বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতই আমাদের কাছে শবে বরাত হিসেবে পরিচিত। যার আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’। আর ফার্সিতে বলা হয় শবে বরাত। যার অর্থ হলো মুক্তি বা পরিত্রাণের রজনী। এই রাতে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন তার বান্দাদেরকে মাগফিরাত বা গুনাহ থেকে পরিত্রাণ দান করেন, তাই এই রাতের নামকরণ করা হয়েছে ‘লাইলাতুল বারাআত’ বা ‘শবে বরাত’। হাদীসের পরিভাষায় এই রাতের নাম হলো- ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান’। অর্থাৎ মধ্য শাবানের রাত।
শবে বরাত সংক্রান্ত হাদীসের দলিল : হযরত আবূ হুরাইরা রাযি: থেকে বর্ণিত, হযরত রসূল (সা.) বলেছেন : আমাদের বরকতময় মহান প্রতিপালক প্রত্যহ রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নিচের আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব! কে আমার নিকট প্রার্থনা করে? আমি তাকে দান করব! এবং কে আমার নিকট ক্ষমা চায়? আমি তাকে ক্ষমা করব! (ফজর পর্যন্ত এ আহ্বান চলতে থাকে।) সনদ সহীহ। (সহীহুল বুখারী : ১১৪৫, ৬৩২১, ৭৪৯৪)।
কিন্তু শবে বরাতের রজনীতে আল্লাহ তায়ালা সূর্যাস্তের সাথে সাথেই দুনিয়ার আকাসে চলে আসেন। যেমন নিম্নে বর্নিত হাদীস : হযরত আলী রাযি: সূত্রে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তোমরা মধ্য শা’বানের রজনীতে জাগ্রত থাকো এবং তারপর দিন রোজা রাখো! কেননা এ রাতে সূর্যাস্তের সময় আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেতে থাকেন, আছো কি কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব!
আছো কি কেউ রিযিক যাচনাকারী? আমি তাকে রিযিক প্রদান করব! আছো কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি তাকে বিপদ থেকে মুক্তিদান করব! এরূপ কেউ আছো কি? এরূপ কেউ আছে কি? এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আহ্বান করতে থাকেন। উপরে বর্নিত হাদীস অনুপাতে এই হাদীসের বিষয়বস্তুও সহীহ। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৩৮৮)।
হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- হযরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন: যখন পনেরই শাবানের রাত হয়, তখন আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে তশরীফ আনেন এবং সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন! শুধু মুশরিক ও অপর ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত। সনদ সহীহ। (মুসনাদে আবু বকর সিদ্দীক রাযি. ১০৪)।
আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে আমি নবী (সা.))-কে (বিছানায়) না পেয়ে তাঁর খোঁজে বের হলাম। আমি লক্ষ্য করলাম, তিনি জান্নাতুল বাকিতে, তাঁর মাথা আকাশের দিকে তুলে (মুনাজাতে রত) আছেন। অতপর তিনি বলেন, হে আয়েশা! তুমি কি আশঙ্কা করেছ যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার প্রতি অবিচার করবেন?
আমি বললাম, তা নয়! বরং আমি আশঙ্কা করলাম যে, আপনি হয়তো আপনার কোনো স্ত্রীর নিকট তাশরিফ নিয়ে গেছেন। তখন নবীজি (সা.) বললেন: আজ মধ্য শাবানের রজনী। এ রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করেন এবং কালব গোত্রের মেষপালের পশমের চাইতেও অধিক সংখ্যক লোকের গুনাহ মাফ করেন। সনদ হাসান। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৩৮৯; সহীহু মুসলিম : ৯৭৩-৭৪)।
হযরত আয়েশা রাযি: সূত্রে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : তোমার কি জানা আছে এই রাত তথা মধ্য শা’বানের রাত্রিতে কী হয়? হযরত আয়েশা রাযি: জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কী হয়? তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন: এই বছর যারা জন্মগ্রহণ করবে এবং যারা মৃত্যুবরণ করবে, সব এই রাতে লেখা হয়। এই রাতে বান্দাদের সারা বছরের আমল উত্তোলন করা হয় এবং সারা বছরের রিযিক বণ্টন করা হয়। সনদ গ্রহণযোগ্য।
যেমন- ইবনে আব্বাস রাযি: বলেছেন : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- আল্লাহ তায়ালা শা’বানের পনেরতম রাতে সিদ্ধান্তসমূহ চূড়ান্ত করেন এবং শবে ক্বদরে তা বাস্তবায়নকারী ফেরেশতাদের নিকট অর্পণ করেন। (সুনানে বায়হাকী, তাফসীরে কুরতুবী ১৬/১২৭ পৃ.)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।