বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
স্বপ্নের বাস্তবতা নিয়ে অনেক কথা আছে, তবে সত্যস্বপ্ন সম্পর্কে হাদীসে বলা হয়েছে, এটি নবুওয়াতের ৪০ অথবা ৪৬ ভাগের এক ভাগ। হাদীস হতে আরো জানা যায় যে, নবুওয়াত খতম হয়ে গেছে কিন্তু ‘মোবাশ্বরাত’ বা সুসংবাদসমূহ এবং সত্যস্বপ্নগুলো ঘটতে থাকবে। স্মরণযোগ্য যে, জাগ্রত ব্যক্তি যে সব বিষয় অনুভব করে এবং যেগুলো প্রত্যক্ষ করে, বাস্তবে সেগুলো হওয়ার নিদর্শন ও ইঙ্গিত বহন করে এবং এসব আলামত-ইঙ্গিত ‘তাবীর’ অর্থাৎ- ব্যাখ্যার ভিত্তি হয়।
কখনো এসব আলামত স্পষ্ট হয় না, যা কেবল ‘আরেফীন’ ও ব্যাখ্যা বিশারদগণ বুঝতে পারেন। আবার কখনো এতই স্পষ্ট হয় যে সাধারণ মানুষও সহজে বুঝতে পারে। এর বহু উদাহরণ রয়েছে। তবে সব স্বপ্ন সব সময় বোধগম্য হয় না, ব্যাখ্যা দানকারী বিজ্ঞ-বিশারদগণই ব্যাখ্যা দিতে পারেন। হজরত শেখ সাদী (রহ.) এর ভাষায় : হারচে দর দিল দারাদ, হামা বিনাদ বখাব। অর্থাৎ অন্তরে যা পোষণ করা হয় স্বপ্নে তার সবই দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বপ্ন তিন প্রকারের হয়ে থাকে। এক প্রকারের স্বপ্ন হচ্ছে কেবল ধারণা, মানুষ দিবসে যা চিন্তা-ভাবনা করে এবং অন্তরে যে সব বিষয় ঘিরে থাকে, স্বপ্নে সেগুলো আকার ধারণ করে প্রকাশ পায়। দ্বিতীয় প্রকারের স্বপ্নে, শয়তানী প্রভাবের প্রতিফলন ঘটে, যা সাধারণত ভীতিকর হিসেবে দেখা যায় এবং তৃতীয় প্রকার সে সব স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ হতে সুসংবাদ ও কল্যাণের প্রতিধ্বণি করে। স্বপ্নের এই শ্রেণিকে বলা যায় ‘রুয়ায়ে সাদেকা’ অর্থাৎ সত্যস্বপ্ন।
উলামায়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের নিকট এ শ্রেণির স্বপ্নের ব্যাখ্যা এই যে, আল্লাহতাআলা ঘুমন্ত ব্যক্তির অন্তরে জ্ঞান ও মারেফতের অনুভূতি ও উপলব্ধিগুলোর নূর সৃষ্টি করে দেন। যেমন জাগ্রত ব্যক্তির অন্তরকে জ্ঞান ও মারেফতের নূর দ্বারা আলোকিত করেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা এরূপ করতে সক্ষম।
তৃতীয় প্রকারের স্বপ্ন আম্বিয়ায়ে কেরামকে প্রদর্শন করা হয় এবং তাদের স্বপ্ন দ্বারা শরীয়তের আহকামও কায়েম হয়ে থাকে। আওলিয়ায়ে কেরামও এ শ্রেণির স্বপ্ন দেখে থাকেন, কিন্তু তাদের স্বপ্ন দ্বারা শরীয়তের আহকাম কায়েম হবে না।
আওলিয়া-বুজর্গাণের স্বপ্নে মানুষের নানা প্রকারের কল্যাণ ও সুসংবাদ ইত্যাদি নিহিত থাকে, এমনকি কোনো স্বপ্নে মানবব্যাধির নিরাময় তথা রোগের ওষুধও নির্দেশিত থাকে এবং এরূপ বহু বাস্তব ঘটনার প্রমাণ রয়েছে। আর এ বাস্তবতার সুযোগে এক শ্রেণির ধোঁকাবাজ স্বপ্নে প্রাপ্ত ওষুধ বলে সরলপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে থাকে। কোনো কঠিন রোগ-মহামারি দেখা দিলে এরূপ মিথ্যাচারীদের তৎপরতাও দেখা যায়। এ শ্রেণির প্রতারকদের সম্পর্কে সকলকে সতর্ক-সাবধান থাকা উচিত।
আওলিয়ায়ে কেরাম ও বুজর্গণের অসংখ্য সত্যস্বপ্নের কথা জানা যায়, যাতে বড় বড় কঠিন বিপদ হতে রক্ষা পাওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাকীমুল উম্মত হজরত মওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.)-এর একটি স্বপ্নে দেখা ‘কোরআনী নোসখা’ কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্যর যা মহামারি হতে নিরাপদ থাকা সংক্রান্ত।
হজরত মওলানা মুফতী মোহাম্মদ শাফী (রহ.) ‘মাজালিসে হাকীমুল উম্মত’ শিরোনামে হজরত থানভী (রহ.)-এর উক্তি উদ্ধৃত করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি (হজরত থানভী) বলেন : আমি যখন কানপুর জামেউল উলুম মাদ্রাসায় শিক্ষক ছিলাম, ঘটনাচক্রে কানপুরে ‘তাউন’ (মহামারি) বিস্তার লাভ করে। আমি স্বপ্নে এক বুজর্গের দর্শন লাভ করি। তিনি আমাকে বলছিলেন: পানাহারের বস্তুগুলোতে তিনবার সূরা ‘ইন্না আনজালনা’ (সূরা- কদর) পূর্ণ পড়ে দম করে (ফু দিয়ে) খাওয়ানো অথবা পান করালে রোগী আরোগ্য লাভ ও সুস্থ হয়ে যাবে এবং নিরাপদে থাকবে।’ অতঃপর বললেন : অভিজ্ঞতায় এর বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে।
হজরত থানভী (রহ.)-এর মতো সুবিখ্যাত সাধকের স্বপ্ন নিঃসন্দেহে বর্ণিত তৃতীয় প্রকারের স্বপ্নের অন্তভর্‚ক্ত। তিনি নিজেও তার স্বপ্নের সুফলের কথা ব্যক্ত করেছেন। অর্থাৎ তাউন-মহামারি হতে নিরাপদে থাকার জন্য সূরা কদর পাঠ করা বিশেষ ফলপ্রসূ হয়েছে।
সুতরাং পাশর্^প্রতিক্রিয়া এ সূরা কদর পাঠে যেমন নেই তেমনি এতে রয়েছে অশেষ সাওয়াব। এটি পাঠ করতেও সহজ এবং তদুপরি করোনা মহামারির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিধিনিষেধ মেনে চলার পাশাপাশি বিশেষভাবে মুসলমানগণ এ মারাত্মক মহামারি হতে আত্মরক্ষার জন্যে স্বপ্নে প্রাপ্ত ‘কোরআনী নোসখা’ খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারেন। ঘরে বসে বিনা পয়সায়, বিনা শ্রমে এটি ব্যবহারে কোনো বাধা নেই। প্রত্যেকে ব্যবহার করলে প্রত্যেকই উপকৃত হতে পারেন। ফলে প্রত্যেক মুসলমানই করোনা ভাইরাস-মহামারির ছোবল হতে সুরক্ষিত থাকতে পারেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।