বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরের বিভিন্ন শেডে থেকে কোটি কোটি টাকার পণ্য চুরি হচ্ছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন তরফদারের নেতৃত্বে বন্দরে পণ্য চুরির একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে বলে কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অভিযোগ করে কোন সমাধান পায়নি বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনগুলো। প্রতিনিয়ত বন্দর থেকে আমদানিকৃত মালামাল চুরির ঘটনা নিয়ে বর্তমানে কাস্টমস ও বন্দরের মাঝে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ । বিশেষ করে কাস্টমস এর নিলামকৃত পণ্য চুরি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। ফলে সরকারকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছেন, বন্দরের ১নং শেডে থেকে ১১শ’ ২ টন উন্নতমানের শার্টিং ও প্যান্টিং চুরি করা হয়েছে। যার আমদানিকারক এইচবি ইন্টারন্যাশনাল, বেনাপোল, কাস্টমস মেনিফেস্ট নং ৩৬৩৪০/১। পণ্যটি মিথ্যা ঘোষণার অভিযোগে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আটক করে। পরে চালানটি নিলামে বিক্রি করা হয় ৬১ লাখ টাকায়। নিলামকারী বেনাপোলের নোভা এন্টারপ্রাইজ পণ্য চালানটি ডেলিভারি নিতে গিয়ে ১১শ’ ২ কেজি চুরি যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হন। নিলামকারী তাৎক্ষনিক বন্দরের উপপরিচালক মামুন তরফদারকে জানালে তিনি ক্রেতা মোহাম্মদ আলী খানকে হুমকি দিয়ে বন্দর থেকে বের করে দেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
অন্যদিকে খুলনার আমদানিকারক সান ওয়ার্ল্ড ট্রেড ভারতে থেকে ১৯ লাখ ৯১ হাজার ৩২০ কেজি ব্রোকেন স্টোন আমদানি করেন। যা বন্দরের টিটিআইতে সংরক্ষণ করা হয়। যার কাস্টমস মেনিফেস্ট নং -২৬৪১৩/১৭, ২৪৫১৬/১৩,২৫৫৩৬/১০,২৭৩০৮/৭ পণ্য চালানটি কাস্টমস এর ডেপুটি কমিশনার (আইআর এম) এর নেতৃত্ব ইনভেন্ট্রি করে ১৭ লাখ ৯১ হাজার ৩২০ কেজি কম পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বন্দর কর্তৃপক্ষকে পত্র প্রদান করেছেন যার পত্র নং-৫ম/২০(০৮)এলসি/নিলাম/বেনা-২০২০ /৫৮৭৬(১-৮)। নিলামকারী বেনাপোলের নোভা এন্টারপ্রাইজের মালিক মাহাম্মদ আলী খান জানান, বন্দরের উপপরিচালক মামুন তরফদারের নেতৃত্বে বন্দরে একটি শক্তিশালী চোর সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তিন গত ২ বছর বেনাপোলে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে বড় ধরনের পণ্য চুরির ঘটনা ঘটছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেও কোন সমাধান পাওয়া যায়নি।
বন্দরের প্রতিটি শেডে ট্যান্ডেল নামে বহিরাগত একজন করে চোর নিয়োগ দেয়া হয়েছে গোপনে। তারা সরাসরি রাজস্ব ফাঁকি ও শেড থেকে মালামাল চুরির সঙ্গে জড়িত, এমন অভিযোগ করেছেন বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনগুলো। বন্দরে মোট ৪২টি শেড রয়েছে, যার প্রতিটি শেডে বহিরাগত ট্যান্ডেল চোর কর্মরত আছে বর্তমানে।
সংশিষ্ট সূত্র জানায়, বেনাপোল বন্দর দিয়ে বছরে ২০ লাখ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয় ভারত থেকে। এসব পণ্য থেকে সরকার প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকেন। কাস্টম হাউস সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৮ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়। আর চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৫০৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ হাজার ৫০৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, বন্দরের প্রতিটি গেটে নিরাপত্তাকর্মীরা দায়িত্বে থাকার পরও অবাধে প্রবেশ করছে বহিরাগত। বন্দর একটি বন্ডেড কেপিআইভুক্ত এলাকা সত্তে¡ও কীভাবে বন্দরে অবৈধ লোকজন প্রবেশ করছে, তা নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ’র কোন মাথা ব্যথা নেই।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, বন্দর থেকে পণ্য চুরি হচ্ছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। চুরি যাওয়া মালামালের কোন ক্ষতিপূরণ দেন না বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া বন্দরের উপ পরিচালক মামুন তরফদার ওপারে ভারতের বন্দর কর্তৃপক্ষকে প্রতিদিন কত ট্রাক পণ্য আমদানি হবে তা অবহিত করার পর ভারত থেকে সেই সংখ্যক ট্রাক পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। ফলে ওপরে হাজার হাজার ট্রাক পণ্য আটক পড়ে থাকে। ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ডাইরেক্টর মতিয়ার রহমান বলেন, বন্দরে কত ট্রাক পণ্য আমদানি হবে সেটি নিয়ন্ত্রণ করে মামুন তরফদার, সে বন্দরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। তার সাথে কাস্টমস ও রেল কতৃপক্ষের মধ্যে রশি টানাটানি হচ্ছে। ফলে প্রশাসনিক চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরণের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
বন্দরের উপপরিচালক মামুন তরফদার জানান, চুরির বিষয়টি নিয়ে উত্তর দেবেন ডাইরেক্টর, চিঠি সাইন করেছেন ডাইরেক্টর। আমি আপনার উত্তর দিতে বাধ্য নই।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল জলিল এ ব্যাপারে বলেন, বন্দর থেকে পণ্য চুরির অভিযোগ পাওয়ার পর বন্দরের উপপরিচালক মেহেদী হাসানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটিকে ২ সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মো. আজিজুর রহমান জানান, বন্দরের অধিকাংশ সমস্যা আমরা বন্দরের বিভিণ্ণ স্টেক হোল্ডারদের সাথে নিয়ে সমাধান করেছি। মামুন তরফদারের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো নেই। টিটিআই থেকে ব্রোকেন স্টোন ও ১নং শেড থেকে উন্নত মানের মূল্যবান ফেব্রিকস চুরি গেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।