পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দলিলের নকল তোলার জন্য সেবাগ্রহীতাদের ১ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা দিতে হয়। দলিল নিবন্ধনের জন্য প্রতিটি দলিলে দলিল লেখক সমিতিকে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা বা ঘুষ দিতে হয়। দলিল ও দুর্নীতি সমার্থক শব্দ হয়ে গেছে। এই সেবায় ক্রমাগত দুর্নীতি বেড়েই চলেছে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, দেশব্যাপী কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া দেশের সব সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ঘুষ লেনদেন স্বাভাবিক চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ভূমি দলিল নিবন্ধন সেবায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়। জমির দাম, দলিল ও দলিলের নকলের ধরন ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র থাকা না থাকার ওপর এবং এলাকাভেদে নিয়মবহির্ভূত অর্থ লেনদেনের পরিমাণ কমবেশি হয়। সেবা গ্রহীতা ও সরকার উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতে পনের দফা সুপারিশ করেছে টিআইবি। ভূমি দলিল নিবন্ধন নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) একটি গুণগত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
টিআইবি’র প্রতিবেদন বলা হয়, ভূমি নিবন্ধন সেবার প্রতিটি পর্যায়ে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। দলিল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ১ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে লেনদেন হয়।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ভূমি দলিল নিবন্ধন সেবায় সুশাসনের ঘাটতি ব্যাপক, এ খাত দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। বিভিন্নভাবে সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে অর্থ আদায় ও ঘুষ নেয়া হচ্ছে। দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হচ্ছে। এখানে কিছু ব্যতিক্রম বাদে হয়রানি, জিম্মি করে অর্থ আদায়, দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। ভ‚মি নিবন্ধন আর দুর্নীতি সমার্থক হয়ে গেছে। এখানে নিয়োগ পদোন্নতিতেও দুর্নীতি ব্যাপকতা পেয়েছে।
তিনি বলেন, এই দুর্নীতি বন্ধ করতে সদিচ্ছা জরুরি। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ভূমির ডিজিটাইজেশন করতে হবে। তিনি বলেন, দিনে দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। এমন কোনো খানা নেই, যাদের ভূমির সেবা নিতে হয় না। এমন দৃষ্টান্ত খুব কম পাওয়া যাবে যে, কোনো খানা ভূমির দুর্নীতি অনিয়মের শিকার হয়নি।
টিআইবি জানায়, তাদের এই গবেষণা মূলত গুণগত গবেষণা। দেশের আটটি বিভাগের ১৬টি জেলার ৪১টি সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে এবং জাতীয় পর্যায়ে নিবন্ধন অধিদপ্তর ও অংশীজনদের কাছ থেকে গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সেবার খাতটা দুর্নীতিতে ভরা। ভূমির দলিল নিবন্ধন সেবা জনগুরুত্বপূর্ণ এবং সরকারের রাজস্ব আহরণের অন্যতম প্রধান উৎস হলেও এই সেবার যুগোপযোগী মানোন্নয়নে আইনি পদ্ধতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে যথাযথ পরিকল্পনা ও উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে।
তিনি বলেন, আইনি জটিলতার কারণেও কিছু অস্পষ্টতা ও বিরোধিতা হয়ে আসছে। হালনাগাদ খতিয়ান সাব-রেজিস্ট্রার অফিসগুলোতে নিয়মিত সরবরাহ হচ্ছে না। এছাড়াও আছে কম জনবল, লজিস্টিকস ও আর্থিক বরাদ্দ এবং দুর্বল অবকাঠামো ও ডিজিটালাইজেশনের ঘাটতি।
তিনি বলেন, নিয়মবহির্ভূতভাবে সেবা গ্রহীতারদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এই আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে বিভিন্ন অংশে বিভিন্নজনের পারস্পরিক যোগসাজশ থাকায় অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা কাঠামো যৌথভাবে কাজ করছে না। ফলে এর প্রতিটি পর্যায়ে অনিয়ম দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ধারণ করেছে।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সর্বশেষ ২০১৭ সালের খনা জরিপের ফলাফল অনুযায়ী ৪২.৫ শতাংশ খনা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে সেবা গ্রহণের সময় দুর্নীতির শিকার হয়েছে এবং এদের মধ্যে ২৮.৩ শতাংশ খনাকে গড়ে ১১ হাজার ৮৫২ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নিবন্ধন অধিদপ্তর এর অধীনে ৩৬ লাখ ৭২ হাজার ৬২৮টি দলিল নিবন্ধন হয়েছে। এর থেকে মোট ১২ হাজার ৪৩২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।
২০১৮ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের আগস্ট সময়ের মধ্যে এ গবেষণার তথ্য সংগ্রহ বিশ্লেষণ এবং প্রতিবেদন প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করা হয়। বিগত বছরগুলোতে ভূমি নিবন্ধন সেবা সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন ও বিধিমালা সংশোধন ও হালনাগাদ করা এবং নিবন্ধন ফি ও যাবতীয় শুল্ক পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধের মত বিভিন্ন ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও আইনি, পদ্ধতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক নানা সীমাবদ্ধতা এবং জবাবদিহিতা ও সমন্বয়ের ঘাটতির কারণে এখাতে এখনো সুশাসনের ঘাটতি বিদ্যমান বলে দাবি করেছে টিআইবি। ভূমি নিবন্ধন সেবার যুগোপযোগী মান উন্নয়নে ১৫ দফা সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার আবু সাঈদ মো. জুয়েল মিয়ার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রণয়ন ও উপস্থাপন করেন গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাম্মী লায়লা ইসলাম এবং ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নিহার রঞ্জন রায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দলিল নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় প্রতারণা ও জালিয়াতি, দায়িত্ব পালনে অবহেলা, স্থানীয় রাজনৈতিক ও নানাবিধ প্রভাব বিস্তার, সময়ক্ষেপণ ইত্যাদি নানা কৌশলে ফাঁদে ফেলে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাব-রেজিস্ট্রার অফিসগুলোতে টাকা ছাড়া কোনো কাজ করানো অত্যন্ত দুরূহ। দলিল লেখার ‘ফি’ সম্পর্কে সেবাগ্রহীতাদের ধারণা না থাকায় নিবন্ধনের ধরনভেদে দলিলের মূল্যের ওপর ভিত্তি করে লেখকদের প্রতি লাখে ১-৩% পর্যন্ত অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হয়। এছাড়া নির্ধারিত নিবন্ধন ফি’র বাইরে প্রতিটি দলিল নিবন্ধনের জন্য দলিল লেখক সমিতির নামেও সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ আদায় করা হয়। সাব-রেজিস্ট্রারসহ অন্যান্য কর্মচারীদের পদোন্নতি ও বদলির জন্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে তদবির ও নিয়মবহির্ভূত অর্থের লেনদেন ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ আছে। সাব-রেজিস্ট্রারদের বদলির ক্ষেত্রে এলাকাভেদে নিয়মবহির্ভূতভাবে ৩ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত এবং ঢাকা বা তার আশপাশের এলাকায় বদলির জন্য ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ম-বহির্ভূত অর্থের লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। আবার সাব-রেজিস্ট্রার থেকে জেলা রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রেও নিয়মবহির্ভূত অর্থের লেনদেন, প্রভাব বিস্তার বা তদবিরের অভিযোগ রয়েছে। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা চাই এ খাতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হোক, জনগণ দুর্নীতি থেকে মুক্ত হোক। তা করা গেলে এ খাত থেকে রাজস্ব আদায়ও অনেক বৃদ্ধি পাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।