Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রমজান ও জাকাত-১

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

কোরআন, হাদীস এবং ফেকার কিতাবসমূহে জাকাত প্রদানের খাত। জাকাত কারা কারা পাবে এবং জাকাতের নেসাব অর্থাৎ জাকাতের পরিমাণ ইত্যাদি বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে, যা অনেকেরই জানা। শরীয়তের দৃষ্টিতে আর্থিকভাবে জাকাত প্রদানে সক্ষম এবং যারা জাকাত প্রদান করে থাকেন, তাদের মধ্যে অনেকে হিসাব রাখার সুবিধার জন্য রমজান মাসে জাকাতের অর্থ প্রদান করে থাকেন। কেননা, এই মাসে দান-খয়রাত করার সাওয়াব অনেক বেশি।

ইসলামের রোকন হিসেবে কোরআনে নামাজের উল্লেখ আছে বহু স্থানে এবং অনুরূপভাবে নামাজের সঙ্গে জাকাত প্রদানের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। আর যারা এ দান পাওয়ার অধিকারী, তাদের কথাও বলে দেয়া হয়েছে। জাকাত প্রদানের গুরুত্বের প্রতি লক্ষ্য রেখে অনেকে রমজান মাসে এ ফরজ আদায়ে তৎপর হয়ে উঠেন। আবার এমন লোকেরও অভাব নেই, যারা আর্থিকভাবে জাকাত প্রদানে সক্ষম হওয়া সত্তে¡ও জাকাত না দেয়ার জন্য নানা টালবাহানা করে থাকেন।

অর্থলোভী ইহুদী-খ্রীষ্টান, পুরোহিতদের ক‚-কীর্তির বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহ বলেন : হে ঈমানদারগণ! পন্ডিত ও সংসার বিরাগীদের অনেকে লোকদের মালামাল অন্যায়ভাবে ভোগ করে চলছে এবং আল্লাহর পথ থেকে লোকদের নিবৃত রাখছে। আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। যে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পাশর্^ ও পৃষ্ঠদেশে দগ্ধ করা হবে (সে দিন বলা হবে) এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা রেখেছিলে, সুতরাং এ ক্ষণে আস্বাদ গ্রহণ কর জমা করে রাখার। (সূরা: তওবা, আয়াত: ৩৫-৩৬)।

অর্থের লোভ লালসা ইহুদী-খ্রীষ্টান পুরোহিত ও সম্প্রদায়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পরিণত হয়ে গিয়েছিল। অর্থলিপ্সার করুণ পরিণতি ও কঠোর শাস্তি এবং এ ব্যাধি হতে মুক্তির পথ আয়াতে নির্দেশিত হয়েছে এবং মুসলমানদের তা অবহিত করা হয়েছে। তাই জাকাত প্রদানে যারা উদাসীন বা লোভের বশবর্তী হয়ে ইসলামের এ ফরজ হতে বিরত থাকে, আয়াতে বর্ণিত কঠোর আজাব তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

আয়াতের শানেনযূল সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে, তবে আয়াতের ব্যাখ্যা নিয়ে একজন সাহাবীর মতামতকে কেন্দ্র করে যে ঘটনাটি ঘটেছিল তা প্রাসঙ্গিক ভাবে এখানে উল্লেখযোগ্য।
হজরত উসমান (রা.) এর খেলাফত আমল। হজরত মোয়াবিয়া (রা.) তার পক্ষ হতে সিরিয়ার শাসনকর্তা ছিলেন। তিনি খবর পান যে, বিশিষ্ট সাহাবী হজরত আবুজর গিফারী (রা.) আয়াতের অর্থ নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন। অর্থাৎ উভয়ের মধ্যে এ নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। হজরত মোয়াবিয়ার (রা.) বলেছিলেন, আয়াতটি তাহলে কিতাব বা গ্রন্থধারীদের সম্পর্কে নাজেল হয়েছে। আর হজরত আবুজর গিফারী (রা.) বলেছিলেন, মুসলমান ও আহলে কিতাব উভয় সম্প্রদায় সম্বন্ধেই নাজেল হয়েছে।

সিরিয়ার শাসনকর্তা হিসেবে হজরত মোয়াবিয়া (রা.) খলিফা হজরত উসমান (রা.)-এর নিকট হজরত আবুজর (রা.) এ সম্বন্ধে অভিযোগ লিখে পাঠান। হজরত উসমান (রা.) হজরত আবুজর (রা.)-কে মদীনায় তলব করেন এবং তার সম্বন্ধে হজরত মোয়াবিয়া (রা.)-এর অভিযোগ বর্ণনা করেন।
কোনো কোনো বর্ণনা মতে, হজরত আবুজর (রা.) সম্পদ জমা করার বিরুদ্ধে তার অভিমত ব্যক্ত করলে হজরত উসমান (রা.) মন্তব্য করেছিলেন, এমত প্রচার করা হলে মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে। এ কারণে তিনি হজরত আবুজর (রা.)-কে বললেন, আপনি যদি ইচ্ছা করেন, তাহলে সেখান হতে চলে আসুন এবং আমার নিকটই অবস্থান করুন। তিনি ‘বরযাহ’ নামক স্থানে বসবাস করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং খলিফার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সেখানে চলে যান এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

সুফিয়ায়ে কেরামের ভাষ্য অনুযায়ী, যেভাবে মালের ওপর জাকাত দিতে হয়, তদ্রুপ মানমর্যাদর জন্যও জাকাত প্রদান করতে হয়। কেননা তাও (আল্লাহর) পূর্ণ নেয়ামত। এ জন্য রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যেভাবে আল্লাহ তাআলা তোমাদের মালামালের জাকাত ফরজ করেছেন, অনুরূপ তোমাদের মানমর্যাদার জাকাতও ফরজ। মান মর্যাদার অর্থ, মানুষের উচ্চ পদ-পদবী লাভ, উত্তম মর্যাদা, নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব অথবা কোনো জাতি ও সম্প্রদায়ের প্রধান হওয়া, আল্লাহর পক্ষ হতে অর্জিত হওয়া। তাহলেও এ শ্রেষ্ঠত্ব বা মর্যাদা লাভের জন্য জাকাত প্রদান করা উচিত। কিন্তু তোমাদের ঘরের জাকাত হচ্ছে উত্তমরূপ মেহমানদারী বা আপ্যায়ন করা। (কাশফুল মাহজুব)
এ জাকাতের নেসাব বা পরিমাণ কি হবে তা বলা না হলেও প্রশ্ন থেকে যায় যে, মুসলিম সমাজে সর্দারি, নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব লাভের সামাজিক, জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় তথা নানা স্তরে উচ্চমান মর্যাদার অধিকারী অনেকে থাকেন এবং তাদের মধ্যে শরীয়ত অনুযায়ী নেসাব পরিমাণের অধিকারী যারা, তারা জাকাত প্রদান করে থাকেন এটা স্বাভাবিক, কিন্তু মান মর্যাদার অধিকারী হওয়ার জন্য কতজন জাকাত প্রদান করে থাকে এরূপ প্রশ্ন থেকেই যায়।



 

Show all comments
  • তোফাজ্জল হোসেন ২৪ এপ্রিল, ২০২১, ১:৪১ এএম says : 1
    রমজানের সঙ্গে জাকাতের সম্পর্ক সুনিবিড়। জাকাত মানে যেমন পবিত্রতা, তেমনি রমজান মানে হলো আগুনে পুড়ে সোনা খাদমুক্ত বা খাঁটি করা।
    Total Reply(0) Reply
  • তানিম আশরাফ ২৪ এপ্রিল, ২০২১, ১:৪১ এএম says : 0
    আল কোরআনে নামাজের নির্দেশ যেমন ৮২ বার রয়েছে, অনুরূপ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জাকাতের নির্দেশনাও ৮২ বার রয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • বদরুল সজিব ২৪ এপ্রিল, ২০২১, ১:৪১ এএম says : 0
    জাকাত মানে প্রবৃদ্ধি আর রমজানে প্রতি ইবাদতের সওয়াব আল্লাহ তায়ালা ৭০ গুণ বৃদ্ধি করে দেন। জাকাত প্রদান করতে গিয়ে আত্মপ্রচারণা ঠিক নয়। ব্যানার ঝুলিয়ে, সাইনবোর্ড লাগিয়ে, মাইকিং করে জাকাত প্রদান করা মোটেই সুন্নতসম্মত নয়। স্বল্পমূল্যের শাড়ি ও লুঙ্গি দ্বারা জাকাত দেওয়া তাকওয়ার প্রকাশ নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • জান্নাতুল মাওয়া ২৪ এপ্রিল, ২০২১, ১:৪২ এএম says : 0
    সম্পদের বরকত ও পরিশুদ্ধতা অর্জনে জাকাত দেওয়ার সর্বোত্তম রমজান।
    Total Reply(0) Reply
  • কুদ্দুস তালুকদার ২৪ এপ্রিল, ২০২১, ১:৪৩ এএম says : 0
    মুসলমানদের মধ্যে কেউ সম্পদের মালিক মানেই তিনি জাকাত দেবেন। সম্পদের পবিত্রতা পরিশুদ্ধতা এবং বৃদ্ধির ধারাকে অব্যাহত রাখতে মুমিন মুসলমান জাকাত দেয়। রমজানে জাকাত দিলে আদায়কারী ও গ্রহীতারা উভয়ই বেশি ‍উপকৃত হয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন