Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

যমুনায় বন্ধ হয়নি খোকার অবৈধ বালু উত্তোলন! ফসলি জমি কাটার মহোৎসব

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০২১, ৭:৫৮ পিএম

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে শুকনা মৌসুমে যমুনা নদীর চরাঞ্চলে জেগে ওঠা ফসলি জমি কেটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেই যাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ী খোকা। এদিকে, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে উপজেলা প্রশাসন বারবার অভিযান পরিচালনা করলেও কোনোভাবেই খোকার বালু উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।


এ বিষয়ে কুকাদাইর ও জিগাতলা গ্রামের মানুষ ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ। এরপরেও একাধিক প্রবীণ ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান- ‘অবৈধ বালু ব্যবসায়ী খোকা সরকারি দলের প্রভাবশালী লোক, তার ভাই মনিরুজ্জামান মনির সরকার দলের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি। প্রভাবখাঁটিয়ে এক যুগের বেশি সময় ধরে শীত-বর্ষা সব ঋতুতেই বাংলা ড্রেজার ও মাটিকাটার মেশিন এক্সিভেটর বসিয়ে দিন-রাতে হাজার হাজার ট্রাক বালু বিক্রি করে যাচ্ছে।’

স্থানীয়রা জানান- ‘এ নিয়ে যখন বেশি সমালোচনা হয় তখন প্রশাসন হঠাৎ হঠাৎ লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু একদিনের জন্যও এই অবৈধ বালু উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধ করতে পারেনি। শুনেছি এখন আশেপাশের ঘাট বন্ধ। তবে অদৃশ্য কারণে খোকার ঘাট চালু। অন্যান্য ভিটবালুর ঘাট বন্ধ থাকায় এ ঘাটে ট্রাক বা বিক্রির সংখ্যাও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।’

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুপুরে উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কুকাদাইর-জিগাতলা এলাকার যমুনা নদীর অংশে গেলে তাদের কথার সত্যতা পাওয়া যায়। অবৈধভাবে জেগে উঠা চর কেটে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছেন। শুধু তাই নয়, বাংলা ড্রেজার বসিয়ে বালুর পাহাড় গড়ে তুলেছেন তিনি।

অপরদিকে, নিকরাইল ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু সেতুর কোলঘেষে সারপলশিয়া, সিরাজকান্দি-নেংড়া বাজার, মাটিকাটা, চিতুলিয়াপাড়াসহ ভূঞাপুর-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কের ৮ কিলোমিটারের বিভিন্ন পয়েন্টে বালু বিক্রির মহোৎসব চলছে। শতশত বালু-বাহী ট্রাক যাতায়াতের ফলে প্রতিনিয়ত যানজটে নাকাল হচ্ছে সাধারণ মানুষ, ঘটছে নানা ধরণের দুর্ঘটনা।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে আরও বলেন- ‘নস্বরবিহীন অবৈধ বালু-বাহী ড্রাম-ট্রাক চলাচলের জন্য গ্রামের ভিতর দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। অতিরিক্ত লোডের কারণে সড়কগুলি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ধুলো-বালিতে চারপাশ অন্ধকার হয়ে থাকে। গাছ ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। বাতাসে উড়া বালু মানুষের চোখ-মুখে গিয়ে ঠাণ্ডা-চর্মসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ক্ষতি হলেও এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করাও যায়না।'জিগাতলা কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজ পড়তে আসা মুসুল্লিরা জানান- ‘বালু বোঝাই মাটির ট্রাক গ্রামের ভিতর দিয়ে এসে ভূঞাপুর-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কে উঠে। ঘাটে ট্রাক প্রবেশের মোড়েই মসজিদটি অবস্থিত। ট্রাকের ধুলাবালির কারণে মসজিদে নামাজ পড়া কষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া বেপরোয়া-ভাবে ট্রাক চলাচল করায় যেকোনো সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।'এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগের ফলে ভূঞাপুর-তারাকান্দির সড়ক এলাকায় গড়ে উঠা বালুর ঘাট অভিযানে বন্ধ করা হলেও খোকার বালু উত্তোলন কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশরাত জাহান জানান- 'এ উপজেলায় যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে চর ও ফসলি জমি কেটে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। প্রতিনিয়তই এসব অবৈধ বালুর ঘাটে অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা করা হচ্ছে এবং তা ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে।'



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টাঙ্গাইল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ