Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নদীর পানিতে ১বছরে ৭ গুন লবণাক্ততা বৃদ্ধি পটুয়াখালীতে

শহরের নদীতেই কুয়াকাটা সাগরের পানির লবণের স্বাদ

পটুয়াখালী জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ১০:০৭ এএম

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীর পানিতে গত এক বছরের ব্যবধানে পানির লবনাক্ততা ৭ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর এ নদীর পানিতে লবনাক্ততার পরিমান ৬৯৬ মিলিগ্রাম/লিটার থাকলেও এ বছর তা ৪২৩২ মিলিগ্রাম/লিটারে দাঁড়িয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র মতে,গত ১০ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে পটুয়াখালী ও বরগুনা অঞ্চলের নদীতে লবনাক্ততার পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে।।চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে ধীরে ধীরে ধীরে নদীর পানির লবনাক্ততার পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে।পটুয়াখালী জেলার লোহালিয়া,মির্জাগঞ্জ,ও গলাচিপা এলাকার নদীর পানির নমুনা সংগ্রহ করে লবনাক্তরা পরিমান নিরুপন করে থাকে পানিউন্নয়ন বোর্ড।
পানিউন্নয়ন বোর্ডের সূত্র মতে,চলতি এপ্রিল মাসের পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ এর পায়রা নদীতে ৪ তারিখে বিকেল ৫-৩০ মিনিটে পানির লবনাক্তার পরিমান দাড়ায় ১৮০৮ মিলিগ্রাম পার লিটার এবং একই দিনে ভাটায় রাত ১২ টায় ৮৪৯ মিলিগ্রাম পারলিটার। সর্বশেষ ১২ এপ্রিল দুপূর ১-৩০ মিনিটে তা সর্বোচ্চ দাড়ায় ৪২৩২ মিলিগ্রাম পারলিটার,এবং ভাটায় রাত ৮-৩০ মিনিটে ২৭৭৬ মিলিগ্রাম পারলিটার।১ বছর আগে ২০২০ সালে এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ পানির লবনাক্ততা ছিল ২৩ এপ্রিল ৬৯৬ মিলিগ্রাম পারলিটার এবং সর্বনি¤œ ৬৬০ মিলিগ্রাম পারলিটার।গত বছরের ২৪মে সর্বোচ্চ ৭১৯ মিলিগ্রাম পারলিটার এবং সর্বনিম্ন ৬২৬ মিলিগ্রাম পারলিটার পানির লবনাক্ততা রেকর্ড করা হয়।পটুয়াখালীর লোহালিয়া নদীতে ২৩ এপ্রিল ২০২০ এ পানির লবনাক্ততা সর্বোচ্চ ছিল ৬০২ মিলিগ্রাম পারলিটার এবং সর্বনি¤œ ছিল ৫৩৮ মিলিগ্রাম পারলিটার।বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী গলাচিপা নদীতে ২২ মে২০২০ সালে পানির লবনাক্ততা ছিল সর্বোচ্চ ১০৪৫ মিলিগ্রাম পারলিটার এবং সর্বনিম্ন ৯৪২ মিলিগ্রাম পারলিটার বলে জানিয়েছেন পানিউন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজিক্যাল দপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম ।

এমনিতেই পটুয়াখালী বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী বাংলাদেশের দক্ষিনের সর্বশেষ জেলা। বিশেষ করে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া ,রাঙ্গাবালী ,গলাচিপা অধিকাংশ এলাকাই একেবারে সাগরের নিকটবর্তী। এসব এলাকায় পানিতে স্বাভাবিক ভাবে কিছুটা লবনের পরিমান বেশী থাকে । কিন্তু চলতি বছরে লবনের মাত্রা অত্যধিক পরিমান দাড়ানোর কারনে জনসাধারন স্বাভাবিক ভাবে নদী,খালে পানিব্যবহার করতে পারছেনা। এমনকি পটুয়াখালী জেলা শহর সংলগ্ন লোহালিয়া,লাউকাঠী,পায়রা নদীর তীরবর্তী অধিকাংশ মানুষ ভাত,ডাল রান্নার কাজে বরাবরই নদীর পানি ব্যবহার করে আসছে।বর্তমানে কেহ নদীর পানি ব্যবহার করতে পারছেন না,এমনকি গোসল করতে গেলেও মুখে নদীর পানিতে কুয়াকাটা সাগরের মত লবনের পানি মুখে লাগছে বলে জানিয়েছেন পায়রা নদীর পাড়ের বাসিন্দা নয়ন মিস্ত্রী।

কৃষি স্মপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন জানান, নদীর পানিতে লবন বৃদ্ধির কারনে মাটিতেও লবনাক্ততা দেখা দিয়েছে। নদীর লবনাক্ত পানি দিয়ে কৃষি জমিতে সেচ দেয়া অনেক স্থানে ফসলও নষ্ট হচ্ছে। এ বছর জেলার ৪৮ হাজার হেক্টর অর্থাৎ ২০ শতাংশ জমিতে অধিক মাত্রার আর ২৪ হাজার হেক্টর বা ১০ শতাংশ জমিতে অত্যাধিক লবনাক্ততা ধরা পড়েছে। মাটির এ লবনাক্ততা বৃদ্ধির কারনে ফসলের ফলন বিঘিœত হচ্ছে। এটা জনস্বাস্থের জন্য হুমকি স্বরুপ।
জেলা মৎস সম্পদ কর্মকর্তা জানান,যদি আগামী ১ মাসের মধ্যে বৃষ্টি না হয় তবে পানির এ লবনাক্ততা কমবে না। মৎস সম্পদের মধ্যে মিঠা পানির দেশীয় প্রজাতির মাছের পেটে ডিম রয়েছে ।বৈশাখ মাস থেকে ৪ মাস পর্যন্ত ডিম ছাড়ে যদি এ লবনাক্ত পানিতে ডিম ছাড়লে মাছের বড় ধরনের ক্ষতি হবে।

পটুয়াখালী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ভিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ফয়েজ আহম্মেদ জানান,অনাবৃষ্টির কারনে নদীর পানির উচ্চতা সাগরের পানির চেয়ে কমে যাওয়ায় পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার নদ-নদী,খাল ,পুকুর, জলাশয়ের পানিতে লবনাক্তর পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ