বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বিশ্বের প্রথম মানব ও প্রথম নবী হযরত আদম ছফীউল্যাহ (আ.) হতে শুরু করে আখেরী নবী হযরত মোহাম্মাদ মুস্তাফা আহমাদ মুজতাবা (সা.) পর্যন্ত সকল নবী ও রাসূলগণের এবং তাদের উম্মতগণের পরম ও চরম পবিত্র এবাদতের স্থান হলো মাসজিদ। মাসজিদ শব্দের অর্থ হলো সেজদাহ্ স্থান, আরাধনার স্থান, ভূমিতে মস্তক স্থাপন করে প্রনিপাত করার স্থান। পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহের মাঝে মাসজিদবিষয়ক দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়।
সর্বশেষ আসমানী কিতাব কুরআনুল কারীম গভীর মনোযোগের সাথে অধ্যয়ন করলে দেখা যায় যে, আল কুরআনে ‘মাসজিদ’ শব্দটি এক বচনে মাসজিদুন ও মাসজিদিন রূপে ২০ বার ব্যবহৃত হয়েছে। আর মাসজিদান রূপে দুইবার ব্যবহৃত হয়েছে। একুনে এক বচনে মাসজিদ শব্দটি বাইশ বার আল কুরআনে এসেছে। যথা- ২ নং সূরা বাকারাহ-এর ১৪৪, ১৪৯, ১৫০, ১৯১, ১৯৬ ও ২১৭ নং আয়াতে। আর ৫ নং সূরা মায়েদাহ-এর ২ নং আয়াতে। ৭ নং সূরা আ’রাফ-এর ২৯ ও ৩১ নং আয়াতে। ৮ নং সূরা আনফাল-এর ৩৪ নং আয়াতে।
৯ নং সূরা তাওবাহ-এর ৭, ১৯, ২৮, ১০৮ নং আয়াতে। ১৭ নং সূরা বনী ইসরাইলের ১ ও ৭ নং আয়াতে। ২২ নং সূরা হজ্জ-এর ২২ নং আয়াত। ৪৮ নং সূরা কাতহ-এর ২৫ ও ২৭ নং আয়াতে। তবে লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে এই যে, ১৭ নং সূরা বনী ইসরাঈলের ১ নং আয়াতে মাসজিদ শব্দটি দুইবার এসেছে। আর একবচনে মাসজিদান রূপে শব্দটি ৯ নং সূরা তাওবাহ-এর ১০৭ নং আয়াতে এবং ১৭ নং সূরা কাহফ-এর ২১ নং আয়াতে এসেছে।
আরো লক্ষ করা যায় যে, মাসজিদ শব্দের বহু বচন ‘মাসাজিদ’ শব্দটি আল কুরআনে ছয়বার এসেছে। ২ নং সূরা বাকারাহ-এর ১১৪ ও ১৮৭ নং আয়াতে। ৯ নং সূরা তাওবাহ-এর ১৭ ও ১৮ নং আয়াতে। ২২ নং সূরা হজ্জ-এর ৪০ নং আয়াতে। ৭২ নং সূরা জিন্ন-এর ১৮ নং আয়াতে। সুতরাং একবচন ও বহুবচনে মাসজিদ শব্দটির ব্যবহার আল কুরআনে ২৮ বার লক্ষ করা যায়। এই ২৮ সংখ্যাটির একক (২+৮)=১০। আর ১০-এর একক (১+০)-১ অর্থাৎ এক আল্লাহ। এ জন্যই মাসজিদকে আল্লাহর ঘর বলা হয়ে থাকে।
মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত মাসজিদসমূহকে ‘নিজের’ বলে ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয়ই মাসজিদসমূহ আল্লাহর জন্য, এতে আল্লাহর সাথে অন্য কারো আরাধনা তোমরা করো না। (সূরা জিন্ন : আয়াত ১৮)। আর যারা মাসজিদ নির্মাণ করে, আবাদ করে, তাদের স্বরূপ আল কুরআনে বিবৃত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : অবশ্যই ঐ সকল লোক আল্লাহর মাসজিদসমূহ নির্মাণ ও আবাদ করে যারা আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে এবং কিয়ামতের দিনের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে। (সূরা তাওবাহ : আয়াত ১৮)। আর যারা মাসজিদ বিদ্বেষী, যারা মাসজিদে নামাজ আদায় ও যিকির আযকারে বিঘ্ন সৃষ্টি করে, মাসজিদ ধ্বংস করে ও মাসজিদ বিরাম করার অপতৎপরতায় লিপ্ত, তাদের স্বরূপ তুলে ধরে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : তারাই হচ্ছে কাফির শ্রেণীভুক্ত যারা তোমাদের মাসজিদুল হারামে প্রবেশে বাধা প্রদান করে। (সূরা ফাতহ : আয়াত ২৫)। এই একই নির্দেশনা সূরা হজ্জের ২৫ নং আয়াতেও ধ্বনিত হয়েছে। অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহর পথে বাধা প্রদান করা, আল্লাহর সাথে কুফরী করা ও মাসজিদুল হারামকে ধ্বংস করাই তাদের একান্ত কামনা। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২১৭)।
সুতরাং উল্লিখিত আয়াতসমূহের অর্থ ও মর্মের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য হলো মাসজিদ নির্মাণ করা ও আবাদ করা। আর অবিশ্বাসী কাফেরদের স্বভাব হলো, মাসজিদে বিঘ্ন সৃষ্টি করা ও মাসজিদ ধ্বংস করা। এহেন অবস্থায় মহান আল্লাহপাক মুমিনগণকে অশ্বস্থ করেছেন এবং এই শুভ সংবাদ প্রদান করেছেন যে, অবিশ্বাসী কাফেরদের আচরণে তোমরা দুঃখ করো না। আমি তোমাদের মাসজিদ নির্মাণ ও আবাদের সুযোগ করে দেবো। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : অবশ্যই আল্লাহপাক স্বীয় রাসূলের স্বপ্নকে সত্য প্রতিপন্ন করে দেখাবেন, আল্লাহর ইচ্ছায় অবশ্যই তোমরা নিরাপদে মাসজিদে প্রবেশ করবে। তোমাদের কেউ মাথা মুন্ডন করে, কেউবা মাথার চুল কেটে। কোনো শঙ্কা থাকবে না। তিনি যা জানেন, তোমরা তা জান না। সুতরাং তিনি অচিরেই আসন্ন বিজয় দান করবেন। (সূরা ফাতহ : আয়াত ২৮)। এই আয়াতে কারীমায় স্পষ্টত: বলে দেয়া হয়েছে যে, অচিরেই মাসজিদ নির্মাণ পুনর্নির্মাণ ও আবাদ করার মাধ্যমে বিশ্বময় মুমিন বান্দাহগণ নিঃশঙ্কচিত্তে মাসজিদে আরাধনা করবেন। এতে কোনোই সন্দেহ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।