বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মনুষ্য সমাজে ব্যবসা-বাণিজ্য করা খোদায়ী বিধান। ব্যবসার ক্ষেত্রে সততা অবলম্বন ও অসততা পরিহার করার কথা বলে দেয়া হয়েছে। ব্যবসা প্রধানত দুই প্রকারের : হালাল (বৈধ) ও হারাম (অবৈধ)। সৎ ও সততার সাথে ব্যবসা করা সব ধর্মেরই প্রধান শিক্ষা। মানব জাতির জীবিকা নির্বাহ ও ভাগ্যোন্নয়নের জন্য ব্যবসা অবলম্বন করার বিধান দেয়া হয়েছে। কিন্তু দানব জাতির ব্যবসা কেন এবং কার স্বার্থে? ইবলিশ শয়তানের পণ্য সমগ্রীর বোঝা বহনকারী গর্ধভদের দেখে হজরত ঈসা (আ.)-এর প্রশ্নের জবাবে অভিশপ্ত ইবলিশ যা বলেছিল তাতে তার ব্যবসার উদ্দেশ্য জানা যায়। সে নিজের জীবিকার জন্য অর্থাৎ নিজের ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবসা করে না, সে ব্যবসা করে তার ভক্ত-অনুসারী মানব জাতির জন্য। আর এ তথ্য জানা যায় খোদ ইবলিশ মালউনের জবানী থেকে, যা সে হজরত ঈসা (আ.)-এর সাথে সাক্ষাৎকালে তার প্রশ্নের জবাবে বলেছিল। উল্লেখ্য, ইবলিশের অভ্যাসই হচ্ছে সর্বদা মিথ্যাচার করা, কিন্তু নবীগণের সাথে এবং কখনো কখনো আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সাথে সে সত্য কথাও বলে থাকে।
বর্ণিত আছে যে, এক দিন হজরত ঈসা (আ.)-এর সাথে অভিশপ্ত ইবলিশের সাক্ষাৎ হয়। সে পণ্য বোঝাই পাঁচটি গাধা হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এটি কি বহন করে নিয়ে যাচ্ছ?’ ইবলিশ জবাবে বলল, ‘এটি ব্যবসায়িক পণ্য সামগ্রী, এগুলোর ক্রেতাদের সন্ধানে যাচ্ছি।’ অতঃপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার কাছে কি কি মাল আছে?’ ইবলিশ পাঁচটি গাধা বোঝাই তার মালের বিবরণ দিলো।
যথা : (১) এতে জুলুম-নির্যাতনে ভর্তি, এটি আমি সুলতান-বাদশাহদের নিকট বিক্রি করব। (২) এতে অহংকার (নিজেকে বড় মনে করা) ভর্তি, এটি সওদাগর (ব্যবসায়ী) জোহরিগণ খরিদ করবে। (৩) এটি হিংসা-বিদ্বেষে পরিপূর্ণ। এর ক্রেতারা হচ্ছেন উলামা। (৪) এতে খেয়ানত (আত্মসাৎ) ভর্তি,। এটি আমি ব্যবসায়ীদের নিয়োজিত কর্মকর্তাদের কাছে বিক্রি করব। (৫) এতে রয়েছে ধোকাবাজি, প্রতারণা, যা আমি নারীদের নিকট বিক্রি করব।
ইবলিশের ব্যবসা কত প্রকার ও কি কি এবং তার পণ্য সামগ্রীর ক্রেতা কোন কোন শ্রেণির লোক, তার সঠিক পরিসংখ্যান ইবলিশের কাছেই রয়েছে। তার পণ্যবাহী পাঁচ গাধার কথা সে হজরত ঈসা (আ.) এর নিকট ব্যক্ত করেছে। কিন্তু তিনি এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেছেন কি না তা জানা যায়নি।
বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, ইবলিশ আদমযুগ হতে মানব-মানবীকে তার ব্যবসাকর্মে অজান্তে নানাভাবে তার কথিত পণ্যসমূহ সরবরাহ করে আসছে। হজরত ঈসা (আ.)-এর সময় পণ্য বহনের জন্য সম্ভবত: গর্ধভের প্রচলন থাকায় সে তার পণ্যসামগ্রী গর্ধভে বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছিল, নতুবা তার বাহনের অভাব তো ছিল না। তার ব্যবসা সংক্রান্ত স্বীকারোক্তি আরো নানাভাবে জানা যায়। যুগের পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে ইবলিশের জুড়ি নেই।
অপরাধ-পাপাচারের জন্মদাতা মহা পাপিষ্ট অভিশপ্ত ইবলিশ বর্ণিত পাঁচ শ্রেণির ক্রেতার কাছে যে সব পণ্য সামগ্রী বিক্রির নাম উল্লেখিত হয়েছে সেগুলো বিশ্লেষণ করা হলে হাজার গুণে বেড়ে যাবে এবং ক্রেতা শ্রেণিও বের হয়ে আসবে অনেক। আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের এ যুগে ইবলিশের কলাকৌশলেরও অভাবনীয় উন্নতি সাধিত হয়েছে এবং তার আচারিত পাপাচারের সয়লাবে সারা বিশ্ব ডুবন্ত, যা বিশ্বময় চলমান খোদায়ী গজব করোনার ন্যায় হাজারো শাখা মেলে গোটা বিশ্বে বিস্তার লাভ করে চলেছে। সুতরাং, ইবলিশের পণ্য ক্রয় হতে বিরত থাকার বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।