বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হযরত মু’আজ বিন জাবাল (রা.) সূত্রে রাসূল (সা.) বলেছেন : আল্লাহ তায়ালা শা’বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে সমস্ত মাখলুকের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন। সনদ সহীহ। (সুনানে বায়হাকী : ৬২০৪)। (ইমাম তাবরানী রহ. বলেছেন : শবে বরাত প্রমাণের জন্য এই হাদীসটিই যথেষ্ট। শায়েখ আলবানীও অনুরুপ মতই ব্যক্ত করেছেন। আস সহীহাহ ৩/১৩৫-১৩৯ পৃষ্ঠা)। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আল্লাহ তা’আলা শা’বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে সমস্ত মাখলুকের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন এবং বিদ্বেষপোষণকারী ও খুনি ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন। সনদ সহীহ। (মুসনাদে আহমাদ : ৬৬৪২)।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি: সূত্রে বর্ণিত, পাঁচটি রাত এমন আছে, যে রাতে দোয়া ফেরত দেয়া হয় না। তন্মধ্যে একটি হলো মধ্য শাবানের রজনী। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক : ৭৯২৭ হাদীস)।
হযরত আবুদ দারদা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে লোক সাওয়াবের আশায় ঈদের রাত্রে ইবাদতে জাগ্রত থাকবে তার অন্তর ওই দিনও জাগ্রত থাকবে, যেদিন সকলের অন্তর মুরদা থাকবে। ইমাম শাফেঈ রহ. বলেছেন : আমার কাছে এই মর্মে বিশুদ্ধ বানী পৌঁছেছে যে, পাঁচ রাতের দোয়া কবুল হয় : (১) জুমু’আর রাত। (২) ঈদুল ফিতরের রাত। (৩) ঈদুল আযহার রাত। (৪) রজবের প্রথম রাত। (৫) শাবানের মধ্য রাত। (সুনানে বায়হাকী : ৬২৯৩)।
হযরত ইমরান ইবনু হুসায়ন (রা.) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, নবী (সা.) আমার পিতাকে অথবা অন্য কোনো লোককে জিজ্ঞেস করেছেন, আর আমি তা শুনছি, রাসূল (সা.) বললেন : হে অমুক ব্যক্তির পিতা! তুমি কী শা‘বান মাসের শেষ দিনগুলো সওম রাখ না? তখন তিনি বললেন, না। তখন রাসূল (সা.) বললেন : তুমি রমাজানের শেষে শা‘বান মাসের দু’টি সওম পালন করে নিবে। সনদ সহীহ। অনেকের মতে উক্ত সাওম দুটি হলো ১৪ ও ১৫ শাবানের সাওম। (সহীহুল বুখারী : ১৯৮৩)।
হযরত উসামাহ বিন যায়দ (রা.) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, একদা আমি বললাম : হে আল্লাহর রসূল! আপনাকে শাবান মাসে যত সিয়াম রাখতে দেখি অন্য কোনো মাসে তো তত সিয়াম রাখতে দেখি না, (এর রহস্য কী?) উত্তরে রাসূল (সা.) বললেন : এটা তো সেই মাস! যে মাস সম্বন্ধে মানুষ উদাসীন। যা হলো রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী মাস। আর এটা তো সেই মাস; যাতে বিশ্ব জাহানের প্রতিপালকের নিকট আমলসমূহ পেশ করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে, সিয়াম রাখা অবস্থায় আমার আমলসমূহ (আল্লাহর নিকট) পেশ করা হোক। সনদ সহীহ। (মুসনাদে আহমাদ : ২১৭৫৩)।
উল্লিখিত হাদীসসমূহ থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, শবে বরাত বা মধ্য শা’বানের রজনীর মহত্ব, গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত অপরিসীম। অতএব শবে বরাত সহীহ ও গ্রহণযোগ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তাই এ রাতের অস্তিত্বকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। জ্ঞাতব্য বিষয় হলো- হযরত নবীজি (সা.)-এর কোনো হাদীসই যয়ীফ নয়! বরং শুধু হাদীস শাস্ত্রিক বিশ্লেষণের দিক থেকে মুহাদ্দীসিনে কিরাম হাদীসগুলোকে শ্রেণিবিন্যাস করতে যেয়ে কোনো হাদীসকে সহীহ, কোনো হাদীসকে হাসান এবং কোনো হাদীসকে যয়ীফ হিসেবে নির্ণয় করেছেন।
আর মুহাদ্দীসিনে কেরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলো, একাধীক সনদে বর্নিত জয়ীফ হাদীসগুলো হাসানের দরজায় পৌঁছে যায়। আর ফাযায়েলের ক্ষেত্রে যয়ীফ হাদীসও গ্রহণযোগ্য। তাছাড়া শা’বান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখার কথা একাধিক সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এবং আইয়ামে বীয অর্থাৎ প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখার বিষয়টিও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তদুপরি ইসলামের প্রারম্ভ যুগ থেকে এর ওপর আমল চলে আসাটা হাদীসগুলো নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার সবচেয়ে বড় দলিল।
এর পরও কি বলবেন শবে বরাত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়!? আসলে প্রচলিত অজ্ঞ শায়েখগুলোই যমানার সবচেয়ে বড় ফিতনা। কাজেই এসব ফিতনাবাজ শায়েখদের থেকে দূরে থাকা ঈমানী দায়িত্ব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।