Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পটিয়ায় সরকারি মৎস্য খামারের লাখ লাখ টাকা যায় সংশ্লিষ্টদের পকেটে

প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এস কে এম নুর হোসেন, পটিয়া (চট্টগ্রাম) থেকে

পটিয়ায় সরকারি মৎস্য খামারে লাখ লাখ টাকার মৎস্য উৎপাদন হলেও আয়লব্দ অধিকাংশ অর্থ সরকারি কোষাগারে যায় না। অধিকাংশ টাকা চলে যায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটে। এছাড়াও খামারের মধ্যে রক্ষিত আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, আমড়াসহ বিভিন্ন ফলজ গাছের ফল বিক্রয়ের টাকা সরকারের হিসেবের খাতায় উঠে না। এ টাকা চলে যায় কর্মচারীদের পেটে। বছরে ৫০ হাজার টাকা ফল বিক্রি হলেও এ খাতে সরকার কোনোসময় এক টাকাও পায় না। চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার চক্রশালা কমলমুন্সিরহাট সন্নিকটে চট্টগ্রাম জেলার একমাত্র সরকারি মৎস্য খামারটি অবস্থিত। এর মধ্যে খামারে রয়েছে ১ জন ব্যবস্থাপক, ১ জন টেকনিশিয়ান, ১জন অফিস সহকারী, ২ জন অতিরিক্ত কর্মচারী, ১ জন চালক। এ খামারে পুকুর রয়েছে ১২টি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১১ লক্ষ ৯ হাজার ৫শ’ টাকা মৎস্য পোনা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে রুই, কাতল, মৃগেল এ তিন প্রজাতির ১ লক্ষ ৭৫ হাজার পোনার জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয় ৩ লাখ টাকা। মনোসেক্স তেলাপিয়া ১ লক্ষ পোনার জন্য লক্ষ্যমাত্রা ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। ১ লাখ পাঙ্গাস পোনার জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। রুই, কাতল, মৃগেল, সিলভার কার্প, কার্পু, পুঁটি, গ্লাস কার্পসহ ৭ প্রজাতির মাছের ২৫০ কেজি রেণুর জন্য লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২৫ হাজার চিংড়ি পোনার জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ টাকা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১০ বছর আগে এ খামারে বছরে ১০ লাখ টাকার পোনা উৎপাদন হয়েছে। দিন দিন মাছের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে পোনার দামও বৃদ্ধি পায়। এছাড়া উৎপাদন মাত্রাও বেড়ে গেছে। যার কারণে গত ২/৩ বছরে খামারে প্রায় ১৫/২০ লাখ টাকার পোনা উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদিত পোনার সঠিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় না। যার ফলে সরকারি কোষাগারে সঠিকভাবে পোনা বিক্রির টাকা জমা হয় না। মৎস্য খামারে উৎপাদিত পোনার অধিকাংশ টাকা লুটপাট হচ্ছে। এখানে ১ জন মৎস্য বিশেষজ্ঞ ব্যবস্থাপক থাকার নিয়ম থাকলেও প্রায় সময় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে এ খামারে বিশেষজ্ঞ মৎস্য ব্যবস্থাপক নেই। গত ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুজ্জমান খামার ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ বিষয়ে তিনি জানান, ‘গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ খামারে পোনা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১০ লক্ষ টাকা। এ বছর ১১ লক্ষ ৯ হাজার ৫০০ টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তিনি আরো অভিযোগ করেন, সরকারিভাবে বিভিন্ন পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হলেও এ মাছের মূল্য তারা পান না। এছাড়া খামারের প্রায় ৭টি পুকুর অধিকাংশ ভরাট হয়ে গেছে।’ এ মৎস্য খামারের মাছ হালদা নদীর ডিম থেকে মা মাছ সৃষ্টি করা হয়। তাদের ইনজেকশন দিয়ে ডিম প্রজনন করা হয়। ফলে মাছগুলো খুব বড় আকারের হয়ে থাকে। মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ইনজেকশনে সৃষ্টি কেমিক্যাল জাতীয় মাছ আমি খাই না। তাই বাজারের মলা, ঢেলা, কই, মাগুর মাছগুলো আমাকে ক্রয় করতে হয়। মাছ অতি দ্রুত বড় হয় বলে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় এ পোনার চাহিদা রয়েছে। চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও কক্সবাজারের চকরিয়া, টেকনাফ, পার্বত্য এলাকার রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি জেলায় মাছ চাষিরা এ খামার থেকে পোনা ক্রয় করে নিয়ে যান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পটিয়ায় সরকারি মৎস্য খামারের লাখ লাখ টাকা যায় সংশ্লিষ্টদের পকেটে
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ