Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাঘা যতীনের ভাস্কর্যটি এখনও দাঁড়িয়ে আছেন ক্ষতচিহ্ন নিয়ে

কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রির্পোটার | প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ৬:১৬ পিএম

ভেঙে দেয়ার দীর্ঘ চার মাস অতিবাহিত হলেও কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বিপ্লবী বীর বাঘা যতীনের সেই ভাস্কর্যটি সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। চিঠি চালাচালির মাঝেই আটকে রয়েছে ভাস্কর্য়ের সংস্কার কাজ। মুখে ক্ষতচিহ্ন নিয়েই এখনও দাঁড়িয়ে আছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক বিপ্লবীবীর বাঘা যতীনের সেই ভাস্কর্যটি।

গত ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে দুর্বৃত্তরা কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নে কয়া মহাবিদ্যালয়ের সামনে নির্মিত বাঘা যতীনের ভাস্কর্যটি ভেঙে রেখে যায়। হামলায় বাঘা যতীনের ভাস্কর্যটির মুখ ও নাকের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ঘটনার পরদিন কলেজের অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদ বাদী হয়ে কুমারখালী থানায় অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের নামে মামলা করেন। মামলা দায়েরের পর গত ১৯ ডিসেম্বর পুলিশ কয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনিসুর রহমানকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তার দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আনিসুরের সহযোগী দুই যুবলীগ কর্মী সবুজ হোসেন ও হৃদয় আহমেদকে গ্রেফতার করা হয়।

কুমারখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাকিবুল ইসলাম জানান, গত ১৯ ডিসেম্বর আসামিদের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন জানানো হয়। আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডে তারা পুলিশকে জানায়, কয়া কলেজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধে অন্য নেতাদের ফাঁসাতে তারা চারজন মিলে পরিকল্পিতভাবে বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনার পর আনিসুরকে দল থেকে বহিষ্কার করে কুমারখালী উপজেলা যুবলীগ।

গ্রেফতারকৃত তিন আসামি এখনো করাগারে রয়েছেন। ঘটনার পর থেকে এই মামলার অপর আসামি কয়া গ্রামের বাচ্চু শেখ পলাতক রয়েছেন।

এদিকে ভাস্কর্যটি ভাঙচুরের ঘটনার প্রায় চার মাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও বিল্পবী বীর বাঘা যতীনের সেই ভাস্কর্যটি সংস্কার বা মেরামত করা সম্ভব হয়নি। চিঠি আদান-প্রদানের বেড়াজালে আটকে আছে ভাস্কর্যটির সংস্কার কাজ।

এতদিনেও কেন সংস্কার করা হয়নি বাঘা যতীনের ভাস্কর্যটি জানতে চাওয়া হলে কয়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদ জানান, ভাস্কর্যটি সংস্কার করার জন্য চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি আমাকে জেলা প্রশাসকের পক্ষে সহকারী কমিশনার রিজু তামান্না স্বাক্ষরিত একটি চিঠি প্রদান করা হয়। ২ ফেব্রুয়ারি ডাক মারফত প্রেরিত ওই চিঠিটি আমার হাতে আসে। ওই চিঠিতে দ্রুত ভাস্কর্যটি সংস্কার করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। একই সাথে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ওই চিঠির অনুলিপি প্রদান করা হয়।

আলোচিত এ ঘটনাটি নিয়ে মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকার কারণে আইনি জটিলতা এড়াতে আমি গত ৩ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কুমারখালী আদালতের বিচারক সেলিনা খাতুনের আদালতে ভাস্কর্যটি সংস্কারের অনুমতি চেয়ে আবেদন করি। আবেদনের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট আদালত গত ৭ মার্চ ভাস্কর্য সংস্কারের অনুমতি প্রদান করেন।

অধ্যক্ষ জানান, আদালতের অনুমতি পেয়ে তিনি ওই দিনই ভাস্কর্যটি সংস্কারের জন্য কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন।

ভাস্কর্য সংস্কারের অগ্রগতি নিয়ে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীবুল ইসলাম খান বলেন, মামলাটি যেহেতু আদালতে বিচারাধীন রয়েছে সে কারণে ভাস্কর্য সংস্কার করা নিয়ে আইনি কোনো জটিলতা আছে কিনা এ বিষয়টি জানার জন্য কুমারখালী থানাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো কিছু জানায়নি। গত ৭ মার্চ আদালত ভাস্কর্যটি সংস্কারের অনুমতি প্রদান করেছেন বিষয়টি তিনি অবগত নন বলে জানান।

তিনি বলেন, আইনি কোনো জটিলতা না থাকলে খুব শিগগিরই ভাস্কর্যটি সংস্কার করার উদ্যোগ নেয়া হবে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুমারখালী থানার উপ-পরিদর্শক রাকিবুল ইসলাম জানান, ভাস্কর্যটি সংস্কার করার নির্দেশনা সংক্রান্ত আদালতের কোনো কাগজ তিনি হাতে পাননি।

অপরদিকে দীর্ঘসময় পার হলেও ভাস্কর্যটি সংস্কার না হওয়ায় জেলার সংস্কৃতিকর্মীরা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বলেন, এটি খুব লজ্জা এবং দুঃখজনক ঘটনা। কুষ্টিয়ার কৃতি সন্তান যে বীরের নাম শুনলে এক সময় ব্রিটিশ শাসক পর্যন্ত ভয়ে কাঁপত সেই বীরের ভাস্কর্যটি দুর্বৃত্তদের হামলার ক্ষত নিয়ে এভাবে দিনের পর দিন পড়ে থাকবে এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তিনি অতি দ্রুত ভাস্কর্যটি সংস্কারের দাবি জানান।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক বিপ্লবী বীর বাঘা যতীনের স্মৃতি ধরে রাখতে কুমারখালী উপজেলা প্রশাসনের অর্থায়নে কয়া মহাবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ২০১৮ সালে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়। তৎকালীন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ প্রধান অতিথি হিসেবে ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ