও কেকেএসের নির্বাহী পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির আব্দুল জব্বার জানান, আজ গোয়ালন্দের পদ্মার তীরে জেলেদের ভিড় নেই, রূপালী ইলিশের ঝিলিকও নেই। পদ্মার বুকে শত শত পাল তোলা নৌকা নেই, কুলিদের হাঁক-ডাক চোখে পড়ে না। পদ্মার বুকে চর পড়ে গড়ে উঠেছে গ্রামের পর গ্রাম। পদ্মার ভাঙনের ফলে গোয়ালন্দঘাট স্থানান্তর করা হয় দৌলতদিয়ায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।