Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গজুকাটা সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে বিএসএফের মসজিদ নির্মাণে বাঁধা

এম হাসানুল হক উজ্জ্বল, গজুকাটা সীমান্ত এলাকা থেকে ফিরে : | প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০২১, ১২:০২ এএম

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসার প্রাক্কালে আগ্রাসী হয়ে উঠেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। সিলেটের জুড়ি সীমান্তে গুলি করে বাংলাদেশীকে যুবককে হত্যা করে লাশ নিয়ে উল্লাসের পর এবার ২শ’ বছরের পুরনো মসজিদ পুণঃনির্মাণে বাঁধা প্রদান করেছে তারা।
এ নিয়ে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার গজুকাটা সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। বিএসএফ সীমান্ত এলাকায় বাঙ্কার খনন করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিলে পাল্টা প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। গত দুই দিন থেকে সীমান্ত এলাকায় এই অবস্থা বিরাজ করলেও গতকাল সোমবার দিনভর ভারতীয় বাহিনী জিরো লাইনের ভেতরে প্রবেশ করে শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি ভারি অস্ত্র মজুদ করেছে। বিজিবিও মসজিদ নির্মাণে বাঁধা দেয়া ও ভারতীয় বাহিনীর আগ্রাসী ভ‚মিকার জবাব দিতে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। সীমান্ত এলাকা জুড়ে তারা শক্তি বৃদ্ধি করেছে। সব মিলিয়ে দু’পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আতঙ্কিত অনেকে ইতোমধ্যে পরিবার নিয়ে বাড়ী ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান নিয়েছেন।
এদিকে বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্ণেল মো. শাহ আলম সিদ্দিকি জানিয়েছেন, ভারতীয় বাহিনী জিরো লাইনের ১৫০ গজের ভেতরে প্রবেশ করে কোন ধরণের বাঁধা প্রদান করতে পারে না। তারা সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে ২শ’ বছরের পুরনো মসজিদ পুণঃনির্মাণের বাঁধা প্রদান করেছে।
জানা যায়, বিয়ানীবাজার উপজেলার গজুকাটা সীমান্ত এলাকার ১৩৫৭ নং পিলারের ভেতরে বাংলাদেশ অংশে গজুকাটা গ্রামের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ২শ’ বছরের পুরনো পাকা ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এলাকাবাসী তা পুণঃনির্মাণের ব্যবস্থা করেন।
দুবাগ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আফতাব উদ্দিন বলেন, ২০১৮ সালে মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রামবাসী নেয়ার পর তারা বিজিবির সহায়তা চান। তৎকালীন বিজিবি-৩২ ব্যাটলিয়ানের কমান্ডার বিএসএফের কমান্ডারের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হলে তারা নির্মাণ কাজ শুরু করেন। কিন্তু নির্মাণ কাজের নিচ অংশের পিলার-লিন্টারসহ আনুষাঙ্গিক কাজ শেষে ছাদ ঢালাইয়ের জন্য প্রস্তুতির এক পর্যায়ে বিএসএফ সরাসরি বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করে মসজিদ নির্মাণ কাজে বাঁধা দেয়।
এদিকে দীর্ঘ ৩ বছর পর গত সপ্তাহে বিজিবি-৫২’র সাথে বিএসএফের বৈঠকে মসজিদটি পুণঃনির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হয় এবং তা করতে বিএসএফ বাঁধা প্রদান করবে না বলে আশ^স্ত করে। কিন্তু মসজিদ নির্মাণের সকল প্রস্তুতি নিয়ে কাজ শুরু করলে গত শনিবার বিকেলে বিএসএফ তাতে বাঁধা প্রদান করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ নিয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠকের আহবান জানালেও বিএসএফ তাতে পাত্তা না দিয়ে সীমান্ত এলাকায় শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংকার খনন করে শক্ত অবস্থান নেয়। বিজিবি পাল্টা অবস্থান নিয়ে তাদের জবাবের প্রস্তুতি নিয়ে সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করছে।
সরেজমিন গজুকাটা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিএসএফ জিরো লাইনের ১৫০ গজের মধ্যে বাংকার খনন করে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। তারা শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি টহলও বৃদ্ধি করেছে। পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবি ৫২ ব্যাটলিয়ান তাদের অবস্থান আরো দৃঢ় করে জবাবের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
মসজিদের ইমাম হাফিজ বিলাল আহমদ জানান, বিএসএফের বাঁধার পর থেকে নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে এলাকাবাসী জানিয়েছেন, যে কোন মূল্যে এবার তারা মসজিদ নির্মাণ করতে প্রস্তুত রয়েছেন।
দুবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, ২শ’ বছরের প্রাচীন এই মসজিদ নির্মাণ কাজে আমাদের সহযোগিতা রয়েছে। বিএসএফ মসজিদ নির্মাণ কাজে বাঁধা প্রদান ও নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়ার সংবাদ আমাদেরকে মর্মাহত করেছে
এ বিষয়ে বিজিবি-৫২’র কমান্ডিং অফিসার লে. কর্ণেল মো. শাহ আলম সিদ্দিকি জানিয়েছেন, বিএসএফ সীমান্তের ১৫০ গজের ভেতর মসজিদ নির্মাণ কাজে কোন ক্রমেই বাঁধা প্রদান করতে পারেন না। বিএসএফ এখানে বাঁধা দিয়ে অন্যায় করছে। তিনি বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে যে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে তারা প্রস্তুত রয়েছেন। তিনি জানান, গজুকাটা সীমান্তসহ তার আওতাধীন সকল এলাকায় বিজিবির শক্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সীমান্ত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ