হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
মোবায়েদুর রহমান : আমেরিকায় কি হিলারি তরঙ্গ (ঐরষষধৎু ধিাব) সৃষ্টি হয়েছে? ব্যাপারটি ঠিক বুঝতে পারছি না। আগামী ৮ নভেম্বর অর্থাৎ আজ থেকে ১ মাস ১৮ দিন পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমেরিকার ইস্ট কোস্ট অর্থাৎ পূর্ব প্রান্তে (নিউইয়র্ক) আমার যেমন দু’চার জন পরিচিত বন্ধুবান্ধব আছে তেমনি ওয়েস্ট কোস্ট অর্থাৎ পশ্চিম প্রান্তেও (ক্যালিফোর্নিয়া) দু’চার জন বন্ধুবান্ধব আছে। আবার একেবারে উত্তরে অর্থাৎ মিনেসোটাতে যেমন দুয়েক জন বন্ধু আছে তেমনি দক্ষিণ পশ্চিমে অ্যারিজোনা এবং দক্ষিণ পূর্বে অর্থাৎ অ্যালাবামাতেও আমার দু’চার জন আত্মীয় আছে। ওয়াশিংটন সংলগ্ন ভার্জিনিয়াতে আমার শ্যালক রয়েছে। এত বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের ফিরিস্তি দিচ্ছি এই কারণেই যে আমি ব্যক্তিগতভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গভীরভাবে আগ্রহী। তাই নির্বাচনী ফলাফলের মোটামুটি একটি বিশ্বাসযোগ্য পূর্বাভাস জানতে আগ্রহী। ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় আমি নিউইয়র্ক ছিলাম। সেখানে অনেকগুলো ভোট কেন্দ্র অর্থাৎ জ্যামেইকা, ব্রঙ্কস, ব্রæকলিন প্রভৃতি নির্বাচন কেন্দ্রে ইলেকশনের দিন ছোটাছুটি করেছি। উদ্দেশ্য ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে চাক্ষুস দেখা, ওদের নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে একটি ধারণা নেওয়া এবং ওদের নির্বাচনী শৃঙ্খলা সম্পর্কে একটি আইডিয়া নেওয়া। সেবার কৃষ্ণাঙ্গ প্রার্থী বারাক ওবামা মার্কিন ইতিহাসে সর্ব প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওদের নির্বাচনী পূর্বাভাসের ওপর আমার আস্থা ছিল। কারণ সেবারও দেখলাম, ফক্স টেলিভিশনের মত সবচেয়ে জনপ্রিয় টেলিভিশনও তাদের নির্বাচনী জরিপে বারাক ওবামাকে এগিয়ে রেখেছিল। (এ দেশে সিএনএন খুব জনপ্রিয় হলেও আমেরিকায় ফক্স টিভি খুব জনপ্রিয়)। ২০০৪ সালে জন কেরি ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিসেবে জর্জ বুশের সাথে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছিলেন এবং বুশের কাছে তিনি পরাস্ত হন। তিনি আজ ওবামার অধীনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেদিন অনেকের কাছেই এটি অকল্পনীয় ছিল যে ৭৬ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবেন একজন কৃষ্ণকায় ব্যক্তি! সেদিন অধিকাংশ নির্বাচনী জরিপ সঠিক প্রমাণিত হয়েছিল। শুধু তাই নয়, ঐ শ্বেতাঙ্গ মার্কিনীরা ২০১২ সালে ঐ কৃষ্ণাঙ্গ ওবামাকে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত করেছিল। প্রথম মেয়াদে দলের অভ্যন্তরে ওবামার প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন হিলারি ক্লিনটন। দলীয় মনোনয়নে তিনি ওবামার কাছে হেরে গিয়েছিলেন। ওবামা ২টি মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। মার্কিন শাসনতন্ত্র অনুযায়ী তার আর তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার কোনো সুযোগ নাই। তাই এবার নমিনেশন পেয়েছেন হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন।
মার্কিন নির্বাচনী জরিপ এবং নির্বাচনী পূর্বাভাসের ওপর আমার আস্থা রয়েছে, সে কথা আমি আগেই বলেছি। তাই এবার পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে যেসব পূর্বাভাস পাচ্ছি সেগুলো কোন যুক্তিতে অস্বীকার করবো? অথচ আমার মন ঐসব পূর্বাভাস পুরোপুরি মেনে নিতে চায় না। ঐ সব পূর্বাভাসে আমি দেখছি যে হিলারি ক্লিনটন বিপুল ভোটে জয়লাভ করছেন। এটি হলো জরিপ বা পূর্বাভাস। কিন্তু হাজার হাজার মাইল দূরে এই বাংলাদেশে বসে আমার ভেতরে প্রশ্ন উঠেছে, ২৮৬ বছরের ইতিহাসে আমেরিকায় এই প্রথম কোনো নারীকে দুটি বড় পার্টির একটি পার্টি প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দিল। হিলারি জিতুন বা নাই জিতুন, তার মনোনয়ন লাভই একটি রেকর্ড ভঙ্গকারী ঐতিহাসিক ঘটনা। মার্কিন জনগণ সাধারণত কোন দলকে বা ব্যক্তিকে দুইটি মেয়াদের বেশি ভোট দেয় না। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট ১৩ বছর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। হিলারি ক্লিনটনও কি তবে সেই পথেই যাচ্ছেন? অবশ্য যদি হিলারি জয়লাভ করেন তাহলে ব্যক্তি নয়, দল হিসেবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি পরপর তিনবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করবে। অথচ হিলারির বিশেষ কোনো ক্যারিশমা নেই, যেটি জনগণকে আকৃষ্ট করতে পারে। বারাক ওবামাও তার ৮ বছরের রাজত্বকালে এমন কিছু করে দেখাতে পারেননি যেটি ভোটারদের একই দলে তৃতীয়বার ভোট দেয়ায় উদ্বুদ্ধ করতে পারে। তারপরেও হিলারির পক্ষে জনমত প্রতিফলিত হচ্ছে। আমেরিকায় বসবাসকারী আমার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন অন্তত সেই কথাই বলছেন।
\ দুই \
নিউইয়র্ক থেকে গত রাতে যে ই-মেইলটি পেয়েছি তাতে দেখা যাচ্ছে যে, নির্বাচকমÐলীর মধ্যে হিলারি পেতে পারেন ২৭৩ ভোট, ডোনাল্ড ট্রাম্প পেতে পারেন ১৬৪ ভোট। এর বাইরে রয়েছে ব্যাট্ল গ্রাউন্ড স্টেট বা সুইং স্টেট। এগুলোতে রয়েছে ১০১টি ভোট। এই মোট ৫৩৮টি ভোট। এর মধ্যে হিলারি ক্লিনটনের সম্ভাব্য ভোট নি¤œরূপ-
(১) ওয়াশিংটন ডিসি- ১২ ভোট (২) ওরিগন- ৭ (৩) ক্যালিফোর্নিয়া- ৫৬ (৪) কলোরাডো- ৯ (৫) নিউ মেক্সিকো- ৫ (৬) মিনেসোটা- ১০ (৭) উইসকনসিন- ১০ (৮) ইলিনয়- ২০ (৯) মিসিগান- ১৬ (১০) পেনসিলভানিয়া- ২০ (১১) নিউইয়র্ক- ২৯ (১২) ভার্জিনিয়া- ১৩ (১৩) ভার্মন্ট-৩ (১৪) মেইন- ৪ (১৫) নিউ হ্যাম্পশায়ার- ৪ (১৬) হাওয়াই- ৪টি ভোট।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য ভোট নি¤œরূপ- (১) আইডাহো- ৪ (২) ইউটা- ৬ (৩) মনটানা- ৩ (৪) উইমিন- ৪ (৫) নর্থ ডাকোটা- ৩ (৬) সাউথা ডাকোটা- ৩ (৭) নেব্রাস্কা- ৫ (৮) কানসাস- ৬ (৯) ওকলাহোমা- ৭ (১০) টেক্সাস- ৩৮ (১১) মিসৌরি- ১০ (১২) আরকানসাস- ৬ (১৩) লুজিয়ানা- ৮ (১৪) ইনডিয়ানা- ১১ (১৫) কেনটাকি- ৮ (১৬) টেনিসে- ১১ (১৭) অ্যালাবামা- ৯ (১৮) ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া- ৫ (১৯) সাউথ ক্যারোলিনা- ৯ (২০) আলাস্কা- ৩টি ভোট।
ব্যাট্ল গ্রাউন্ড স্টেট বা সুইং স্টেটের ভোট নি¤œরূপ-
(১) নেভাডা- ৬ (২) এরিজোনা- ১১ (৩) আইওয়া- ৬ (৪) ওহায়ো- ১৮ (৫) নর্থ ক্যারোলিনা- ১৫ (৬) জর্জিয়া- ১৬ (৭) ফ্লোরিডা ২৯টি ভোট।
আমার কাছে যেসব খবর এসেছে তার মধ্যে ম্যাসাসুচেটস, কানেক্টিকাট, নিউজার্সি, ডেলওয়ার, মেরিল্যান্ড, ফিলাডেলফিয়া, মিসিসিপি, ইলিনয়, রোড আইল্যান্ড প্রভৃতি অঙ্গরাজ্যের খবর আসেনি।
\ তিন \
উপরে ৫০টি অঙ্গরাজ্যের নাম দেয়া হয়েছে। কিন্তু ৫০টির জরিপের ফলাফল দেয়া হয়নি। অর্থাৎ দেয়া সম্ভব হয়নি। আসলে প্রতিদিনই আমেরিকার নির্বাচনী পরিস্থিতি দ্রæত বদলাচ্ছে। ৩ সপ্তাহ আগে দেখলাম হিলারি ক্লিনটন ১৪ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। এক সপ্তাহ পরে দেখলাম, তার এগিয়ে থাকার পয়েন্ট কমে হয়েছে ১১ পয়েন্ট। তার ৫ দিন পরে সেটি কমে হয়েছে ৮। সর্বশেষ গত ৮ তারিখের পত্র-পত্রিকায় দেখলাম সেটি হয়েছে ৪। সুতরাং একটি বিষয় পরিষ্কার হচ্ছে যে যতই দিন যাচ্ছে ততই হিলারির পয়েন্ট কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে ট্রাম্পের পয়েন্ট বেড়ে যাচ্ছে। আমাকে একজন বললেন যে সর্বশেষ পরিস্থিতি মোতাবেক দুই জনের পয়েন্টই নাকি সমান সমান। এই প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে দিন যতই যাবে ততই ট্রাম্প এগিয়ে যাবেন।
অ্যালাবামায় আমার যে আত্মীয় থাকে তার সাথে আমার টেলিফোনে কথা হয়েছে। তার নিকট থেকে জানতে চেয়েছিলাম যে, এবারের নির্বাচনী জরিপ এবং পয়েন্ট এত দ্রæত পরিবর্তনশীল কেন? এর ফলে তোমরা যারা আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করো তারা হয়তো কারণগুলো ধরতে পারো। কিন্তু আমরা যারা আমেরিকা থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে এই বাংলাদেশে বাস করি তারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি। প্রকৃত পরিস্থিতি কি জানা সম্ভব?
\ চার \
আমার এই আত্মীয়টি প্রকৌশলী। তবে বয়সে তরুণ। হিলারির প্রতি সে বায়াসড্। তাই কোন অতিরঞ্জন করছে কিনা জানি না। সে ট্রাম্পবিরোধী। কারণ তার মতে ট্রাম্প মুসলিম এবং ইসলামবিরোধী। তার আরো ভয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ওদের মত বিদেশী নাগরিকদের তাড়িয়ে দেবে। আমি বলেছি, এই ভয়টি অমূলক। হয়তো ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে আমেরিকায় নতুন ইমিগ্র্যান্ট আসা বন্ধ করে দেবেন। কিন্তু যারা নাগরিক হয়েছেন এবং যারা গ্রীন কার্ড নিয়ে থাকছেন তাদেরকে হটিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। কারণ তারা আমেরিকার মোট জনগোষ্ঠীর অন্তত ২৪ শতাংশ। অর্থাৎ ৭ থেকে ৮ কোটি। এই কোটি কোটি মানুষকে তাড়িয়ে দেয়া একটি অবাস্তব কল্পনা। ট্রাম্প হয়তো উন্মাদ অথবা ভোট পাওয়ার জন্য শ্বেতাঙ্গ সেন্টিমেন্টকে ইমিগ্র্যান্টদের বিরুদ্ধে উস্কে দিচ্ছেন। কিন্তু যদি তিনি সত্যি সত্যি ক্ষমতায় যান তখন তিনি দেখবেন যে এগুলো বলা যত সহজ, করা তত সহজ নয়। ইতোমধ্যেই তিনি কিছুটা গোঁফ নামিয়েছেন। আমেরিকা ও মেক্সিকোর মধ্যে বিরাজমান বিরাট অভিন্ন সীমান্ত তিনি চাইলেও বন্ধ করতে পারবেন না, সেটি কাঁটা তার দিয়ে হোক অথবা অন্য যে কোনভাবে হোক। আমি এ কথাই বলতে চাচ্ছি যে এগুলো পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছু নয়। হয়তো মুসলিমবিরোধী সেন্টিমেন্টকে উস্কে দেয়া যায়। কিন্তু যারা হিস্প্যানিক তাদের উৎখাত করা অত সোজা নয়। তারা মার্কিন সমাজ এবং প্রশাসনের অনেক গভীরে ঢুকে গেছেন। আধুনিক আমেরিকার বিনির্মাণে তাদেরও ভ‚মিকা রয়েছে।
একটি কথা বলে শেষ করতে চাচ্ছি। সেটি হলো পশ্চিমা রাজনৈতিক সংজ্ঞা অনুযায়ী রাজনীতিতে যেমন শেষ কথা বলে কিছু নেই, তেমনি নির্বাচনেও শেষ কথা বলে কিছু নাই। সাধারণ অবস্থায় রিপাবলিকান প্রার্থীর হারার কথা নয়। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা আলাদা। তিনি যদি হেরে যান তাহলে তার পাগলামির জন্য হারবেন।
email : [email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।