পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দক্ষিণাঞ্চলে থামছে না ডায়রিয়ার প্রকোপ। প্রতিদিন নগরীসহ জেলা-উপজেলায় গড়ে দেড় হাজারের অধিক নারী পুরুষ হাসপাতালে ছুটে আসছেন চিকিৎসার জন্য। আক্রান্ত থেকে বাদ যাচ্ছে না শিশুও। ভর্তির তুলনায় রোগী রিলিজের হার কম। যে কারণে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর ঠাঁই হচ্ছে না। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল চত্বরে তাবু টানিয়ে রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। এমন পরিস্থিতিতেও থামছে না রোগীর চাপ।
গতকাল দুপুর পর্যন্ত গত ৪৮ ঘণ্টায় এ অঞ্চলের ৬ জেলায় আরো ৩ সহস্রাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে একজনের। এনিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে সরকারি হিসেবে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ হাজারের উপরে উঠল। মৃতের সংখ্যা ৯। সরকারি এ পরিসংখ্যান শুধুমাত্র সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের নিয়ে। তবে বেসরকারী সূত্রের মতে, এ অঞ্চলে ডায়রিয়া আক্রান্ত অন্তত ৭০ ভাগ মানুষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনা বা চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত তত্বাবধানে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন।
স্মরণকালের ভয়াবহ দাবদহের সাথে খাবার গ্রহণে অসতর্কতাসহ নানা অজ্ঞাত কারণেও এবার ডায়রিয়ার এমন বিস্তার ঘটছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ইতোমধ্যে ঢাকার আইইডিসিআর-এর একটি টিম দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে ডায়রিয়া রোগীদের ‘রেক্টাম সোয়াব’ সংগ্রহ করছেন। এমনকি ডায়রিয়ার সাথে করোনাভাইরাসের কোন সংযোগ আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ অনেক কোভিড-১৯ রোগীরও অন্যতম উপসর্গ পেটের পীড়া।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, আইইডিসিআরের অপর একটি প্রতিনিধিদল গত ১ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের তালিকা ধরে সমীক্ষা চালায়। এতে ৯৪ শতাংশ লোক গভীর নলক‚পের পানি পান করলেও ৭১ শতাংশ মানুষ দৈনন্দিন গৃহস্থালি কাজে খালের পানি ব্যবহার করে। সমীক্ষাভুক্ত এলাকায় মাত্র ২০ শতাংশ বাড়িতে গভীর নলক‚প আছে। প্রতিষ্ঠানটি বরগুনার খালের পানির নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ল্যাবে পরীক্ষা করে খালের পানিতে মলের জীবাণুর উপস্থিতি পেয়েছে। ২০ জন রোগীর মল পরীক্ষায় তিনজনের মলে কলেরা ও ইকোলাই জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
পাশাপাশি এবার অনাবৃষ্টির সাথে উজানের নদ-নদীর প্রবাহ হ্রাসের ফলে সাগরের জোয়ারের পানি সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলকে অনেকটাই গ্রাস করেছে। বঙ্গোপসাগর থেকে ১১০ কিলোমিটার উজানে বরিশাল মহানগরীর পাশের কির্তনখোলা নদীতে লবনাক্ততার মাত্রা এবার ১ হাজার পিপিএম-এর উপরে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ এখন বিশুদ্ধ পানি পান করলেও লবনাক্ততার এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন হাসপাতালে সরকারি হিসেবে মঙ্গলবারের তুলনায় বুধবার আক্রান্তের সংখ্যা ১২ জন বেড়েছে। গতকাল আরো ১৮ জন বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যাটা ১ হাজার ৫৪২ জনে উন্নীত হয়েছে। এ নিয়ে সরকারি হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলের ৪২টি উপজেলায় গত ৭দিনে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৯ হাজার ৫২৪ জনে। মারা গেছেন ৭ জন। বরিশাল সদর হাসপাতালসহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের ঠাঁই মিলছে না। গতকাল দুপুরে ৪ বেডের বরিশাল সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগী ছিল প্রায় ৪৫ জন। ফলে এখনো হাসপাতালটির মাঠে তাবুর নিচে বেডে ও খোলা মাটিতে নারী-পুরুষ ও শিশুদের একইসাথে চিকিৎসা চলছে।
দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখনো কোন বয়স্ক ডায়রিয়া রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। এমনকি সেখানে কোন বয়স্ক ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা পরামর্শ পর্যন্ত দেয়া হয় না। মাস কয়েক আগে এ হাসপাতালটি থেকে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে সদর হাসপাতালে যাবার পথে এক ডায়রিয়া রোগীর পথেই মৃত্যু ঘটে। ফলে মহানগরীসহ সন্নিহিত এলাকার ডায়রিয়া রোগীদের ভরসাস্থল বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের ৪টি বেড।
স্বাস্থ্য বিভাগের মতে এ অঞ্চলে গত এক মাসে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৬২২ জনে। আর মারা গেছেন ৮ জন। গত তিন মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৬৩৮ জন। অথচ গত ১৩ মাসে দক্ষিণাঞ্চলে করোনা সংক্রমণের শিকার হয়েছেন ১৩ হাজার ৯১০ জন। তবে এ পর্যন্ত ৩১ হাজার ৬০৬ জন ডায়রিয়া রোগী সুস্থ হয়েছেন বলেও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে আরো জানা গেছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় দক্ষিণাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে ভোলায়। এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬৫ জন। এছাড়া বরগুনাতে ৬০৫, পটুয়াখালীতে ৬৪১, ঝালকাঠিতে ৩৯৫, বরিশালে ৩৭৬ আর পিরোজপুরে ২৮৪ জন। আর মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বরিশালে। এ জেলায় মারা গেছেন ৫ জন। এছাড়া বরগুনা ও পটুয়াখালীতে ২ জন করে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার সাহা অস্বাভাবিক দাবদহ ও বৃষ্টির অভাবের সাথে খাবার গ্রহণে অসতর্কতাকে ডায়রিয়ার জন্য দায়ী করলেও মাঠ পর্যায়ে আরো তথ্য সংগ্রহের কথা জানিয়েছেন। প্রতিবছরই মৌসুমের এসময় ডায়রিয়া সহ নানা ধরনের পেটের পীড়া দেখা দিলেও এবার সংখ্যাটা বেশি বলে দাবি করে তিনি সকলকে পানিসহ সবধরনের খাবারের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনেরও তাগিদ দিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।