Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটে পাঞ্জাবি-টুপির কারণে দুই প্রভাষককে অব্যাহতি!

প্রতিবাদে মাঠে শিক্ষার্থীরা : চাকরিচ্যুত নয়, পোশাক বিধি মানতে না পারলে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিতে পারবেন : কলেজ কর্তৃপক্ষ

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

পাঞ্জাবি-টুপির কারণে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে সিলেট জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই মেধাবী প্রভাষককে। দীর্ঘ ১২ বছর চাকরির পর অব্যাহতির সাথে সাথে তাদের বেতন ভাতাও বন্ধ করা হয়েছে। মৌখিকভাবে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন সিলেট জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। ব্যক্তি-স্বাধীনতার ওপর এমন অযাচিত আক্রমণে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে সর্বত্র। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানের নীতিমালার মধ্য থেকেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বা চাকরিচ্যুত করা হয়নি। পোশাক বিধি মানতে না পারলে তারা স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিতে পারবেন এমনটাই বলা হয়েছে।

এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ হয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদে গতকাল (শনিবার) সকালে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে তারা। কলেজ এলাকায় সিলেট-তামাবিল সড়কে সমবেত হয়ে এ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে প্রায় ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক, ব্যক্তি স্বাধীনতা পরিপন্থীসহ কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারি মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তুলে ধরে অবিলম্বে দুই শিক্ষকের নিকট ক্ষমা চাওয়াসহ অব্যাহতি প্রত্যাহার পূর্বক ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
তারা বলেন, পাঞ্জাবি-পাজামা-টুপি উপমহাদেশীয় সংস্কৃতির অংশ, সেই সংস্কৃতিকে ধর্মীয় বিবেচনায় না নিয়ে, ব্যক্তি স্বাধীনতার বিচারে দেখতে হবে। প্রাশ্চাত্যের পোশাক পরতে বাধ্য করবেন কোন ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ, এমন প্রশ্নও তাদের। দীর্ঘ ১ ঘণ্টা এ মানববন্ধন পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, এ দুই প্রভাষককে অব্যাহতি দেয়া হয়নি। বরং প্রতিষ্ঠানের পোশাক বিধি মানতে না পারলে তারা স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিতে পারবেন এমনটাই বলা হয়েছিল। গতকাল শনিবার দুপুরে কলেজের সামনে মানববন্ধনকালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এ কথা বলেন কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল আরিফুল ইসলাম রেজা। কলেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তিনি বলেন, অনলাইনে যে বিষয়টি ভাইরাল হয়েছে তা সত্যি নয়। প্রভাষক আব্দুল হালিম ও মুজাহিদুল ইসলামের বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বা তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়নি। গভর্নিং বডির ৫২তম মিটিংয়ে তাদেরকে ডেকে প্রতিষ্ঠানের পোশাক বিধি মানার জন্য কঠোরভাবে বলা হয় এবং ৩১ মার্চের আগে তাদেরকে ৩ বার শোকজ পাঠানো হয়। কিন্তু বার বারই তারা দু’জন প্রতিষ্ঠানের পোশাক বিধি মানতে অনীহা প্রকাশ করেন। সর্বশেষ ৩১ মার্চ গভর্নিং বডির মিটিংয়ে তাদেরকে ডেকে বলা হয়- প্রতিষ্ঠানের পোশাক বিধি না মানলে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিতে পারেন। তবে তাদেরকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি। এটাই তাদের বিষয়ে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ কর্তৃপক্ষের। তবে ভাইস প্রিন্সিপাল আরিফুল ইসলাম রেজার এমন বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেননি বিক্ষোভকারীরা। তাই তারা দিনভর কলেজ গেটের সামনে অবস্থান করে বিক্ষোভ চালিয়ে যান। পরে সাড়ে ৩টার দিকে কলেজ কর্তৃপক্ষ আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে ৬ শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে করেন মতবিনিময়। এসময় আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয় প্রয়োজনে কলেজের পোশাক বিধি পরিবর্তন করে প্রভাষক আব্দুল হালিম ও মুজাহিদুল ইসলামকে স্ব-স্ব স্থানে পুনর্বহাল করতে হবে ।
এ মর্মে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে আজ সকালে একটি লিখিত আবেদন ও সুপারিশ কলেজ কর্তৃপক্ষ বরাবরে দাখিল করা হবে। দাবিগুলো আদায় না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তারা। মতবিনিময়কালে আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। এসময় জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল লে. কর্নেল মো. কুদ্দুসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন ।
অপর একটি সূত্র জানায়, চাকরিতে যোগদানকালেই এ দুই শিক্ষক পোশাকের ব্যাপারে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি আদায় করেছিলেন। সেকারণে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে চাকরি করলেও পোশাক ও টুপি নিয়ে কোনো বাধা আসেনি। সম্প্রতি জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ম্যাগাজিন ‘প্রোজ্জ্বল’-এর ছবি তোলার জন্য শিক্ষকদের পাঞ্জাবি-টুপি পরার পরিবর্তে শার্ট প্যান্ট পরতে আদেশ দেন প্রিন্সিপাল লে. কর্নেল কুদ্দুছুর রহমান পিএসসি। সেই আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানান সিনিয়র প্রভাষক মোহাম্মদ আব্দুল হালিম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম। এ আদেশ অমান্য করায় স্কুলে আসতে বারণসহ বেতন ভাতা বন্ধের সিদ্ধান্ত জানানো হয় গত ৩১ মার্চ রাতে। প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রিন্সিপাল মৌখিকভাবে ক্যাম্পাসে আসতে নিষেধসহ একই সাথে বেতন ভাতা বন্ধের বিষয়টি অবহিত করেন ।
প্রভাষক আবদুল হালিম জানান, চাকরিতে যোগদানের সময় লিখিতভাবে পাঞ্জাবি-পাজামার টুপি পরার অনুমতি নিয়েছিলাম। গত ১২ বছর ধরে এই পোশাক পরেই চাকরি করছি। গতবছর প্রিন্সিপাল (সোহেল উদ্দিন পাঠান) স্যার প্রতিষ্ঠানের নীতিমালার কথা বলে শার্ট প্যান্ট পরে আসতে চাপ দিতে থাকেন । কিন্তু সেই চাপের কাছে নতি স্বীকার করিনি। তবে সে কারণে ৪/৫ বার শোকজের মুখে পড়তে হয়েছে। স¤প্রতি কলেজ ম্যাগাজিনে ছবি তোলার দিন একই প্রসঙ্গে চাপ প্রয়োগ করলে সেই নির্দেশ মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি। অবশেষে গত ৩১ মার্চ রাতে আমাকে মৌখিকভাবে জানানো হয় প্রতিষ্ঠানে না আসার জন্য। সেই সাথে আমার বেতন ভাতাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ।



 

Show all comments
  • MD Sayem ৪ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৫৫ এএম says : 0
    আপনাদের কলেজ কি তাহলে সাম্প্রদায়িক ??
    Total Reply(0) Reply
  • Jubayur Rahman Mishu ৪ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৫৬ এএম says : 0
    পাঞ্জাবি-টুপিতে সমস্যা কোথায়?
    Total Reply(0) Reply
  • হাদী উজ্জামান ৪ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৫৭ এএম says : 0
    সবার চুলকানি শুধু ইসলাম নিয়ে।
    Total Reply(0) Reply
  • রুকাইয়া খাতুন ৪ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৫৭ এএম says : 0
    এই ঘটনার তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Nannu chowhan ৪ এপ্রিল, ২০২১, ৭:২৯ এএম says : 0
    Eai deshe islam birodhider ebong iskoner karjjo kolape mone hochse mosolmanra eai deshe shongkha loghishto,ebong eai shob karjjokolaper prorochonai odur vobishote ki eai deshke ram rajje porinoto korar porikolpona kora hochse ?
    Total Reply(0) Reply
  • JESMIN ANOWARA ৪ এপ্রিল, ২০২১, ৯:৩৭ এএম says : 0
    All member of governing body are .....
    Total Reply(0) Reply
  • Khaled ৪ এপ্রিল, ২০২১, ১০:১৫ এএম says : 0
    তারা কি এদেশকে ফ্রান্স বানাতে চায়? ৩৬০ আউলিয়ার শহরে বসে কলেজ কর্তৃপক্ষের এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিলেট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ