Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাজে আসছে না কৃষিতে ব্যবহারের জন্য সোয়া দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সৌরচালিত পাতকুয়া

শেরপুর জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০২১, ৫:৩১ পিএম

শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলায় কাবিটা টাকা দিয়ে কৃষকের সেচের জন্য করে দেয়া হয় সৌরচালিত ড্রাগওয়াল বা পাতকুয়া। কিন্তু রক্ষনা-বেক্ষন না থাকায় কাজে আসছে না কৃষিতে ব্যবহারের জন্য এসব ড্রাগওয়াল। ফলে গচ্ছা যাচ্ছে এসব পাতকুয়া নির্মাণের টাকা।

সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী তার নির্বচনী এলাকা নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় ২০১৬-১৭ অর্থ বছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থ বছর পর্যন্ত তিন বছরে কাজের বিনিময়ে টাকা প্রকল্পের প্রায় ২কোটি ২৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মান করেন ২৩টি ড্রাগওয়াল বা পাতকোয়া। উদ্দেশ্য ছিলো, বিনা টাকায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের সবজী ও ইরি ধান চাষে সেচ দেয়া। সৌর বিদ্যুত চালিত এ ড্রাগওয়ালগুলো নির্মান কাজ বাস্তবায় করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন এর ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প। আর কৃষি বিভাগ সেচ কাজের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে আসছিলো। কিন্তু এসব ড্রাগওয়াল শুরুতে কিছু পানি ওঠলেও বছর যেতে না যেতেই পানি ওঠা বন্ধ হয়ে যায়।
প্রতিটি ড্রাগওয়ালের পানি সুবিধা পাওয়ার জন্য ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কৃষক গ্রুপ করে দেয়া হয়। মাসিক স্বল্প টাকা জমা করে পরবর্তীতে ড্রাগওয়াল সমস্যা দেখা দিলে সারিয়ে নেয়ার জন্য। কিন্তু ড্রাগওয়ালের পানি ৪০জন তো দূরে থাক দুই জন কৃষকের চাহিদাও মেটানো যাচ্ছে না। টাকা দিয়ে সেচের পানি দিয়ে ফসল করতে হচ্ছে তাদের।
কৃষকদের অভিযোগ, রক্ষনা-বেক্ষনের ব্যবস্থা না থাকায় এ ড্রাগওয়ালগুলোর উদ্ধেশ্য বাস্তবায়না না হয়ে বিপুল পরিমান টাকা গচ্ছা যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ীর মানিক কুড়া গ্রামের কৃষক হযরত আলী জানান, আ পাতকোয়া দিয়ে আমাগো দুই শরিকেরই পানি অয়না। অন্যগোরে পানি দিমু কেমনে। এডাতো নষ্ট অইতাছে। পানি বাইর অয়না। কেউ আহেও না। পানিই দিবার পাইনা, টেহা দিবো কেডা।

নকলার রামপুড় গ্রামের পাতকোয়া কৃষক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম জানান, এখানে ৪১ জনকে পানি দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু পানি তো ঠিকমতো ওঠেনা। কৃষকদের পানি দেওন যায়না। তাই কেউ চাঁদাও দেয়না। যে উদ্দেশ্যে এটা করা হয়েছিল, তা পুরণ হয় নাই। দেখাশুনার কেউ না থাকায় এটা আস্তে আস্তে শেষ হইয়া যাইতাছে।

নালিতাবাড়ীর রামচন্দ্রকুড়ার কৃষক জানান, এ পাতকোয়া দিয়ে এক বছর বালাই পানি বাইর অইছে। এহন নষ্ট। এহন আমরা টেহা দিয়ে পানি নিয়ে আইয়া আবাদ করতাছি। এডা এহন কেউ দেকবারও আহে না।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (ক্ষুদ্র সেচ) শেরপুরের সহকারী প্রকৌশলী মেহেদী আল বাকী জানান, এ পাতকোয়াগুলোর টেকনিক্যাল কাজগুলো আমরা বাস্তবায়ন করেছি। সৌর প্যানেল ব্যাটারী সবই দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানী থেকে। এটির রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব আমাদের নেই। এ ছাড়া এর অর্থায়নও আমরা করিনাই। এগুলোর জন্য আমাদের কোন বাজেটও নেই। কাজেই এ বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই। ফলে বিপুল পরিমান টাকা লাভের পরিবর্তে লোকসানই হচ্ছে। তবে প্রজেক্টি চালু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী স্থানীয় কৃষকদের।

শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড: মুহিত কুমার দে বলছেন এটি একটি পুরান পদ্ধতি। তবে সিস্টেমটা ভালো। কিন্তু ব্যবস্থাপনা সঠিক না থাকায় এটি কাজে আসছে না। এখনও রক্ষনাবেক্ষন করা হলে এখনও পাতকোয়াগুলো সচল করা সম্ভব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ