বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মোঃ আবু শহীদ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) : দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পে যন্ত্রপাতির অভাবে গত ১০ মাস ধরে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। ফলে দেশের একমাত্র এ পাথর খনি থেকে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। তবে আশার কথা হচ্ছে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর আলো ফিরে পেতে যাচ্ছে, মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পের এই পাথর খনিটি। দ্রুতগতিতে চলছে নতুন করে আমদানি করা উৎপাদন যন্ত্র প্রতিস্থাপনের কাজ। কাজ শেষ হলেই আবারো পুরোদমে শুরু হবে পাথর উত্তোলন এবং ফিরে আসবে প্রাণচাঞ্চল্য।
মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৭ সালের ২৫ মে, সেই সময়ের উত্তর কোরিয়ার ‘নাম নাম’ কোম্পানি এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী ২০১০ সালের অক্টোবরে খনির কাজ শেষ করে তারা চলে যায়। এরপর মধ্যপাড়া খনিটিতে তাদের রেখে যাওয়া পুরাতন যন্ত্রপাতি দিয়েই পাথর উত্তোলনের কাজ চলছিল। কোম্পানিটি চলে যাওয়ার পর ২০১৩ সালে মধ্যপাড়া পাথর খনির উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে ‘নাম নাম’ কোম্পানির রেখে যাওয়া পুরাতন যন্ত্রপাতি দিয়েই পাথর উৎপাদন শুরু করে। কিন্তু পুরাতন যন্ত্রপাতিগুলো অকেজো হয়ে পড়ায় নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয়ের সিদ্ধান্তে ২০১৫ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর সম্পূর্ণভাবে পাথর খনির উৎপাদন বন্ধ করায়, একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়, ঠিক একইভাবে খনির প্রায় ৯০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থানও বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে দীর্ঘদিন উৎপাদন যন্ত্রের অভাবে উত্তোলন বন্ধ রেখে খনিটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম জিটিসি বিভিন্ন দেশ থেকে বিশ্বমানের উৎপাদন যন্ত্র আমদানি করে এখন প্রতিস্থাপনের কাজ করছে বলে জানা যায়। কানাডা, বেলারুশ, জার্মানি, রাশিয়া, পোলান্ড, ইউক্রেন, চায়নাসহ প্রায় ২০/২২টি দেশ থেকে আমদানিকৃত রোজবরিং মেশিন, জাম্বু ড্রিলিং মেশিন, মাসকিং লোডার, শার্টল কার, মাইনিং ভেন্টিলেশন ফ্যান, ভেন্টিলেশন ডাক্ট, স্টপার রক ড্রিল ও প্রেশার মেশিন, ভাইব্রেটিং স্কিন ও ফিডারস, স্টিল রেইল ও ফিস প্লেট, রেল ফাস্টেনার সেট, স্পেয়ার পার্টস ফর পিনিউমেটিক রক ড্রিল, হাইড্রলিক চিজেল বেকার, পার্টস ফর ড্রিল মেশিন সিম্বা জুনিয়র, স্টিল টয়েল সেফটি ফর মাইনিং, টেপার রড এন্ড বাটন বিট, স্পেয়ার পার্টস ফর পুশার লেগ, এয়ার, ওয়াটার, হুস, কপার ট্রলি ওয়ার, পাম্প ও মোটরসহ প্রয়োজনীয় ২২৯ প্রকার যন্ত্র আমদানি করা হয়েছে। আমদানিকৃত যন্ত্রের ৮৫ ভাগ খনিতে এসে পৌঁছেছে সেগুলোর মধ্যে ইতিমধ্যেই ৭২ ভাগ যন্ত্র প্রতিস্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনের কাজ শেষ হলেই পাথর উত্তোলন শুরু হবে বলে জিটিসি সূত্রে জানা যায়।
মধ্যপাড়া খনি সূত্রে জানা গেছে, খনিটি ২০০৮ সালের গোড়ার দিকে বাণিজ্যিকভাবে পাথর উত্তোলন করে। প্রথমাবস্থায় প্রতিদিনের পাথর উত্তোলনের পরিমাণ ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫ শত মেঃ টন হলেও ৬ মাস যেতে না যেতে উৎপাদনের পরিমাণ কমতে শুরু করে। ২০১২ সালে এসে প্রতিদিনের উৎপাদন দাঁড়ায় মাত্র ৫০০ থেকে ৮০০ মেঃ টন। এতে খনিটি বড় রকমের লোকসানের মুখে পড়ে। এ কারণে লোকসানের হাত থেকে রক্ষা করতে ২০১৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বেলারুশ ভিত্তিক জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী জিটিসি ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পাথর উত্তোলনের শুরুর ৬ মাসের মাথায় প্রতিদিনের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে সাড়ে ৪ হাজার মে. টনে এসে দাঁড়ায়। কিন্তু উৎপাদন যন্ত্রের অভাবে ২০১৫ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয় খনিটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি। তারা আরও জানান, চলতি বছরের আগস্ট মাসের মধ্যে জিটিসি কর্তৃপক্ষ উন্নয়ন ও উত্তোলন পরিকল্পনা ঠিক করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তবে যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ৩৬টি এলসির মধ্যে ২২টি এলসির মালামাল যেহেতু খনির অভ্যন্তরে এসে পৌঁছেছে, তাই খুব শীঘ্রই উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে তারা আশা প্রকাশ করেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসির অফিস সূত্রে জানা যায়, সেই সময়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘নাম নাম’ কোম্পানি ২০০৬-০৭ সালে যে যন্ত্রগুলো স্থাপন করেছিল তা খনির ধুলোমাটিতে ৫ (পাঁচ) বছর যেতে না যেতেই অকেজো হয়ে যায়। এই কারণে শত চেষ্টা করেও ওই যন্ত্রগুলো আর সচল করা যায়নি। যার ফলে উৎপাদন বন্ধ করেই উৎপাদন যন্ত্র আমদানি করতে হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।