Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আশ্রয়হীন লক্ষাধিক রোহিঙ্গা

বালুখালী ক্যাম্পে অগ্নিকান্ডে নিহত ১১ বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা : তদন্ত কমিটি গঠন

শামসুল হক শারেক, উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ফিরে | প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকান্ডে ১১ জন নিহত হয়েছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৫ হাজার লোক। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সাংবাদিকদের আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং কালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. মোহসিন একথা বলেন।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তিনি কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান। তিনি আরো বলেন, ১৩৬টি লার্নিং সেন্টার পুড়েগেছে। ৩৮শ’ পরিবার অগ্নিকান্ডের সময় অন্যান্য ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিল। তিনটি হাসপাতালও পুড়েছে আগুনে। তিনি বলেন, আশ্রয়হীনদের তাবু দিয়ে এবং খাবার দিয়ে দ্রুত সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকার ১০ লাখ টাকা, ৫০ হাজার মেট্রিকটন চাল ও পর্যাপ্ত তাবু সরবরাহ করেছে। ১০/১২ লাখ মানুষের আবাস স্থলে এই ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। সব তথ্য দ্রুত পাওয়া কঠিন।

এ ব্যাপারে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে ডিসি এসপিসহ সরকারের সব এজেন্সির কর্মকর্তারা আছেন। তারা আগামী ৩ দিনের মধ্যে আগুনের সূত্রপাত, ক্ষতির পরিমানসহ বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে রিপোর্ট দেবেন। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, স্থানীয় লোকজন যাদের বাড়ি ঘর পুড়ে গেছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরও ঘরবাড়ি করে দেয়া হবে, তাদের তিন মাসের খাবারের ব্যবস্তা করে দেয়া হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. মোহসিন বলেন, সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া ছাড়া তা বলা যাচ্ছেনা। তদন্ত কমিটি এবিষয়েও রিপোর্ট দেবেন বলে তিনি জানান। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. মোহসিন ও তদন্ত কমিটির সদস্যরা এর আগে সকালে পুড়ে যাওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।

আগুনে পুড়ে যাওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে এক অমানবিক অবস্থা। তবে কেবা কারা এর পেছনে জড়িত তা নিশ্চিত নয়। অনেকেই বলেছেন, এর পেছনে রয়েছে দুর্বৃত্তদের নাশকতা। আবার কারো মতে বিদুৎ এর শর্ট সার্কিট অথবা গ্যাস সিন্ডার থেকে হয়েছে এই আগুনের সূত্রপাত।
পুড়ে যাওয়া ক্যাম্পের দায়িত্বরত মাঝিরা বলছেন, চারটি ক্যাম্পের ৩৬০ বøকের প্রায় ৪০ হাজার পরিবারের ঘরসহ সর্বস্ব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এছাড়াও আগুনে আশপাশের স্থানীয় জনসাধারণের ৩শ’ ঘরবাড়ি ও পুড়ে গেছে। অগ্নিকান্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরোপন করা এখনো সম্ভব হয়নি।
গতকাল সকালে অতিরিক্ত ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. শামসুদ্দোজা নয়ন জানান, ঘটনাস্থলে প্রশাসনের কয়েক স্তরের কর্মকর্তা উপস্থিত রয়েছেন। এখন পর্যন্ত কয়েকজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে প্রাথমিক হিসেবে প্রায় ১৫ হাজার ঘর পুড়ে গেছে। এসব ঘরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে রাখা হয়েছে। আশ্রয়হীন লক্ষাধিক রোহিঙ্গা

গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বালুখালী ৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর একে একে আটটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে নারী ও শিশুসহ সাতজন নিহত এবং ৪০ হাজার বসতঘর পুড়ে গেছে বলে জানা গেছে। আর এতে আহত হয় শত শত। ক্যাম্পের বলিবাজার খ্যাত একটি বাজারেই পুড়েছে ২ হাজার দোকান। বেশ কিছু স্বর্ণের দোকানসহ এখানে ছিল উন্নতমানের দোকানপাট।
এদিকে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য এখনো পাওয়া নাগেলেও এর পেছনে একটি দুর্বৃত্ত চক্রের নাশকতা রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় মুনিরুল হক নামের একজন জানান, তিন চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে একসাথে আগুন ছড়িয়ে পড়া রহস্যজনক। রোহিঙ্গাদের অনেকেই বলেছেন একই কথা। তারা বলেন, একদিকে আগুন দেখে তারা ওদিকে দৌড়াতে গেলে দেখে একই সাথে অন্যদিকেও আগুন জ্বলে উঠতে। এতে করে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েন। ইতোমধ্যে আশ্রয়হীন হাজার হাজার রোহিঙ্গা ফিরে আসতে শুরু করেছে তাদের শেড এলাকার। এসময় দেখা গেছে অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের এবং অনেক স্বামী তাদের বউ বাচ্চাদের খোঁজ করতে। যারা অগ্নিকান্ডের সময় হারিয়ে গেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ