বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মৃত্যু হচ্ছে মোহনা-এখানে দুনিয়ার জীবনের সমাপ্তি আবার আখেরাতের জীবনের সূচনা। দুনিয়াকে বলা হয় ‘মাযরাআতুল আখিরাহ’ বা আখেরাতের শস্যক্ষেত্র। দুনিয়ার জীবন যার যেমন কাটবে, পরকালে এর ফলই সে ভোগ করবে। আর যে কোনোকিছু ভালো হিসেবে বিবেচিত হওয়ার জন্যে এর সমাপ্তি সুন্দর হওয়া জরুরি। হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমল তো শেষ অবস্থা অনুসারেই বিবেচিত হবে। (সহীহ বুখারী : ৬৬০৭)।
আমাদের এক পরিচিত প্রবাদ-শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। সবমিলিয়ে বলা যায়, আখেরাতে সুন্দর জীবনের জন্যে সুন্দর মৃত্যুর বিকল্প নেই। মত্যুর সময় যদি ঈমানটাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া যায়, দুনিয়ার সব দুঃখ-কষ্ট তখন তুচ্ছ। আর যদি এর বিপরীত কিছু হয়, শয়তানের ধোঁকায় কেউ নিজের ঈমান খুইয়ে বসে, জগতে তার চেয়ে হতভাগা আর কে হতে পারে! এজন্যে কোনো মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে যারা উপস্থিত থাকবেন, তাদের প্রথম কর্তব্য-কালেমায়ে তায়্যিবার তালকীন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তোমরা তোমাদের মৃত্যুগামী ব্যক্তিদের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’র তালকীন করো। (সহীহ মুসলিম : ৯১৬, ৯১৭)।
তালকীনের অর্থ হচ্ছে-মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে একটু আওয়াজ করে কালেমা পড়তে থাকা। তবে মনে রাখতে হবে, এ অবস্থায় তাকে কিছুতেই মুখে উচ্চারণ করে কালেমা পড়ার আদেশ করা যাবে না। জোরাজুরি করা যাবে না; এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই নিয়ম হলো, তার পাশে বসে মৃদু আওয়াজে কেবল কালিমা পড়তে থাকা। কালিমা বলুন বা এজাতীয় কিছু না বলা। তার পাশে যখন কালেমা পড়া হবে, তিনি যখন কালেমার আওয়াজ শুনতে পাবেন, আশা করা যায়, তিনি নিজেই কালেমা পড়ে নিতে পারেন। এ কালেমা যার জীবনের শেষ কথা হবে তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যার শেষ কথা হবে-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সুনানে আবু দাউদ : ৩১১৮)।
মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে থেকে সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত করার কথাও হাদীসে রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : মৃত্যুপথযাত্রী যারা তাদের পাশে থেকে তোমরা সূরা ইয়াসীন পাঠ করো। (সুনানে আবু দাউদ : ৩১২৩)।
মৃত্যু যেমন এক অনুপেক্ষ বাস্তবতা, মৃত্যুর জন্যে নির্ধারিত সময়ও কারো পক্ষে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে যার জন্যে যতটুকু হায়াত নির্ধারিত, যার মৃত্যুর জন্যে যে সময় লিখে রাখা হয়েছে, এ সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই কারো। পবিত্র কোরআনে একাধিক স্থানে মহামহিম আল্লাহ এ ঘোষণাও দিয়েছেন : তাদের মৃতু্িযর নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হয় তখন তারা তা এক মুহূর্তও বিলম্বিত করতে পারবে না, এমনকি মুহূর্তকাল ত্বরান্বিতও করতে পারবে না। (সূরা নাহল : ৬১)।
নির্ধারিত সময়েই তাই সকলের মৃত্যু হবে। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। আমাদের করণীয় বরং পরবর্তী সময়ে-মৃত ব্যক্তির কাফন-দাফন জানাযা ইত্যাদি ক্ষেত্রে। মৃত ব্যক্তিকে সুন্দরভাবে গোসল করিয়ে কাফন পরানো এবং তার জানাযার নামায আদায় করে তাকে দাফন করা-এগুলো আপনজনদের করতে হয়। মাটি থেকেই মানুষের সৃষ্টি, দুনিয়ার জীবন শেষ করে মাটিতেই হয় তার শেষ গন্তব্য। কোরআনে কারীমের ভাষায় : আমি তোমাদেরকে তা (অর্থাৎ মাটি) থেকেই সৃষ্টি করেছি, তাতেই আবার তোমাদের আমি ফিরিয়ে নেব এবং তা থেকেই পুনরায় তোমাদের জীবিত করব। (সূরা ত্বহা : ৫৫)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।