পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারায় এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে আবারো শ্রমিক অসন্তোষ-বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশের গুলিতে অন্তত পাঁচ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত ছয় জন পুলিশসহ ৫০ জনের বেশি শ্রমিক। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ১২ জনসহ ২৫ জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইতিপূর্বে বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন বিতর্কিত এই কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকে ঘিরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে সাতজন গ্রামবাসী নিহত হয়েছেন। এই নিয়ে গত পাঁচ বছরের এস আলম গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় অন্তত তিন দফায় প্রতিবাদী শ্রমিক, এলাকাবাসী এবং এস আলম গ্রুপের ভাড়াটে-সমর্থক, তাছাড়া পুলিশের সাথে সহিংস সঘর্ষে কমপক্ষে ১২ জন গ্রামবাসী প্রাণ হারালো। লাশের উপরে লাশ। প্রতাপশালী এস আলম গ্রুপ বলেই কথা। গোড়া থেকেই জনমতের বিরুদ্ধে গিয়ে গন্ডামারা উপকূলবর্তী কৃষি ও অকৃষি বসতভিটাসহ এলাকাবাসীর মূল্যবান জমি পানির দরে কিনে হাতিয়ে নেয় এস আলম গ্রুপ। এমনকি অনেককেই জমির দাম পরিশোধ না করা অথবা উপযুক্ত দর না দেওয়া নিয়ে এলাকায় অসন্তোষ দানাবেধে উঠে। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এলাকাবাসীর দফায় দফায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সত্তে¡ও এস আলম গ্রুপ সেখানে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে মরিয়া হয়ে উঠে। অনেককে বাপদাদার ভিটেমাটি থেকে জোর-জবরদস্তিতে উচ্ছেদ করে।
তাছাড়া ২০১৬ ও ১৭ সালে নির্বিচারে গুলিতে নিহতদের পরিবার পরিজনদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চাকরি নিশ্চিয়তা দিয়েও কথা রাখেনি এ ব্যবসায়ী গ্রæপটি। অনেক এলাকাবাসী জমির ন্যায্য দাম পাওয়ার আশায় এখনও রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনায় ১৩২০ মেগাওয়াটের ‘এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টে’ আন্দোলনরত শ্রমিক এবং সরবরাহকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও পুলিশের সাথে ত্রিমুখী এই ভয়াবহ সংঘর্ষে পুরো এলাকায় রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকরা নানা বঞ্চনার অভিযোগ করে আসছিলেন। এ নিয়ে চলছে ধারাবাহিক আন্দোলন। বেতন ভাতাসহ ১২ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলো শ্রমিকরা। আগের দিন শুক্রবারও একই দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে গতকাল সকাল থেকে শ্রমিকরা সেখানে অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। এসময় এস আলম গ্রæপের ভাড়াকৃত কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক সরবরাহকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সাথে শ্রমিকদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এক পর্যায়ে আশপাশের গ্রাম থেকে ছুটে এসে বিক্ষুব্ধ লোকজন শ্রমিকদের সাথে যোগ দিলে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠে।
এসময় পুলিশের সাথেও সংঘর্ষ শুরু হয়। শ্রমিকরা পুলিশের প্রতি ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এসময় পুলিশ টিয়ারসেল রাবার বুলেট ও ব্যাপক গুলি বর্ষণ করে। গুলিতে ঘটনাস্থলে চারজন শ্রমিক নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চমেক হাসপাতালে আনার পর আরো একজন মারা যান। ঘটনাস্থলে নিহতরা হলেন- আহমদ রেজা (১৮), রনি হোসেন (২২), শুভ (২৪), মো. রাহাত (২৪)। আহত মো. ওায়হানকে (২৫) চমেক হাসপাতালে আনার পর তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত ১১ জনকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- হাবিব উল্লাহ (২১), মিজান (২২), মো. মুরাদ (২৫), মো. শাকিল (২৩), মো. কামরুল (২৬), মাসুম আহমদ (২৪), আমিনুল হক (২৫), মো. দিদার (২৩), ওমর (২০) ও অভি (২২)। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেছেন, বেতন-ভাতা নিয়ে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বিরোধ চলছিল। সকালে শ্রমিকরা বিক্ষোভের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কেন এমন ঘটনা তা তদন্ত করা হবে।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, উপজেলা হাসপাতাল থেকে চার জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। পরে একজন মারা গেছেন। তিনি বলেন, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় সংঘর্ষ হয়। সেখানে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। কেন এমন সংঘর্ষ তা তদন্ত করে দেখা হবে।
গÐামারা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান লেয়াকত আলী জানিয়েছেন বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে শ্রমিক সরবরাহ করে বাইরের কোম্পানি। তাদের সাথে শ্রমিকদের টাকা পয়সা নিয়ে অনেকদিন ধরেই সমস্যা চলছিলো। কয়েকদিন ধরে শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছিলো। বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে বিদেশিরা জড়িত আছেন। ঘটনার পর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
দুটি তদন্ত কমিটি
কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আলাদা ২টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ওই ঘটনায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেনকে। কমিটির অন্য দুই সদস্যের মধ্যে একজন এসপি ও একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আছেন। জেলা প্রশাসক বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তারকে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কবির আহমেদ, বিদ্যুৎ বিভাগের একজন প্রতিনিধি এবং শ্রম বিভাগের আরও এক প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে আছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।