পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কানাডার বেগম পাড়ায় কে কে আবাস গড়ে তুলেছেন-দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)সহ তিন প্রতিষ্ঠান থেকে এই তালিকা চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। তালিকা দাখিল না করেই দুদক থেকে বিদায় নেন ইকবাল মাহমুদ। কালক্ষেপণ করে তারিখের পর তারিখ নেয়া হয়। এক পর্যায়ে গত ১৭ ডিসেম্বর একটি তালিকা দাখিল করা হয় অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে। কিন্তু এতে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকায় উষ্মা প্রকাশ করেন আদালত। পরবর্তীতে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেন আদালত। এক মাস অতিক্রান্ত হলেও দুদকের পক্ষ থেকে সেই তালিকা দাখিল হয়েছে বলে শোনা যায়নি। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক মঙ্গলবার এ প্রতিবেদককে জানান, তালিকা এখনো দেয়া হয়নি। দুদকের পক্ষ থেকেও কোনো তালিকা আসেনি। প্রশ্ন হচ্ছে-বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে কানাডার ‘বেগম পাড়া’ কেন এত আগ্রহের বিষয়? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে বেরিয়ে আসে কিছু মজার তথ্য।
ভারতীয় পরিচালক রশ্মি লাম্ব’র ডকুমেন্টারি ‘বেগমপুরা : দ্য ওয়াইভস কলোনি’। এতে কানাডায় অভিবাসী নিঃসঙ্গ স্ত্রীদের একক জীবন সংগ্রামের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। প্রামাণ্যচিত্রটি কানাডায় বসবাসরত দক্ষিণ এশীয়দের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ধারণা করা হয়, ডকুমেন্টারি ‘বেগমপুরা : দ্য ওয়াইভস কলোনি’ থেকে ‘বেগমপুরা’ শব্দটির উৎপত্তি। সেখান থেকে এসেছে ‘বেগম পাড়া’। কিন্তু বাংলাদেশে ‘বেগম পাড়া’র তাৎপর্যটা ভিন্ন। দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, আমলা, রাজনীতিক স্ত্রী-সন্তানদের ‘নিরাপদ আবাসস্থল’ হিসেবে পরিচিত বেগম পাড়া। টরন্টোর পাশে লেক অন্টারিওর তীরবর্তী শহর মিসিসাগা। শহরের একটি বড় কন্ডোমিনিয়াম জুড়ে এই বেগম পাড়া। গণমাধ্যমের কল্যাণে ‘বেগম পাড়া’ শব্দটি এদেশের মানুষের কাছে এনে দেয় ভিন্ন ব্যঞ্জনা। কারণ, বাংলাদেশের কাছে ‘বেগম পাড়া’ হচ্ছে দুর্নীতিলব্ধ, পাচারকৃত অর্থের বড় বৃহৎ একটি গন্তব্যের নাম। প্রথমদিকে ‘বেগম পাড়ার বাসিন্দা’ হিসেবে আলোচনায় আসে রাজনীতিকদের নাম। কিন্তু গতবছর নভেম্বরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল কালাম আব্দুল মোমেন ‘মিট দ্য প্রেস’ এ স্বীকার করেন, রাজনীতিক নন-বেগম পাড়ার বাসিন্দা হিসেবে এগিয়ে আছেন সরকারি কর্মকর্তারা। তিনি বলেছিলেন, ‘কানাডার বেগম পাড়া সংক্রান্ত বেশ অবাক করা তথ্য মিলেছে। আমাদের সচরাচর ধারণা যে, এগুলো হয়তো রাজনীতিবিদরা করেন। কিন্তু, সেখানে দেখা গেল এদের অধিক সংখ্যক সরকারি চাকরি করেন। অবসর নিয়েছেন বা এখনো চাকরিতে আছেন, তারা বাড়ি কিনেছেন। তাদের ছেলে-মেয়েরা সেখানে থাকেন বড় বড় বাড়িতে। কিছু বাড়ি কিনেছেন আমাদের ব্যবসায়ীরা। সামথিং ইন্টারেস্টিং। সরকারি অফিসারদের পরিচিতি তো দিনে আনেন, দিনে খান। এরমধ্যে বিদেশে কানাডাতে বাড়ি কিনলেন! তারা এটা আসলে কীভাবে করেছেন, তা আমরা জানি না।’
স্বাস্থ্য খাতের মাফিয়া ডন মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু কিংবা হালের সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেয়া ‘পি কে হালদার’ নামের সঙ্গেও ‘বেগম পাড়া’ প্রাসঙ্গিকতা পাচ্ছে ইদানিং। স্বাস্থ্যখাতের মাফিয়া ডন মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর বিষয়ে বিগত ৫ বছর দুদকের অবস্থান ছিল প্রশ্রয়মূলক। মিঠুকে বার বার হাতের মুঠোয় পেয়েও তাকে রহস্যজনক কারণে স্পর্শ করা হয়নি, সুনির্দিষ্ট মামলা থাকলেও তার বিরুদ্ধে চার্জশিট না দিয়ে দেয়া হয় ফাইনাল রিপোর্ট। ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হওয়ার পর গতবছর জুলাইয়ে মিঠুকে তলব করা হয়। এ সময় মিঠু সম্পর্কে ইকবাল মাহমুদের বক্তব্যটি ছিল এরকম, ‘চার্জশিট না দিয়ে চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের পেছনে কি কারণ ছিল তা আমি জানি না।’ ‘মিঠু সিন্ডিকেট’র বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন এবং জাতীয় সংসদে এমপিদের বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমরা দলিল ছাড়া কারো বিরুদ্ধে মামলা করতে পারি না। জনসাধারণ অনেক অভিযোগ তুলতেই পারেন। কিন্তু, প্রমাণ ছাড়া কারো বিরুদ্ধে মামলা করে আমরা আদালতে সামনে হাসির পাত্র হতে চাই না।’
ইকবাল মাহমুদের এ ধরনের প্রশ্রয়সূচক মন্তব্যে মানুষ অবাক হয়নি। বরং মিঠু এবং ইকবাল মাহমুদ সম্পর্কে চাউর হওয়া গুঞ্জনটির সত্যতা খুঁজতে থাকে। মিঠু এবং ইকবাল মাহমুদের মাঝে রয়েছে ‘অন্যরকম সম্পর্ক’। এ সম্পর্কের দায় থেকেই তিনি কার্যকর কোনো অ্যাকশনে যাননি মিঠুর বিরুদ্ধে। মিঠু তার কাজকে ‘সহজতর’ করতে নানা জনকে অর্থায়ন করেছেন। ইকবাল মাহমুদ হয়তো তাদেরই একজন। আর এ কারণেই হয়তো কানাডার বেগম পাড়ায় ‘সেকেন্ড হোম’ গড়ে তোলা ব্যক্তিদের তালিকা প্রদানে তার বৈরাগ্য লক্ষ্যনীয়। তবে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে মাঝেমধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির বাতচিৎ ছিল নিছক আই-ওয়াশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বয়ানে ‘বেগম পাড়া’র তথ্য উঠে আসে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর। সেবছর ২৪ নভেম্বর সংস্থাটির তৎকালিন সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত জানান, কানাডার টরন্টোর বেগম পাড়ার বাড়ির মালিকানা রয়েছে-এমন সরকারি কর্মকর্তাদের তালিকা চেয়ে সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু পরে ‘বেগম পাড়া’র তালিকা প্রণয়নের কোনো অগ্রগতি কমিশন থেকে জানানো হয়নি। একইভাবে একাধিকবার হাইকোর্টের কাছ থেকে সময় নেয়া হলেও বেগম পাড়ার বাড়ির মালিক কিংবা ‘সাহেব’ কিংবা বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা আদালতে দাখিল করা হয়নি। কেন দাখিল করা হয়নি-এর একটি নেপথ্য কারণটি এখন দুদক কর্মকর্তাদের মুখে মুখে।
যেসব সরকারি কর্মকর্তাদের স্ত্রী-সন্তান এবং নিজে কানাডায় নিরাপদ ভবিষ্যৎ খুঁজে নিয়েছেন তাদেরই একজন দুদকের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ স্বয়ং। তার স্ত্রী ডা. খাদিজা বেগমও সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসে কানাডায় থিতু হয়েছেন। তাদের ছেলে ইকবাল আমিন কানাডায় কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়াশুনা করেছেন। এখন বসবাসও করছেন সেখানে। মেয়ে ডা. আমিনা মাহমুদ এবং জামাতা মো.রাইসুল আলম প্রমিও থাকেন কানাডার টরেন্টোতে। তিনি নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচার স্পেশালিস্ট। মোবাইল ফোন কোম্পানি ‘রবি’র চাকরি ছাড়িয়ে ইকবাল মাহমুদ তাকে কানাডা পাঠান। দুদকের চেয়ারম্যান থাকাকালে ইকবাল মাহমুদও বহুবার কানাডা গিয়েছেন। মেয়ের শ্বশুর-শাশুড়িকেও আথিতেয়তায় আপ্যায়িত করেছেন সেখানে।
অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদের এককালের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, বিদেশ ভ্রমণের বাতিক ইকবাল মাহমুদের পুরনো। এর মধ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশি ভ্রমণ করেছেন সিঙ্গাপুর। ‘স্বাস্থ্যগত কারণে’ মাঝে-মধ্যেই তাকে সিঙ্গাপুর যেতে হয়। বিদেশ ভ্রমণের দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছে কানাডা। দুদকে ৫ বছর কর্মকালে তিনি বহুবার সিঙ্গাপুর কানাডা ভ্রমণ করেছেন। এখানে বিদায়ের পর তার কানাডা পাড়ি জমানোর সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বিশ্ব করোনা পরিস্থিতিতে কানাডায় এখন ‘লকডাউন’ চলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।