Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে নোনা পানি

ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৪ এএম

উজানে প্রবাহ হৃাস ও বৃষ্টির পরিমাণ কম থাকায় জোয়ারে সাগরের মাত্রাতিরিক্ত নোনা পানি দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের মধ্যভাগে উঠে আসছে। এতে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। ইতোমধ্যে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ত পানি ১শ’ কিলোমিটার উজানে বরিশালকে অতিক্রম করে চাঁদপুরের ভাটিতে মেঘনায় পৌঁছে গেছে। বরিশালের পাশে প্রবাহমান কির্তনখোলা নদীতে লবণাক্ততার মাত্রা স্বাভাবিকের দ্বিগুণেরও বেশি। বিশেষজ্ঞরা এটাকে স্বাভাবিক পরিবেশের জন্য অত্যন্ত দুঃসংবাদ বলে সতর্ক করেছেন। উজানে পানির প্রবাহ হ্রাসের সাথে শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টির পরিমাণ কম হবার কারণকেও দায়ী করেছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র মতে, ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে বরিশালের কির্তনখোলা নদীর পানিতে যেখানে লবণাক্ততার মাত্রা ছিল ৬১০-৬৩০ পার্সেন্ট পার মিলিয়ন-পিপিএম, সেখানে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে তা ৯১০ পিপিএম-এ পৌঁছে। ২০১৮ সালে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ’১৯ সালে লবণাক্ততার মাত্রা ছিল প্রায় ৯শ’ পিপিএম। গত বছর জানুয়ারিতেও লবণাক্ততার মাত্রা ছিল প্রায় ৯শ’ পিপিএম এর কাছে। গত ডিসেম্বরের পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে লবণাক্ততার মাত্রা বাড়তে শুরু করে। গতমাস থেকে পরিস্থিতি আরো নাজুক আকার ধারন করেছে। চলতি মাসের শুরু থেকে কির্তনখোলার পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা ১ হাজার পিপিএম অতিক্রম করেছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
নদী বিশেষজ্ঞদের মতে, পদ্মাসহ সীমান্তের ওপার থেকে প্রবাহিত ৫৪টি অভিন্ন নদ-নদীর পানির হিস্যা থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করায় উজান থেকে আমাদের সাগরমুখী প্রবাহ হ্রাস পাচ্ছে। গত কয়েক বছর থেকেই শীত বিদায়ের পরে বসন্তে দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের মধ্যাঞ্চল ও উত্তরবঙ্গে বৃষ্টিপাত কম হবার কারণেও ভাটিতে মিঠা পানির প্রবাহ হ্রাসের সুযোগে সাগরের নোনা পানি অতিমাত্রায় উজানে উঠে আসছে। গত মাসে দেশের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৮০ ভাগ কম। যা বরিশাল অঞ্চলে ৯৯.৫% ও রাজশাহী অঞ্চলে ছিল ৯৪.২% কম। বরিশাল অঞ্চলে ৫৩ মিলিমিটারের স্থলে মাত্র ০.০৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে মার্চ মাসে। গত জানুয়ারি মাসে বরিশাল অঞ্চলে কোন বৃষ্টিপাত হয়নি। আর ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল মাত্র ১ মিলিমিটার। উজানের প্রবাহ হ্রাস ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়ায় নদ-নদীতে মিঠাপানির প্রবাহে ক্রমশ ঘাটতি সৃষ্টি হওয়ায় সাগরের নোনা পানি সে স্থান পূরণ করছে।
এর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের ফসলি জমিতে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে নতুন বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। গত পূর্ণিমার ভরা জোয়ারে বরিশাল ছাড়িয়ে চাঁদপুরের ভাটিতে পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের নোনা পানি পৌঁছে যায়। মাত্রাতিরিক্ত এ নোনা পানি শুধু ফসলি জমিকেই ক্ষতিগ্রস্থ করছে না, মৎস্য ও উপকূলীয় বনজ সম্পদের জন্যও ক্রমশ হুমকি সৃষ্টি করছে। এ থেকে উত্তরনে উজানে পানির প্রবাহ বৃদ্ধির জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের কোন বিকল্প নেই বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি পরিকল্পিত বনায়নের মাধ্যমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি ও পরিবেশ সুরক্ষার দিকে নজর দেয়ারও তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদ-নদীতে নোনা পানি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ