বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : দেখলে মনে হবে খাঁটি দেশীয় জাতের গরু। আকার আকৃতি এবং রং-চঙে পুরোটাই দেশীয় গরু মনে হলেও আসলে দেশী নয়। এগুলো আসলে ভূটানী গরু। স্থানীয় ভাষায় এসব গরুকে ভূট্টি বলা হয়ে থাকে। শিং, কান, মাথা, চোয়াল, গুজ এবং রং সবকিছু দেশী গরুর সাথে মিল থাকলেও ৪টি ঠ্যাংই ছোট ছোট। সা¤প্রতিককালে এই ভূটানী গরু বা ভূট্টি প্রযুক্ত হয়েছে আমাদের দেশীয় গো-সম্পদের সাথে। তৈরী হচ্ছে কোরবানি পশু হিসেবে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এসব গরু ব্যাপকভাবে কোরবানির জন্য প্রস্তুত হবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন খামারে এসব ভূট্টি গরু এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লালন-পালন হচ্ছে। এই গরুগুলো হবে সাধারণ বাঙ্গালী পরিবারের কোরবানির জন্য সবচেয়ে উপযোগী গরু।
ভূটান থেকে আমদানি করা এসব ছোট আকৃতির গরুগুলো দেখতে খুবই সুন্দর। আকারে ছোট এবং কম খাবার খায় বলে শহরের অনেক পরিবারগুলো অনায়াসেই এসব গরু লালন-পালন করতে পারে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহরের বহুতল ভবনের ছাদেও এসব গরু লালন-পালন হয়ে থাকে। এসব ভূট্টিগরু গ্রামাঞ্চলে লালন-পালনে ব্যাপক সুবিধা ও সম্ভাবনা থাকায় ক্রমান্বয়ে তা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে।
গবাদী প্রাণী বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, দেশের গো-সম্পদ উন্নয়নে সঙ্কর জাতীয় গরুর ব্যাপক অবদান রয়েছে। দেশীয় গরুর সাথে সঙ্করায়িত হতে হতে অনেক বিদেশী গরুও এখন দেশী গরু হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে, জনপ্রিয়তাও পেয়েছে ব্যাপক। এসব গরুর বেশীরভাগই হচ্ছে বড় জাতের গরু। যেমন, ফ্রিজিয়ান, অস্ট্রেলিয়ান, জার্সি, শাহিওয়াল, হরিয়ানা, সিন্ধি, শাহিওয়াল-ফ্রিজিয়ান এবং হোলস্টাইন-ফ্রিজিয়ান ইত্যাদি। এসব সঙ্কর জাতের গরু এখন আমাদের সারা দেশেই পাওয়া যায়। সা¤প্রতিককালে আমাদের দেশীয় ও সঙ্কর জাতীয় গো-সম্পদের সাথে যুক্ত হয়েছে ছোট আকৃতির ভূটানী জাতের গরু। স্থানীয় ভাষায় এসব ভূটানী গরুকে ভূট্টি বলা হয়ে থাকে। এসব গরু বাঙ্গালী মুসলমানদের জন্য খুবই লাগসই জাতের গরু। কিন্তু পরিচিতির অভাবে এসব ভুট্টি বা ভূটানী গরু এখন তেমন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না। অথচ আমাদের দেশে এসব গরু পালনে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। চারণ ভূমি কমে যাওয়ার কারণে কাঁচা ঘাসের অভাবে আমাদের গো-সম্পদ দিন দিন কমে আসছে উত্তরবঙ্গ ছাড়া আমাদের দেশের অন্যান্য এলাকাগুলোতে গরুর সংখ্যা খুবই কম। ব্রিটিশ-বাংলা, পাক-বাংলায় যেমন অধিক সংখ্যক গরু ছিল, এখন আর তেমন গরু চোখে পড়ে না। অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে চারণ ভূমিসহ কৃষি ভূমি কমে যাওয়ায় গরুর সংখ্যাও আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে। গো-সম্পদ বৃদ্ধি করতে হলে এসব ছোট আকৃতির ভূট্টি গরু লালন-পালন খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে।
আমাদের দেশের কসাইখানাগুলোতে সাধারণত যেসব গরু জবাই হয়ে থাকে তার সবই ৩০/৩৫ কেজি ওজনের দেশীয় বকনা বাছুর। ওজনে কম, দেখতে ছোট, বিক্রি করতে ঝুঁকি না থাকায় কসাইরা এসব গরু ব্যাপকভাবে জবাই করে দেশীয় গো-সম্পদকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ ভূট্টি জাতের গরুগুলো সাধারণত দেড় দুই মণ ওজনের হয়ে থাকে। এগুলো লালন পালন করতে যেমন সুবিধা, তেমনই কসাইখানাতে জবাই করে গোশত বিক্রি করতেও অনেক সুবিধা। গবাদী প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তান শাসনামলে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সিন্দি ও শাহিওয়াল গরু তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান আজকের বাংলাদেশে আমদানি করা হয়। সেই থেকে এসব গরু সঙ্করায়িত হতে হতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর স্বাধীনতা উত্তরকালে ফ্রিজিয়ান, অস্ট্রেলিয়ান, জার্সি, হরিয়ানা, শাহিওয়াল ইত্যাদি গরু আমদানী করে সঙ্করায়ন করার পর সারা দেশে এসব গরু ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। একইভাবে ভূটান থেকে আমদানিকৃত ভূট্টিজাতের গরু সীমিত আকারে লালন-পালন করা হলেও আগামী কয়েক বছরে এ গরু ছড়িয়ে পড়বে শহর, বন্দর ও গ্রামাঞ্চলের আনাচে-কানাচে। জনপ্রিয়তাও পাবে অন্যান্য সঙ্কর জাতীয় গরুর মত। তবে ভুট্টি জাতের গরু জনপ্রিয়তা পাবে বাঙ্গালীর গরু হিসেবেই। প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলেছেন প্রকৃত পক্ষে বাংলাদেশে দেশীয় জাতের গরু বলতে কিছুই নেই। সবই বিভিন্ন জাতের গরুর সংমিশ্রণে সঙ্করায়িত হতে হতে এখন দেশীয় জাতে পরিণত হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।