Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লতিরাজ কচুর কোনো কিছুই ফেলনা নয়

এমদাদুল হক সুমন, নওগাঁ থেকে : | প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

নওগাঁর রাণীনগরের মাটি এখন সোনার চেয়েও দামি। জমি বিক্রির দাম বেড়ে গেছে বললে ভুল হবে। জমির দাম বাড়েনি, বেড়েছে বিভিন্ন ধরনের আবাদ। আর এতেই এলাকার লোকজন বলছেন রাণীনগরের মাটি আসলেই অনেক দামি। এই মাটি যে ফলন দিচ্ছে তাতে সবাই খুশি। ধানের জন্য বিখ্যাত রাণীনগরের যে দিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। এই সবুজ সবজিটি হচ্ছে লতিরাজ কচু। দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় লতিরাজের। দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই কচুর চাষ। অধিক পুষ্টি সম্পন্ন লরতিরাজ কচু সবজি চাষে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন বলে চাষে আগ্রহ বেড়েই চলেছে। রাণীনগর উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক তত্ত¡াবধানে এলাকায় লতিরাজ কচুর চাষ শুরু হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলা মূলত ধান চাষের জন্য বিখ্যাত। ইদানিং উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষি অফিসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অধিক লাভজনক ড্রাগন ও মাল্টা ফলের পাশাপাশি লেবুর চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা। তারই ধারাবাহিকতায় কৃষকরা ঝুকেছেন লতিরাজ কচু চাষের দিকে। এই সবজি গাছের সবটুকুই লাভজনক।

উপজেলায় আট হেক্টর জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে আগাম জাতের লতিরাজ কচুর চাষ করা হয়েছে। বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় অন্যান্য ফসল ও সবজির চেয়ে কচু চাষে লাভ অনেক বেশি পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। এই সবজি নিচু জমিতেও চাষ করা সম্ভব। তেমন কীটনাশক ও সার ব্যবহার করতে হয়না।

লতিরাজ কচু গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি হওয়ায় রোগের আক্রমণ কম হয়। কচু গাছের পাতা, কান্ড ও মূল সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। এছাড়া কচুর কান্ডকে চারা হিসেবে বিক্রি করা যায়। অর্থাৎ লতিরাজ কচুর পুরোটাই ব্যবহার করা সম্ভব। রাণীনগর কৃষি অফিসের প্রত্যাশা, এক সময় উপজেলায় বাণিজ্যিক ভাবে লতিরাজ কচুর চাষ শুরু হবে। উৎপাদিত সবজি কচু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করা সম্ভব হবে।

কাশিমপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার উৎসাহ আর প্রেরণায় তিনি এই প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে কচু চাষ শুরু করেছেন। সবজির পুরোটাই লাভজনক এবং বাজারে বিক্রি করে বেশ মুনাফাও পাচ্ছেন। লতিরাজ কচুর কোনো অংশই নষ্ট হয়না কিংবা ফেলে দিতে হয়না। পরিবারের চাহিদা পূরণ করে বাজারে বিক্রি করে অনেক লাভ হওয়ায় আগামীতে কচু চাষের পরিধি আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমান সরকারের ভিশনকে বাস্তবায়ন করার প্রয়াস হিসেবে উপজেলার কৃষকদের ধানের পাশাপাশি অধিক লাভজনক ফসল ও সবজি চাষের প্রতি আগ্রহী করার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ গ্রহণ করা। এই কচু দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের একটি লাভজনক ফসল। পরীক্ষামূলক ভাবে লতিরাজ কচুর চারা সংগ্রহ করে কয়েকজন কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়। তারা আগ্রহ নিয়ে কচু চাষ শুরু করেন। বর্তমানে কৃষকরা জমি থেকে কচু তোলা শুরু করেছেন। তিনি আরো বলেন, একই জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করলে জমির উর্বরতা শক্তিও বৃদ্ধি পায়। কচু চাষের অনেক সুবিধা রয়েছে। যেমন এই সবজি যে কোন জমিতে চাষ করা সম্ভব। সবজি হিসেবে বাজারে বিক্রির পাশাপাশি চারা হিসেবেও কচুর কান্ড বিক্রি করা যায়। যারাই লতিরাজ কচু চাষে আগ্রহী উঠছেন তাদেরকে কৃষি অফিসের মাধ্যমে চারা সরবরাহ করা থেকে শুরু করে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লতিরাজ কচু
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ