Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দু’পাড়ের মানুষের স্বপ্নপূরণ

উদ্বোধনের অপেক্ষা

ছাতক (সুনামগঞ্জ)উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৪ এএম

সুনামগঞ্জের ছাতকে বহুল প্রত্যাশিত সুরমা নদীর ওপর দৃশ্যমান সেতু। কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। এ হিসেবে চলতি বছরেই সেতুটির আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধনের মাধ্যমে সুরমা নদীর দু’পাড়ের মানুষের স্বপ্ন পূরণ হবে। সেতুটি উদ্বোধন হলে উত্তর সুরমার মানুষের মাঝে যোগাযোগ ক্ষেত্রে এক অভ‚তপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হবে। সীমান্তবর্তী ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা মানুষের যোগাযোগ ক্ষেত্রে সৃষ্টি হবে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। বিশেষ করে উত্তর পাড়ে অবস্থিত কয়েকটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরিসহ অসংখ্য চুন শিল্পকারখানায় উৎপাদিত মালামাল এ সেতু দিয়ে সারা দেশে পরিবহনে নতুন দিগন্তের সৃষ্টি হবে।
জানা যায়, প্রকল্পটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে বাদ দেয়ায় অনেকটাই সেতুর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। জমি অধিগ্রহণ, বাজেট স্বল্পতা, সেতুর উচ্চতাসহ বিভিন্ন জটিলতায় সেতুটির নির্মাণ কাজ বছরের পর বছর বন্ধ ছিল। দীর্ঘদিন ছাতক-দোয়ারাবাসী দেখে আসছিলেন সেতুর দু’পাড়ের পিয়ারগুলো। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ২০১০ সালে এ সেতুর অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য ৫১ কোটি টাকার একটি সংশোধিত নতুন প্রকল্প যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে অমুমোদনের জন্য পাঠায়। এ আবেদনটি বিশেষ বিবেচনায় এনে ১১২ কোটি ৯৯ লাখ ৪৯ টাকার পুণ:সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রধান কার্যালয়ে। ২০১৬ সালের জুনে মহান জাতীয় সংসদে সুরমা সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে তৎকালিন অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক দাবি জানালে ওই বছরের আগস্ট মাসে পরিকল্পিত অ্যাপ্রোচ ও নেভিগেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে সেতু নির্মাণে ১১৩ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকের সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। অনুমোদিত হওয়ার পর আশার আলো দেখে ছাতক-দোয়ারাবাসী। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জন-জেবি নামের যৌথ এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আবারও শুরু হয় সেতু নির্মাণের কাজ। ফলে দু’পাড়ের মানুষ আবারও স্বপ্ন দেখে সেতুর। এ স্বপ্ন এখন বাস্তবে রুপ নিচ্ছে। সব কিছু ঠিক থাকলে স্বপ্নের সেতুটির কাজ সমাপ্তি করে চলতি বছরেই উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে। ৪০২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ফুটপাতসহ সেতুর প্রস্থ রয়েছে ১০.৫ মিটার। চলতি ২০২১ সালের জুন-জুলাই মাসে মূল সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের। সেতুর মূল কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। করোনার কারণে চায়না থেকে যথাসময়ে সেতুর স্টিল আমদানীতে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে ২০২০ সালের জুন মাসে চায়না থেকে স্টিল আমদানি হয় এবং ওই বছরের আগস্ট থেকে সেতুর মধ্যখানে স্টিল স্ট্রাকচার স্থাপনের কাজ শুরু হয়। সেতুটি এখন দৃশ্যমান।
জানা গেছে, সেতুর অ্যাপ্রোচের জন্য ২০১৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ জেলা ডিসি অফিস থেকে জমিগুলো বুঝিয়ে দেয়া হয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। ডিসি অফিস থেকে জমিগুলো বুঝিয়ে দেয়ার পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অ্যাপ্রাচের কাজ করতে গেলে বাধা আসে জমির মালিকদের কাছ থেকে। পরে জমির মালিকরা বিনিময়ে দেড়গুণ থেকে তিনগুণ টাকা প্রাপ্তির জন্য মহামান্য সুপ্রিমকোটের হাইকোট বিভাগে একটি রিট পিটিশন দাখিল করে। এ কারণে সেতুর অ্যাপ্রোচের কাজ বন্ধ থাকে এক বছর। অবশেষে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, সওজ প্রশাসন জমির মালিকদের নিয়ে বৈঠকে বসে জটিলতা নিরসন হয়। কিন্তু সেতুর দু’পাড়ে দুজন দালান মালিক অ্যাপ্রোচ কাজে বাধা হয়ে দাড়িয়েছেন। একাধিক অংশীদারের কারণে তাদের মধ্যে জটিলতা দেখা দিয়েছে। আর এ জটিলতায় দু’পাড়ে সেতুর অ্যাপ্রোচের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেতু নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জন-জেবি’র সাব-এসিসন্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ইমতিয়াজ আহমদ সোহেল বলেন, ছাতকে সুরমা নদীর উপর মূল সেতুর কাজ প্রায় ৯৫ ভাগ শেষ হয়েছে। জুন-জুলাই এর মধ্যে সেতুর বাকি কাজ সমাপ্ত হবে বলে তিনি আশাবাদী। তিনি আরও বলেন, সেতুটি নির্মাণের ফলে যোগাযোগ ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নের মাইল ফলক হিসেবে থাকবে। সিমেন্ট ফ্যাক্টরী, চুনাপাথর কারখানার মালামাল সরবরাহ করা সহজ হবে এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সীমান্তের ঐতিহাসিক পর্যটক কেন্দ্র হকনগর বাঁশতলায় সহজে যাতায়াত করতে পারবে ভ্রমণ পিপাষুরা।
সুরমা নদীর সেতু নির্মাণের তদারকির দায়িত্বে থাকা ছাতক সওজ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, সেতু নির্মাণ ও ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ভ‚মি অধিগ্রহণে ৩২ কোটি ৮৮ লাখ, চায়না থেকে সেতুর স্টিল স্ট্রাকচার ক্রয়, আমদানি ও স্থাপনে ১৬ কোটি ৫০ লাখ, এগুলোর কাস্টম ভ্যাট ১২ কোটি, আধুনিক টোল প্লাজায় ১৯ কোটি ৪৬ লাখ, রেলওয়ের লেভেল ক্রসিং এ ১ কোটি ৩০ লাখ, ২টি আরসিসি আন্ডারপাস এবং ৮টি কালভার্ডে ৪ কোটি ২৮ লাখসহ বাকি টাকা মূল সেতু ও আড়াই কিলোমিটার সেতুর অ্যাপ্রোচ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সেতুসহ অ্যাপ্রোচের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। কিন্তু সেতুর দক্ষিণ ও উত্তর পাড়ে দুটি দালানের অংশীদার জটিলতায় অ্যাপ্রোচের কাজে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুটি নির্মাণের ফলে সুরমা নদীর দক্ষিণ পাড়ের মানুষের কোন কাজে আসবে না। সেতুর দক্ষিণ পাড়ের অ্যাপ্রোচ অংশে ছাতক-দোয়ারা ভায়া সুনামগঞ্জ সড়কের সাথে সংযোগ নেই। এখানে জিরো পয়েন্ট স্থাপিত না হলে সিলেট থেকে বিভাগীয় শহর থেকে সরাসারি ছাতক-দোয়ারা ভায়া সুনামগঞ্জ সড়কে যাতায়াতে ৫ কিলোমিটার দূরত্বের সৃষ্টি হবে। আবার ছাতক-দোয়ারা ভায়া সুনামগঞ্জ সড়কে যানবাহন নিয়ে চলতে গেলে সুরমার উত্তর পাড়ের মানুষও পড়তে হবে এ ভোগান্তিতে। সেতুর দক্ষিণ পাড়ে জিরো পয়েন্ট স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন ছাতক-প্রতাপপুর-সুনামগঞ্জ সড়কে চলাচলরত এ অঞ্চলের মানুষ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মানুষের স্বপ্নপূরণ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ