Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ

মো.জাহিদুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০২১, ১১:৪০ এএম | আপডেট : ১২:১১ পিএম, ২৬ মার্চ, ২০২১

প্রথম দুই ম্যাচ হেরে আগেই ওয়ানডে সিরিজ খুইয়ে বসেছিল বাংলাদেশ। তৃতীয় ম্যাচটা জিতে তাই হোয়াইটওয়াশ এড়ানোই ছিল তামিমদের একমাত্র লক্ষ্য।


কিন্তু শেষ ম্যাচে আরও শোচনীয় পরাজয় বরণ করলো টাইগাররা। সেই সঙ্গে ডুবলো হোয়াইটওয়াশের লজ্জায়।
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে শুক্রবার (২৬ মার্চ) ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে ১৬৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩১৮ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। জবাবে ১৫৪ রান তুলতেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।

কিউইদের ছুড়ে দেওয়া বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই হাল ছেড়ে দেওয়া ব্যাটিং দেখা গেছে তামিমদের। শুরুটাও করেন টাইগার অধিনায়ক নিজেই। ম্যাট হেনরির করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারে রক্ষণাত্মক শট খেলতে গিয়ে উইকেটরক্ষক টম ল্যাথামের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি।

১০ রানেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর একই বোলারের পরবর্তী ওভারে ট্রেন্ট বোল্টের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন সৌম্য সরকারও। তামিম ও সৌম্য দুজনের ব্যাট থেকেই এসেছে মাত্র ১টি করে রান।

লিটন দাস পাল্টা আক্রমণের পথ বেছে নেন। কিন্তু ২১ বলে ২১ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন তিনিও। হেনরির বলে পুল করতে চেয়েছিলেন লিটন। কিন্তু বল ব্যাটের কানায় লেগে থার্ড ম্যান অঞ্চলে চলে যায়। সেখানে অনেকটা দৌড়ে গিয়ে ডাইভ দিয়ে অসাধারণ এক ক্যাচ নেন বোল্ট।

২৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যাওয়ার পর টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন মুশফিক ও মিঠুন। ধৈর্যের প্রতিমূর্তি হয়ে টেস্ট ক্রিকেটের স্টাইলে ব্যাট করছিলেন দুজনেই। কিন্তু ৩৯ বল খেলে মাত্র ৬ রান করা মিঠুন জেমিসনের বলে তুলে মারতে গিয়ে মিচেল স্যান্টনারের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন।

মিঠুনের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মুশফিকও। শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে বোলার নিশামের হাতেই ক্যাচ তুলে দিলে শেষ হয় তার ৪৪ বলে ২১ রানের ইনিংস। এক বল বাদেই নিশামের অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে স্কয়ার ড্রাইভ করতে গিয়ে কনওয়ের হাতে ক্যাচ তুলে দেন মিরাজ (০)। বাকিদের ব্যর্থতার মাঝে মাহমুদউল্লাহর অপরাজিত ৭৩ বলে ৬ চার ও ৪ ছয়ে ৭৬ রানের ইনিংসও কোনো কাজেই আসেনি।

এর আগে টসে জিতে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ডেভন কনওয়ে ও ডেরিল মিচেলের অভিষেক সেঞ্চুরিতে ভর করে টাইগারদের সামনে ৩১৯ রানের বিশাল লক্ষ্য ছুড়ে দেয় স্বাগতিকরা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩১৮/৬ (গাপটিল ২৬, নিকোলস ১৮, কনওয়ে ১২৬, টেইলর ৭, ল্যাথাম ১৮, মিচেল ১০০*, নিশাম ৪, স্যান্টনার ৩*; মুস্তাফিজ ১০-০-৮৭-১, তাসকিন ১০-১-৫২-১, রুবেল ১০-১-৭০-৩, মেহেদি ৭-০-৪৬-০, মিরাজ ৫-০-২৩-০, সৌম্য ৮-০-৩৭-১)

বাংলাদেশ: ৪২.৪ ওভারে ১৫৪ (তামিম ১, লিটন ২১, সৌম্য ১, মিঠুন ৬, মুশফিক ২১, মাহমুদউল্লাহ ৭৬*, মিরাজ ০, মেহেদি ৩, তাসকিন ৯, রুবেল ৪, মুস্তাফিজ ০; হেনরি ১০-২-২৭-৪, বোল্ট ১০-১-৩৭-০, জেমিসন ৮-০-৩০-১, নিশাম ৭.৪-১-২৭-৫, মিচেল ৪-০-২৫-০, স্যান্টনার ৩-০-৭-০)

ফল: নিউজিল্যান্ড ১৬৪ রানে জয়ী

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ৩-০তে জয়ী নিউজিল্যান্ড

ম্যাচসেরা: ডেভন কনওয়ে

সিরিজসেরা: ডেভন কনওয়ে

স্রোতের বিপরীতে মাহমুদউল্লাহর লড়াই

এক প্রান্তে উইকেটের মিছিল দেখছিলেন মাহমুদউল্লাহ। অন্য প্রান্ত নিজে আগলে রাখলেও অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। মুশফিক-মেহেদিরা সবাই ফেরেন একেএকে। এর মধ্যে মাহমুদউল্লাহ তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৩তম হাফসেঞ্চুরি।

হেনরির চতুর্থ শিকার তাসকিন

তামিম-সৌম্য-লিটনের উইকেট শুরুতেই তুলে নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ধস নামান ম্যাট হ্যানরি। এবার তাসকিন আহমেদকে সাজঘরে পাঠিয়ে ৫৫ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে ৮ম বারের মতো চার উইকেট নেওয়ার মাইলফলক অর্জন করেন।

হোয়াইওয়াশের দিকে এগুচ্ছে বাংলাদেশ

মিথুনের বিদায়ের পর ক্রিজে এসে দুর্দান্ত খেলতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ। তার সঙ্গে মুশফিকও খোলস ভাঙতে শুরু করেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ২১ রানে নিশামের বলে শট নির্বাচেনের ভুলে প্যাভিলিয়নের পথ ধরতে হয় তাকে। তার পরে ক্রিজে এসে মাত্র দুই বলই টিককে পেরেছেন মেহেদী মিরাজ। নিশামের বলে ফিরে যাওয়ার আগে রানের খাতা খুলতে পারেন নি তিনি। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে জুটি বাঁধতে ক্রিজে নেমেছেন মেহেদী হাসান। তবে ৩ রান তুলেই দায়িত্ব শেষ করেন তিনি। ফিরে যান সেই নিশামের বলে।

দলীয় সংগ্রহ ২৫.৩ ওভারে ৭ উইকেটে ৮২ রান। মাহমুদউল্লাহ ১৯ রানে অপরাজিত আছেন।

টেস্ট ইনিংস খেলে মিথুনের বিদায়

উইকেট পতণের ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেন মিথুন। ৩য় ওয়ানডেতে ৩১৯ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়ায় ৩৯ বলে ৬ রানের টেস্টসুলভ ইনিংস খেলে সাঝঘরে ফিরে যান তিনি। ৩৮টি বলে সেট হয়ে বুঝে-শুনে খেলার পর ৩৯তম বলে প্রথম বড় শট খেলতে গিয়েই কেল্লা ফতে মিথুনের। মিচেল স্যান্টনারের হাতে তালুবন্দি হওয়ার পর দলীয় সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৮ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ৪৮ রান। মুশফিক ১১ রানে ব্যাট করছেন। তার সঙ্গে জুটি বাঁধতে নেমেছেন মাহমুদউল্লাহ।

৩ উইকেট হারিয়ে নড়বড়ে বাংলাদেশ

লক্ষ্য ৩১৯। কিন্তু এত বড় রান তাড়ায় শুরুতেই মূল্যবান ৩টি উইকেট খুইয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক তামিমকে দিয়ে শুরু। এরপর সৌম্য সরকার। এই দুই ব্যাটসম্যানই আউট হয়েছেন ব্যক্তিগত ১ রানে। হাল ধরার চেষ্টা করেও ২১ বলে তিন চারে ২১ রান তুলে আর ইনিংস লম্বা করতে পারেন নি লিটন দাস। প্রথম তিন ব্যাটসম্যানই আউট হয়েছেন ম্যাট হেনরির বলে। 

প্রথম ওভার মেডেন খেলার পর তৃতীয় ওভারে তার বলে খোঁচা মেরে কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরেন তামিম। পরের ওভারে পুল করার চেষ্টায় ফাইন লেগে ধরা পড়েন সৌম্য সরকার। টেন্ট্র বোল্টকে ফ্লিক করে বাউন্ডারিতে রানের খাতা খোলা লিটন দাস ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু তিনিও পারেননি ইনিংস বড় করতে। ফিরে যান বোল্টের দুর্দান্ত এক ক্যাচে। হেনরিকে ঠিক মতো পুল করতে পারেননি লিটন। ব্যাটের কানায় লেগে থার্ড ম্যানে যাওয়া ক্যাচ অনেকটা এগিয়ে এসে ঝাঁপিয়ে মুঠোয় জমান বোল্ট।

১০ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৩২ রান। জয়ের জন্য আরও প্রয়োজন ২৮৭ রান। ক্রিজে আছেন মোহাম্মদ মিথুন (২) ও মুশফিকুর রহিম (১)।

বাংলাদেশের অসংখ্য ভুলে নিউজিল্যান্ডের রানপাহাড়

বাজে ফিল্ডিংয়ে রান আউট আর সহজ কিছু ক্যাচ মিসের পরও বল হাতে বাংলাদেশের শুরুটা ভালোই এনে দিয়েছিলেন রুবেল হোসেন আর তাসকিন আহমেদ। ১২০ রানেই চার টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে আশা জাগাচ্ছিলেন নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম জয়ের।

তবে সেই আশার সলীল সমাধি হয়েছে আরো বেশ কিছু ক্যাচ আর সুযোগ মিসের মহড়ায়। সেই সুযোগে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন ডিন কনওয়ে আর ড্যারিল মিচেল। তাতে বাংলাদেশকে বিশাল লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছে স্বাগতিকরা।

বাংলাদেশের ৫০তম স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টস জিতে আগে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ৩১৮ রান তুলেছে নিউজিল্যান্ড।

আগেই দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ খুইয়ে ফেলা তামিম ইকবালের দলকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়াতে পাড়ি দিতে হবে বিশাল রান পাহাড়, গড়তে হবে রেকর্ড।

ওয়ানডেতে প্রথম শতকের মুখ দেখা কনওয়ে আর মিচেল মিলে ৫ম উইকেটে যোগ করেছেন ১৫৯ রান। ১৭টি চারে ৯৫ বলে সেঞ্চুরি পাওয়া কনওয়েকে ১২৬ রানে থামান মুস্তাফিজ।

এর আগেই ফিফটি তুলে ফেলেন মিচেল। এই মিচেলকেও জীবন দেন মাহমুদউল্লাহ। আবারও বোলার তাসকিন। এবার ৬৩ রানে থাকা মিচেলের সহজ ক্যাচ শর্ট আউটসাইড অফে ছেড়ে দেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার।

শেষ বলে দৌড়ে ২ রান নিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম শতক পূর্ণ করা মিচেল অপরাজিত ছিলেন কাঁটায় কাঁটায় ১০০তে। অবশ্য এতে অবদান আছে মুশফিকেরও। শেষ বলে বল ধরতে না পেরে তাকে রান আউটের সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন বাংলাদেশের কিপার।

বাংলাদেশের হয়ে ৭০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন অভিজ্ঞ পেসার রুবেল। তবে আরেক তরুণ গতি তারকা তাসকিন এক উইকেট পেলেও ছিলেন কিছুটা মিতব্যয়ী, ১০ ওভারে একটি মেডেনসহ দিয়েছেন ৫২ রান। ৩৭ রান দিয়ে এক উইকেট নিয়েছেন ৮ ওভার হাত ঘুরানো সৌম্যও।

তবে সবচেয়ে খরুচে ছিলেন মুস্তাফিজ। ১০ ওভারে একটি উইকেট নিতে কাটার মাস্টার দিয়েছেন ৮৭ রান!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

নিউজিল্যান্ড ইনিংস : ৫০ ওভারে ৩১৮/৬ (গাপটিল ২৬, নিকোলস ১৮, কনওয়ে ১২৬, টেইলর ৭, ল্যাথাম ১৮, মিচেল ১০০*, নিশাম ৪, স্যান্টনার ১*; মুস্তাফিজ ১/৮৭, তাসকিন ১/৫২, রুবেল ৩/৭০, শেখ মেহেদী ০/৪৬, মিরাজ ০/২৩, সৌম্য ১/৩৭)।

লাথামকে হারিয়ে চাপে নিউজিল্যান্ড



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ