Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শবে বরাতে কী আমল করব

মুফতি আব্দুল হামিদ | প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০২১, ১২:০২ এএম

শাবান মাস হলো বিশেষ মর্যাদাবান। মোবারক মাহে রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে এ মাসটি। রমজানের প্রস্তুতির জন্য এ মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাসূল (সা.) এ মাসে বেশি বেশি নফল ইবাদত করতেন। অন্যান্য মাসের চেয়ে এ মাসে নফল রোজা বেশি রাখতেন। হযরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) বলেছেন- ‘আমি রাসূল (সা.)-কে রমজান ব্যতীত অন্য কোনো মাসে পূর্ণ এক মাস রোজা রাখতে দেখিনি। কিন্তু তিনি শাবান মাসে সবচেয়ে বেশি নফল রোজা রেখেছেন।’ (সহি মুসলিম)।

এ মাসের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল (সা.) বলেছেন- ‘রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস এবং রমজান হলো উম্মতের মাস। রাসূল (সা.) রজব, শাবান মাসের অত্যধিক গুরুত্ব ও তাৎপর্যের প্রতি লক্ষ রেখে ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শা’বান, ওয়া বাল্লিগনা রামাদান’-এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেন এবং উম্মতকে পড়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। যার অর্থ হচ্ছে- ‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে রজব ও শাবানের সকল বরকত দান করুন এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ এ মাসে রয়েছে বিশেষ ফজিলতময় শবে বরাত।

বিভিন্ন হাদিসে শবে বরাতের বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হযরত আয়শা (রা.) বর্ণনা করেন- কোনো এক শাবানের অর্ধরাতে রাসূল (সা.)-কে বিছানায় পাওয়া যাচ্ছিল না। খুঁজে দেখা গেল তিনি জান্নাতুল বাকীতে কবর জিয়ারত করছেন। (সহি মুসলিম)।

আরেক হাদিসে হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেছেন, যখন অর্ধ শাবানের রাত আসে তখন তোমরা রাত জেগে ইবাদত করো এবং পরের দিনটিতে রোজা রাখ। কেননা এ রাতে আল্লাহ তায়ালা সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। কোনো রিজিক প্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দান করব। কোনো বিপদগ্রস্ত আছে কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করব। আর সুবহে সাদিক পর্যন্ত এ ডাক অব্যাহত থাকে। (ইবনে মাজাহ)।

কেউ কেউ শবে বরাত সম্পর্কিত কিছু হাদিসকে দুর্বল বলে একেবারেই অস্বীকার করে ফেলেন। এটা মোটেই উচিত হবে না। কারণ, একই বিষয়ে একাধিক হাদিস বর্ণিত হলে এর গ্রহণযোগ্যতায় আর কোনো প্রশ্ন থাকে না। ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনায় শবে বরাতের বরকত ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। ঢালাওভাবে সবগুলো হাদিসকে দুর্বল বলে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। তা ছাড়া হাদিস শাস্ত্রের মূলনীতি অনুযায়ী ফজিলতের হাদিসগুলো দুর্বল হলেও পালনযোগ্য।

মুসলিম উম্মাহর তিনটি স্বর্ণোজ্জ্বল যুগ তথা সাহাবা, তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনের যুগেও এ রাতের ফজিলত থেকে উপকৃত হওয়ার বিশেষ গতি ও গুরুত্ব ছিল। সেই যুগের মানুষেরাও এই রাতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ইবাদত-বন্দেগি করেছেন। এ রাতটি বিশেষ ফজিলতময় ও গুরুত্ববহ। তাই এ রাতে দীর্ঘক্ষণ জেগে থাকা ও ইবাদত করা সওয়াবের অছিলা হিসেবে গণ্য হবে নিঃসন্দেহে।

শবে বরাত বিশেষ ফজিলতময় হওয়ায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হন। নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ পাঠ, জিকির-আজকার, তাওবা-ইস্তেগফার করে নিজেদের পাপ-পঙ্কিলতা থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করেন এবং তাদের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করেন।

অধিক নফল নামাজ পড়া, কুরআন তেলাওয়াত করা, তাসবিহ পড়া, দোয়া করা; এসব ইবাদত এই রাতে করা যায়। কোনো কোনো হাদিসের আলোকে শাবান মাসের পনেরো তারিখ অর্থাৎ, বরাত রজনীর পরের দিন নফল রোজা রাখা অনেক সওয়াবের কাজ।

এই রাতে আরেকটি বিশেষ আমল রয়েছে, যা একটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তা হলো, রাসূল (সা.) এই রাতে একবার জান্নাতুল বাকীতে গিয়েছিলেন। যেহেতু রাসূল (সা.) জান্নাতুল বাকীতে গিয়েছিলেন এই রাতে, তাই মুসলমানরাও এই রাতে কবরস্থানে যাওয়ার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। নবী (সা.) থেকে যে কাজটি যেভাবে এবং যে স্তরে প্রমাণিত, সেটাকে সে স্তরে রাখাই বাঞ্ছনীয়। সেই সীমারেখা অতিক্রম করা কিছুতেই উচিত নয়। এই রাতের বিশেষ কোনো ইবাদত ও ইবাদতের বিশেষ কোনো নিয়ম নেই। নেই নামাজের কোনো নির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যা, নেই ভিন্ন কোনো পদ্ধতি। এই রাতে যেসব ইবাদত করা হবে সবই নফল ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। আর নফল ইবাদত নীরবে আপন আপন ঘরে একাগ্রচিত্তে করা উত্তম।

এসব ইবাদতের জন্য কোনো আনুষ্ঠানিকতা ব্যতীত মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু গতবারের ন্যায় এবারও পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় কবরস্থান ও মসজিদে না যাওয়াটাই বেশি সওয়াবের কাজ হবে বলে আশা করা যায়। তাই মৃত আত্মীয়-স্বজন ও মুসলিম মরহুম-মরহুমাদের জন্য ঘরে বসেই দোয়া করা উত্তম হবে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীতে আবারও করোনা ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। এবারের শবে বরাতে আমাদের আল্লাহর কাছে চাওয়া হোক, আল্লাহ যেন সবাইকে করোনা নামক এই মহামারি থেকে রক্ষা করেন। আমীন!



 

Show all comments
  • খোকন ২৯ মার্চ, ২০২১, ৩:৩৫ এএম says : 0
    অনেক সুন্দর লিখেছেন ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • খোকন ২৯ মার্চ, ২০২১, ৩:৩৬ এএম says : 0
    ধন্যবাদ আনেক সুন্দর লিখেছেন
    Total Reply(0) Reply
  • ইব্রাহিম খলিল ২৯ মার্চ, ২০২১, ৫:১০ এএম says : 0
    নাফরমানরা কোন সুত্রে বিদাত বলে শবেবরাতকে।
    Total Reply(0) Reply
  • saddam ২৯ মার্চ, ২০২১, ৫:২২ এএম says : 0
    ভাই হাদীসগুলো ভালভাবে যাচাই করে দেইখেন,শবে বরাত নিয়ে আলেমদের ভিতরে অনেক মতভেদ আছে,আমরা যদি একটু কষ্ট করে শবে বরাত সম্পর্কে পড়াশোনা করি তাহলে ইনশাআল্লাহ আমরা সঠিক টা জানতে পারবো |ধন্যবাদ
    Total Reply(1) Reply
    • Moyeenuddin ২৯ মার্চ, ২০২১, ১:৫৩ পিএম says : 0
      আপনি যাচাই বাছাই ছাড়াই মন্তব্য করতে আসছেন
  • রফিকুল ইসলাম ২৯ মার্চ, ২০২১, ৬:০৪ এএম says : 0
    মহান আল্লাহ আমাদের বিশুদ্ধ আমল করার তৌফিক দিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Belal ২৯ মার্চ, ২০২১, ১০:৪৩ এএম says : 0
    আমীন
    Total Reply(0) Reply
  • আরিফুল হক ২৯ মার্চ, ২০২১, ১০:৫৫ এএম says : 0
    সুন্দর
    Total Reply(0) Reply
  • jannat ali ২৯ মার্চ, ২০২১, ১১:১৭ এএম says : 0
    শবে বরাত আছে থাকবে কিয়ামত পযন্ত এখানে যাহা কিছু লিখছে সব সঠিক আল্লাহ পাক আজকে পবিএ এই শবে বরাতের রাতে আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করৃন। আমীন।
    Total Reply(0) Reply
  • jannat ali ২৯ মার্চ, ২০২১, ১১:১৯ এএম says : 1
    শবে বরাত আছে এইটাই সত্য
    Total Reply(0) Reply
  • Azizul Haque ২৯ মার্চ, ২০২১, ১১:৩৫ এএম says : 0
    written good sobe borat
    Total Reply(0) Reply
  • Moyeenuddin ২৯ মার্চ, ২০২১, ১:৪৯ পিএম says : 0
    আজকের রাতে সকলেই শহীদ ভাইদের জন্য দোয়া করুণ।
    Total Reply(0) Reply
  • নাইম ২৯ মার্চ, ২০২১, ২:০৪ পিএম says : 0
    শবেবরাতের হাদিস নিয়ে বিতর্ক আছে।যেহেতু লেখক একজন মুফতি, পর্যাপ্ত রেফারেন্স সহকারে লিখলে ভাল হত। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথ দান করুন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন