গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস মাহে রমজান সমাগত। রহমত বরকত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজানের হক আদায়ের জন্য প্রাক-প্রস্তুতির কোনো বিকল্প নেই। নিজে প্রস্তুতি নেয়ার পাশাপাশি পাড়া-প্রতিবেশীর মাঝে রমজানের গুরুত্ব, ফজিলত ও পবিত্রতা রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখাও জরুরি। আজ বিভিন্ন মসজিদে জুমার খুৎবা পূর্বে পেশ ইমামরা এসব কথা বলেন। অধিকাংশ মসজিদেই পেশ ইমাম ও খতিবরা রমজানের গুরুত্ব ও ফজিলত সর্ম্পকে বক্তব্য রাখেন এবং করোনা মহামারি থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহপাকের কাছে পানাহ চান। নগরীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম আজ জুমার খুৎবা পূর্বে সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলেন, পবিত কোরআন নাজিলের মাস মাহে রমজান সমাগত। পবিত্র মাহে রমজানের মতো অতীব গুরুত্বপূর্ণ মাসের হক আদায়ের জন্য প্রাক-প্রস্তুতির কোনো বিকল্প নেই। কারণ ইহকালীন ও পরকালীন যেকোনো কাজেরই প্রস্তুতি নিতে হয়। নিজে প্রস্তুতি নেয়ার পাশাপাশি পাড়া-প্রতিবেশীর মাঝে রমজানের গুরুত্ব, ফজিলত ও পবিত্রতা রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখাও জরুরি। রমজান শুরুর আগেই সবার মাঝে এ অনুভূতি জাগিয়ে তোলা যে, সামনে রহমত বরকত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস সমাগত। তাই এ মাস জুড়ে নিজেকে সব ধরনের গ্লানিমুক্ত রাখতে এখনই সব প্রয়োজন সম্পন্ন করা জরুরি। আল্লাহপাকের নৈকট্য অর্জনের জন্য এখনই সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে হবে।
মাহে রমজানে সর্ব ধরনের গুনাহ মুক্ত থেকে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীতে মগ্ন থাকতে হবে। পেশ ইমাম বলেন, ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যরে পরিবর্তে নির্মমতার চর্চাই বেশি হয়। কেউ কেউ ইবাদত বন্দেগী ছেড়ে আল্লাহকে ভুলে দুনিয়ার দিকে ধাবিত হয়। আবার কেউ মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রবসামগ্রী গুদামজাত করে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে তুলে ৷ অথচ এদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
হযরত মা’মার (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জনগণের জীবিকা সঙ্কীর্ণ করে যে ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করবে সে বড় অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে। আর জেনে রাখ! সে গোনাহগার সাব্যস্ত হবে। (মুসলিম ও তিরমিজি)। প্রিয়নবী (সা.) আরও বলেন, ‘মুজরিম তথা অপরাধীর পক্ষেই সম্ভব পণ্য মজুদ করে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করা।’ (মুসলিম)।
পেশ ইমাম বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করে রাখবে, মানুষকে কষ্ট দেবে, সে এ সম্পদ দান করে দিলেও তার গোনাহ মাফের জন্য যথেষ্ট হবে না। (মেশকাত)।
ঢাকার মোহাম্মদপুর লালমাটিয়া মসজিদ বায়তুল হারামের খতিব মাওলানা কাজী আবু হোরায়রা আজ জুমার খুৎবা পূর্বে বলেন, পবিত্র মাহে রমজান আমাদের দ্বারে উপস্থিত। এক মহাসন্মান ও মর্যাদার মাস। এ মাসকেই আল্লাহতায়ালা বেছে নিয়েছেন মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে। কোরআন নাজিলের কারণেই এ মাসের সীমাহীন মর্যাদা বেড়ে গিয়েছে। ইংরেজিতে বলা হয় "ইরম সধহ ঃধষশ ধষধিুং নরম" অর্থাৎ মহানজনের কথাও মহান। যেহেতু কোরআান আল্লাহ তায়ালার কথা বা কালাম সেজন্য কোরআনের ছোঁয়া যেখানে লেগেছে তাও মহান হয়ে গিয়েছে। যেমন মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফে পবিত্র কোরআন নাজিল হওয়ায় দু'স্থানেরই পৃথিবীতে মর্যাদা সবচেয়ে বেশী। আর কোরআন সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর উপর নাজিল হওয়ার কারণও তাই। রাসুল (সা.) মাহে রমজানের প্রাক্কালে সব সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিতেন। এ ভাষণের উদ্দেশ্য থাকতো মাহে রমজানের গুরুত্ব দুনিয়ার মানুষকে বুঝানোর জন্য। হযরত আলী (রা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা যদি উম্মাতে মুহাম্মদিকে দুটি নেয়ামত না দিতেন তাহলে এই উম্মাতের নাজাত পাওয়া কঠিন হয়ে যেতো। সে দু'টি হলো মাহে রমজান ও সূরা ইখলাস।
এ মাস দিয়েছেন আল্লাহ উম্মাতে মুহাম্মদিকে গুনাহ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য। কিন্ত তা অর্জন করার জন্য যে মহা পরিকল্পনার দরকার তা যদি একজন মুমিন না জানে তাহলে ঐ ফসল তারা তুলতে সক্ষম হবেন না।
পেশ ইমাম কতিপয় প্রস্তুতির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, মানসিক প্রস্তুতি নেয়া, রমজানের আয়-ব্যয়ের হিসাব করে হালাল বস্তুুর সাহরীও ইফতারের জন্য প্রস্তুতি নেয়া, কাজের বোঝা হালকা করে ইবাদতমুখী হওয়া,কথা ও কাজে কাউকে কষ্ট না দেয়া, অধীনস্থদের কাজের বোঝা কমিয়ে দেয়া, মিথ্যা, প্রতারণা, মানুষকে কষ্ট দেয়া ইত্যাদির মত সব হারাম কাজ বর্জন করা, দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করার মত অপরাধ থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি।
এভাবে সাধ্যমত মানুষের কল্যাণের মনোভাব ও পরিকল্পনা নিয়ে এবং মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট রমজানের সকল রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের তৌফিক চাইতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে রমজানকে সন্মানের সাথে স্বাগত জানানোর তৌফিক দান করুন। আমীন!
দিনাজপুর শহরস্থ গোর-এ-শহীদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রেজাউল করিম আজ জুমার খুৎবা পূর্বে বলেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার যিনি মানুষ সৃষ্টি করে কোরআনুল কারিম নামক ঐশী গ্রন্থ মানুষের জীবন ব্যবস্থার জন্য রমজান মাসে প্রেরণ করেছেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফযিলতে ভরপুর মমিন মুসলমান এই মাসেই সিয়াম ব্রত পালন করে মুত্তাকী হওয়ার অপূর্ব সুযোগ লাভ করেন। অনর্থক কাজকর্ম অসার বাক্য পরিহার করে অন্তরকে পাপ পঙ্কিলতা থেকে বিরত রেখে শুধুই এবাদতে মগ্ন থাকার মাস। হযরত আবু হোরায়রা (রাদি.) তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আল্লাহ তায়ালা বলেন, বনি আদম এর সমস্ত আমল তার জন্য তবে রোজা তা কেবল আমারই জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দিব। (মুসলিম শরীফ)। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন নিশ্চয়ই জান্নাতে একটি দরজা আছে যার নাম রাইয়ান কেয়ামতের দিন রোজাদাররা সে দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে তাছড়া অন্য কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না (বুখারী শরিফ)। রোজা হলো মুত্তাকী হওয়ার অন্যতম উপায়। সূরা বাকারায় আল্লাহ তা'য়ালা ইরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে রমজানের মর্যাদাপূর্ণ রোজা পালন এবং সংযমী হওয়ার মাধ্যমে কবুল করুন। আমীন!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।