Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

উৎপাদন বাড়লেও মিটছে না ভোজ্য তেলের চাহিদা

দক্ষিণাঞ্চলে সয়াবিন ও সূর্যমুখীর আবাদ

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এবার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে তেলবীজ সয়াবিন ও সূর্যমুখীর আবাদ হলেও তা ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে কোন অবদান রাখছে না। গত কয়েক বছর ধরে সরকার দেশে সূর্যমুখী ও সয়াবিনের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করলেও এসব তেলবীজ বিপণনের সুষ্ঠু কোন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও এসব তেলবীজ বিভিন্ন পোল্ট্রি ফিড মিলের ফড়িয়ারা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে এসব তেলবীজ মানবিক প্রয়োজনের পরিবর্তে হাঁস-মুরগির খাবারের উপকরণ হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে। অথচ বিপুল বৈদেশিক মুুদ্রা ব্যয় করে ভোজ্য তেল আমদানি হচ্ছে। দেশে ভোজ্য তেলের বাৎসারিক চাহিদা প্রায় ৩০ লাখ টনের ৮০ ভাগই আমদানি নির্ভর। চলতি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে সয়াবিনসহ বিভিন্ন ধরনের তেলবীজ আবাদ হয়েছে প্রায় ৮৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে শুধু সয়াবিনেরই আবাদ হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৯৫ হেক্টরে। যা থেকে প্রায় পৌঁনে ২ লাখ টন তেলবীজ উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে। এছাড়াও প্রায় ৫ হাজার ৩২৫ হেক্টরে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ১২৬%। কিন্তু এ অঞ্চলে উৎপাদিত সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলবীজ ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে কোন ভ‚মিকা রাখছে না। বিপণন ও তেল উৎপাদনের কারিগরি সুবিধার অভাবে বিপুল সম্ভবনাময় সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলবীজের আবাদ ও উৎপাদনেও কাঙ্খিত অগ্রগতি হচ্ছে না।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, সয়াবিন ও সূর্যমূখী তেল জনস্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট উপকারী। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, সয়াবিনে ৪০-৪৫% আমিষ এবং ১৯-২২% পর্যন্ত তেল থাকে। যেকোন ডাল বা শুটি জাতীয় শস্যের তুলনায় সয়াবিনে আমিষের পরিমাণ বেশি। অথচ দাম কম। অপরদিকে সূর্যমুখী একটি অত্যন্ত উৎকৃষ্ট তেল। সূর্যমুখীর বীজে ৪০-৪৫% পর্যন্ত লিনোলিক এসিড রয়েছে। এ তেলে কোন ক্ষতিকারক ইরোসিক এসিড নেই। হেক্টর প্রতি ফলনও ১.৭ থেকে ১.৯ টন পর্যন্ত।

অপরদিকে এখনো দেশে যে পরিমাণ ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে, তার প্রায় ৮০ ভাগেরও বেশি সয়াবিন তেলের। যার প্রায় পুরোটাই আমদানি নির্ভর। কারণ দেশে উৎপাদনকৃত প্রায় দেড় লাখ টনের মত সয়াবিন তেলবীজের পুরোটাই যাচ্ছে পোল্ট্রি ফিডের কারখানায়।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ইতোমধ্যে উন্নত প্রযুক্তির ও উচ্চ ফলনশীল প্রায় ৪০টি জাতের বিভিন্ন তেলবীজ উদ্ভাবন করেছে। যার মধ্যে সয়াবিনের ৬টি এবং সূর্যমুখীর দু’টি জাত রয়েছে। বারি ইতোমধ্যে ‘সোহাগ-পিবি-১’, ‘বাংলাদেশ সয়াবিন-৪ বা জি-২’, ‘বারি সয়াবিন-৫’ ও ‘বারি সয়াবিন-৬’ নামের একাধিক উন্নতজাত উদ্ভাবন করেছে। এসব উন্নতজাতের সয়াবিনের ফলন হেক্টর প্রতি ১.৮০ টন থেকে সোয়া দুই টন পর্যন্ত। দোআঁশ, বেলে দোআঁশ ও এটেল দোআঁশ মাটি সয়াবিন চাষের উপযোগী। বারি এ পর্যন্ত ‘কেরানী-ডিএস-১’ ও ‘বারি সূর্যমুখী-২’ নামের দুটি উন্নত জাতের সূর্যমুখী ফুলের জাত উদ্ভাবন করলেও কৃষক পর্যায়ে তার তেমন সম্প্রসারণ ঘটেনি। কারণ উৎপাদিত সূর্যমূখী তেলবীজ বিপণনের তেমন কোন সুযোগ তৈরি হয়নি দেশে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সূর্যমুখীর আবাদ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ