Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসায়ীরা দেশের গণমাধ্যম জবরদখল করেছে : টিআইবি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

দেশের বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমের মালিকানা ব্যবসায়িদের হাতে। এই ব্যবসায়ি মহলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে ‘মিডিয়া ক্যাপচার’ বা ‘গণমাধ্যম জবরদখল’ এখন বলতে গেলে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পেয়েছে। ফলে পেশাদার সাংবাদিকরাও অনেকক্ষেত্রে তাদের সুরক্ষায় সংবাদ প্রচার কিংবা গোপন করতে বাধ্য হচ্ছে এবং পেশাগত দায়বদ্ধতা নিশ্চিতে ব্যর্থ হচ্ছে। যা মুক্ত গণমাধ্যমের বিকাশই শুধু বাধাগ্রস্ত করছে না, গণমাধ্যমের বিশ্বাস যোগ্যতার সঙ্কট ও প্রকট করে তুলেছে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি)। আজ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২১ উপলক্ষে গতকাল রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদানের পাশাপাশি প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু প্রকাশ্য ও প্রচ্ছন্ন নানামুখী চাপ ও বিধিনিষেধের বেড়াজালে সাংবিধানিক এই অধিকার মলাটবদ্ধ নথিতে রূপান্তরিত হয়েছে। আর মুক্ত গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের পেশাগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে না পারার ব্যর্থতা সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে যেমন দুর্বল করেছে, তেমনি জনগণের অবাধ ও নিরপেক্ষ তথ্য লাভের অধিকার খর্ব করছে।

আর অন্যদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের শৃঙ্খলমুক্ত সাংবাদিকতা, গণমাধ্যমের পেশাদারিত্ব ও স্বাধীন তথ্য প্রবাহের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, কর্পোরেট পুঁজির সুরক্ষায় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় তার অনুমোদনের ফাঁদে, দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক কাঠামো নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান সাংবাদিকদের পেশাগত ও জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা ঝুঁকির নতুন সব উদহারণ তৈরি করেছে।

কোভিড-১৯ অতিমারিকালে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের পেশাগত ও অর্থনৈতিক এ ঝুঁকি আরও প্রকট হয়েছে। বহু গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অসংখ্য সাংবাদিক চাকরিচ্যুত কিংবা পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছেন। তাই মুক্ত গণমাধ্যম এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহের সাংবিধানিক বাধ্যবাধতা ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে অবিলম্বে স্বাধীন ও পেশাদার গণমাধ্যমের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

ইফতেফারুজ্জামান আরও বলেন, বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের ১৫২তম অবস্থান এবং বিশ্ব মতপ্রকাশ প্রতিবেদনে ১৬১টি দেশের মধ্যে ১৩২তম অবস্থান দেশের গণমাধ্যমের নাজুক পরিস্থিতি প্রমাণ করে। তিনি বলেন, তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতে এবছর বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে জাতিসংঘ ঘোষিত প্রতিপাদ্য ‘তথ্য জনগণের পণ্য’ হলেও বাংলাদেশে তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে সরকারের একাংশের মানসিকতা হলো ‘তথ্য সরকারি সম্পত্তি’-এর নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতেই থাকবে এবং সরকার যেভাবে যতটুকু তথ্য প্রকাশ করতে চাইবে ততটুকুই প্রকাশিত হবে, যা জনগণের জানার অধিকার খর্ব করার পাশাপাশি মুক্ত গণমাধ্যমের বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে। বিশেষ করে কোভিড ১৯ অতিমারিকালে সাংবাদিকদের তথ্যের অভিগম্যতা এবং মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহে প্রতিক‚লতা, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও স্পর্শকাতর প্রতিবেদন প্রকাশের সুযোগ সংকুচিত করেছে। আবার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের গ্যাঁড়াকলে সংবাদ কিংবা তথ্য প্রকাশের দায়ে গণমাধ্যম, সাংবাদিক, লেখক, কার্টুনিস্টদের বিরুদ্ধে মামলা, নির্যাতন-নিপীড়ন এবং কারান্তরীণ অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতা ও অবাধ তথ্য প্রবাহের সাংবিধানিক ও আইনি প্রতিশ্রুতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের নামান্তর। অথচ কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ভ্যাকসিনের মতোই জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করে, গুজব ও ভুয়া তথ্যের নিয়ন্ত্রণে মুক্ত সাংবাদিকতাই হতে পারত কার্যকর ভ্যাকসিন।

ড. জামান আরো বলেন, উন্মুক্ত ও অংশীদারিত্বমূলক নীতিকাঠামো গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা তথ্যে অভিগম্যতা, তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের মাধ্যমে এসডিজি অর্জনে কার্যকরভাবে সহায়ক। তাই ব্যবসা ও রাজনীতির অশুভ আঁতাতের জাল ছিন্ন করে মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টিআইবি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ