Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শবে বরাতের দালিলিক প্রমাণ-২

মুফতি তাহমীদ শামী | প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

হযরত মু’আজ বিন জাবাল (রা.) সূত্রে রাসূল (সা.) বলেছেন : আল্লাহ তায়ালা শা’বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে সমস্ত মাখলুকের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন। সনদ সহীহ। (সুনানে বায়হাকী : ৬২০৪)। (ইমাম তাবরানী রহ. বলেছেন : শবে বরাত প্রমাণের জন্য এই হাদীসটিই যথেষ্ট। শায়েখ আলবানীও অনুরুপ মতই ব্যক্ত করেছেন। আস সহীহাহ ৩/১৩৫-১৩৯ পৃষ্ঠা)। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আল্লাহ তা’আলা শা’বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে সমস্ত মাখলুকের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন এবং বিদ্বেষপোষণকারী ও খুনি ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন। সনদ সহীহ। (মুসনাদে আহমাদ : ৬৬৪২)।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি: সূত্রে বর্ণিত, পাঁচটি রাত এমন আছে, যে রাতে দোয়া ফেরত দেয়া হয় না। তন্মধ্যে একটি হলো মধ্য শাবানের রজনী। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক : ৭৯২৭ হাদীস)।
হযরত আবুদ দারদা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে লোক সাওয়াবের আশায় ঈদের রাত্রে ইবাদতে জাগ্রত থাকবে তার অন্তর ওই দিনও জাগ্রত থাকবে, যেদিন সকলের অন্তর মুরদা থাকবে। ইমাম শাফেঈ রহ. বলেছেন : আমার কাছে এই মর্মে বিশুদ্ধ বানী পৌঁছেছে যে, পাঁচ রাতের দোয়া কবুল হয় : (১) জুমু’আর রাত। (২) ঈদুল ফিতরের রাত। (৩) ঈদুল আযহার রাত। (৪) রজবের প্রথম রাত। (৫) শাবানের মধ্য রাত। (সুনানে বায়হাকী : ৬২৯৩)।

হযরত ইমরান ইবনু হুসায়ন (রা.) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, নবী (সা.) আমার পিতাকে অথবা অন্য কোনো লোককে জিজ্ঞেস করেছেন, আর আমি তা শুনছি, রাসূল (সা.) বললেন : হে অমুক ব্যক্তির পিতা! তুমি কী শা‘বান মাসের শেষ দিনগুলো সওম রাখ না? তখন তিনি বললেন, না। তখন রাসূল (সা.) বললেন : তুমি রমাজানের শেষে শা‘বান মাসের দু’টি সওম পালন করে নিবে। সনদ সহীহ। অনেকের মতে উক্ত সাওম দুটি হলো ১৪ ও ১৫ শাবানের সাওম। (সহীহুল বুখারী : ১৯৮৩)।

হযরত উসামাহ বিন যায়দ (রা.) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, একদা আমি বললাম : হে আল্লাহর রসূল! আপনাকে শাবান মাসে যত সিয়াম রাখতে দেখি অন্য কোনো মাসে তো তত সিয়াম রাখতে দেখি না, (এর রহস্য কী?) উত্তরে রাসূল (সা.) বললেন : এটা তো সেই মাস! যে মাস সম্বন্ধে মানুষ উদাসীন। যা হলো রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী মাস। আর এটা তো সেই মাস; যাতে বিশ্ব জাহানের প্রতিপালকের নিকট আমলসমূহ পেশ করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে, সিয়াম রাখা অবস্থায় আমার আমলসমূহ (আল্লাহর নিকট) পেশ করা হোক। সনদ সহীহ। (মুসনাদে আহমাদ : ২১৭৫৩)।

উল্লিখিত হাদীসসমূহ থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, শবে বরাত বা মধ্য শা’বানের রজনীর মহত্ব, গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত অপরিসীম। অতএব শবে বরাত সহীহ ও গ্রহণযোগ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তাই এ রাতের অস্তিত্বকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। জ্ঞাতব্য বিষয় হলো- হযরত নবীজি (সা.)-এর কোনো হাদীসই যয়ীফ নয়! বরং শুধু হাদীস শাস্ত্রিক বিশ্লেষণের দিক থেকে মুহাদ্দীসিনে কিরাম হাদীসগুলোকে শ্রেণিবিন্যাস করতে যেয়ে কোনো হাদীসকে সহীহ, কোনো হাদীসকে হাসান এবং কোনো হাদীসকে যয়ীফ হিসেবে নির্ণয় করেছেন।

আর মুহাদ্দীসিনে কেরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলো, একাধীক সনদে বর্নিত জয়ীফ হাদীসগুলো হাসানের দরজায় পৌঁছে যায়। আর ফাযায়েলের ক্ষেত্রে যয়ীফ হাদীসও গ্রহণযোগ্য। তাছাড়া শা’বান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখার কথা একাধিক সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এবং আইয়ামে বীয অর্থাৎ প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখার বিষয়টিও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তদুপরি ইসলামের প্রারম্ভ যুগ থেকে এর ওপর আমল চলে আসাটা হাদীসগুলো নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার সবচেয়ে বড় দলিল।

এর পরও কি বলবেন শবে বরাত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়!? আসলে প্রচলিত অজ্ঞ শায়েখগুলোই যমানার সবচেয়ে বড় ফিতনা। কাজেই এসব ফিতনাবাজ শায়েখদের থেকে দূরে থাকা ঈমানী দায়িত্ব।



 

Show all comments
  • Mohammad Sirajullah, M.D. ২৮ মার্চ, ২০২১, ১২:২৬ এএম says : 0
    San e Barat is not an Arabic Word and this can not be Isdlam,iuc, no ifs and buts. Our-an was revealed and compiled in Arabic and it can not have Sabebarat in it. Hadiths were described by Arabic Sahebas and they did never talk about Saberbarat. No other Muslims of any denominations other than those from Iran Afghanistan, Pakistan, India and Bangladesh knows about Sabebarat. For the sake of Allah (ST), if you believe in HIM, give up these concocted Unislamic Practice of observing SabeBarat.
    Total Reply(1) Reply
    • শেখ মুহাম্মদ মনির হোসাইন ২৮ মার্চ, ২০২১, ৬:৪১ এএম says : 0
      তুমি কি নামাজ অস্বীকার কর? এটাতো ফার্সী শব্দ৷তুমি কি রোজা অস্বীকার কর? এটাতো ফার্সী শব্দ৷তাহলে শবে বরাত অস্বীকার কর কেন? এটাকে পবিত্র কোরআনে লাইলাতুল মোবারাকা বলা হয়েছে৷
  • গনহত্যার প্রস্তুতি চলছে!! ২৮ মার্চ, ২০২১, ১:৪০ এএম says : 0
    বি-বাড়িয়ায় শহর জুড়ে বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট, গ্যাস, পানির লাইন বিছিন্ন করে রাখা হয়েছে। যে কোন সময় জামিয়া ইউনুসিয়া সহ আশেপাশের মাদ্রাসা গুলোতে অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা হতে পারে। আশেপাশের গ্রামের লোকজন এগিয়ে আসুন।
    Total Reply(0) Reply
  • মুক্তিকামী জনতা ২৮ মার্চ, ২০২১, ১:৪৩ এএম says : 0
    আল্লাহ আমাদের বেশি বেশি আমল করার তৌফিক দিন।
    Total Reply(0) Reply
  • জান্নাতুল মাওয়া ২৮ মার্চ, ২০২১, ১:৪৩ এএম says : 0
    সমস্যা নেই আম্তে আস্তে শপিং হয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • জান্নাতুল মাওয়া ২৮ মার্চ, ২০২১, ১:৪৬ এএম says : 0
    শবে বরাত আগের চেয়ে অনেক কম দেখানো হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • রফিকুল ইসলাম ২৮ মার্চ, ২০২১, ১:৪৬ এএম says : 0
    দলিল প্রমান যা ঙা লাগে তা দিচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ataur Rahman ২৮ মার্চ, ২০২১, ৭:৩৫ এএম says : 0
    Thank,s
    Total Reply(0) Reply
  • মু. আবূ বকর সিদ্দীক ২৮ মার্চ, ২০২১, ৭:৫৫ এএম says : 0
    আল্লাহ তায়ালা জামিয়া ইউনুসিয়াকে হেফাযত করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Ashraful alam ২৮ মার্চ, ২০২১, ৮:১৬ এএম says : 0
    তা হলে আরব দেশগুলোতে শবেবরাত নাই কেন?
    Total Reply(0) Reply
  • অধ্যক্ষ ইয়াছিন মজুমদার ২৮ মার্চ, ২০২১, ১১:১৩ এএম says : 0
    শবেবরাত বিতর্ক নয় কারণ শবেবরাতের আমল হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।তবে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই। নবী সঃ, সাহাবায়ে কেরাম রাঃ শবেবরাতে আমাদের মত আনুষ্ঠানিক ভাবে ইবাদত করেছেন কিনা? তাহলে কি সাহাবায়ে কেরাম রাঃ এ হাদীস গুলো জানতেন না? নবী সঃ সুন্নাত ও নফল ইবাদত ঘরে করার জন্য উৎসাহিত করেছেন আমরা শবে বরাতে নফল ইবাদত মসজিদে সমবেত হয়ে করতে উৎসাহিত করে নবী সঃ এর বিপরীত করছি না? আমি ও আমার সাহাবায়ে কেরাম মে পদ্ধতিতে আছে তা আসলে সুন্নাত ওয়াল জামাত হলে ব্যাতিক্রম করবো কেন? ইমাম মালেক রঃ(তিনি শুধু ফকীহ বড় মুহাদ্দিস, মুয়াত্তার সংকলক) ইমাম আবু হানিফা রঃ ইমাম আহমদ (ফকীহ ও মুসনাদ সংকলক) তারা এ বিষয়ে কি বলেছেন? মাদ্রাসা সমুহের পাঠ্য হেদায়া, মালাবুদ্দামিনহূ, শরহে বেকায়া, নুরুল ইজা ইত্যাদী ফিকহের কিতাবে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই কেন?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন