বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
আগামী ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যাচ্ছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থভূমি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়িতে । এ সফরে তিনি ঠাকুর পরিবারের সদস্য ও মতুয়া নেতাদের সাথে মতবিনিময় করবেন।
নরেন্দ্র মোদির এ সফরকে অনেকটা রাজনৈতিক বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভার নির্বাচনে মতুয়া ভক্তদের ভোট টানতে তিনি ওড়াকান্দির ঠাকুরবাড়িতে আসছেন বলে অনেকেই মনে করছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরকে ঘিরে ঠাকুরবাড়িতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি হেলিপ্যাড নির্মাণ, সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার, পরিষ্কার-পরিছন্নতার কাজ চলছে। এখন থেকেই স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। সেই মাহেন্দ্রক্ষণের প্রতীক্ষায় আছেন গোপালগঞ্জের মানুষ।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে এ মাসের শেষ সপ্তাহে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো ও কাশিয়ানীর উপজেলার শ্রীধাম ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করার কথা রয়েছে নরেন্দ্র মোদির। ঠাকুর বাড়িতে তিনি শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ও গুরচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে পূজা অর্চনা করে আশীর্বাদ নেবেন। ভারতের রাষ্ট্রপ্রধানের এ সফরকে সফল করতে জোরেসোরে চলছে নানা আয়োজন ও সাজসজ্জা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরকে সামনে রেখে গত ৯ মার্চ বাংলাদেশস্থ ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারা ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়ী পরিদর্শন করেছেন। এর পরপর পুলিশের ঢাকা বিভাগের ডিআইজি হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত ডিআইজি নূরে আলম মিনা, জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করেন। এরপর থেকে পুরো ঠাকুরবাড়ি গোয়েন্দা নজরদারিতে নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে স্বাগত জানাতে সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গোপালগঞ্জ সফর নিয়ে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানার সভাপতিত্বে এ সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. ইলিয়াছুর রহমান, কাশিয়ানী উপজেলা চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর, গোপালগঞ্জ পৌর মেয়র কাজী লিয়াকত আলী, টুঙ্গিপাড়া পৌর মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুলসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ মতুয়া মহা মিশনের সভাপতি মতুয়াচার্য্য পদ্মনাভ ঠাকুর জানান, আমরা জেনেছি নরেন্দ্র মোদী ঠাকুর বাড়ীর হরি মন্দিরে পূজা দেবেন। এছাড়া পরিবারের সদস্যদের সাথে তিনি মতবিনিময় করবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ী প্রস্তুত বলেও তিনি জানান।
বাংলাদেশ মতুয়া মহাসংঘের মহাসংঘাতিপতি সীমা দেবী ঠাকুর বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমাদের ঠাকুরবাড়িতে আসছেন এটা সকল মতুয়া ভক্তদের কাছে গর্বের বিষয়। তাঁকে বরণ করে নিতে ঠাকুরবাড়িতে নানা প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও উলু ও শঙ্খ ধ্বনির মাধ্যমে বরণ কওে নেবে বিশ্বের ক্ষমতাধর এ নেতাকে।
ঠাকুরবাড়ির সদস্য অমিতাভ ঠাকুর বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমাদের ঠাকুরবাড়িতে আসছেন এটি আমাদের জন্য খুশির খবর এবং গর্বের বিষয়। আমরা তাকে স্বাগত জানানোর জন্য আমাদের সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। তার আগমনে আমরা ধন্য হবো।’
ঠাকুর পরিবারের সদস্য ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদীর ওড়াকান্দি সফরকে কেন্দ্র করে মতুয়া ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে জাগরণের সৃষ্টি হয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর সফরের মধ্য দিয়ে আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।’
মতুয়া ভক্ত ঘৃতকান্দি গ্রামের সাথী বাইন বলেন, ‘ঠাকুরবাড়ি বিশ্বের দলিত সম্প্রদায়ের মতুয়া ভক্তদের এক তীর্থভূমি। প্রতি বছর মতুয়া ভক্তরা পুণ্যলাভের আশায় এ তীর্থ ভূমিতে আসেন। এখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসবেন এতে আমরা অনেক আনন্দিত। এ সফরে দুই দেশের আন্তরিকতা বাড়বে বলে মনে করছেন তিনি।’
কাশিয়ানী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান জানান, ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়িতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে জরুরি ভিত্তিতে চারটি হেলিপ্যাড, ঠাকুর বাড়ির অভ্যন্তরে ৫শ’ মিটার এইচবিবি সড়ক, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের তিলছড়া থেকে ঠাকুর বাড়ি পর্যন্ত ৮ কি. মি. ও রাহুথৈড় সড়ক থেকে ঠাকুর বাড়ি প্রবেশের জন্য ৬’ শ মিটার পাকা সড়ক সংস্কার করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে দিনরাত কাজ করছেন শ্রমিকরা।
টুঙ্গিপাড়া পৌর মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুল বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জম্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশে আসছেন। তিনি টুঙ্গিপাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাবেন ও কাশিয়ানীর শ্রীধাম ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করবেন। এ মহতিক্ষণ কে সামনে রেখে টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার পক্ষ থেকে সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমন উপলক্ষে গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ে সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদানে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। জেলায় যাতে কোন প্রকার আইন শৃঙ্খলার অবনতি এবং অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে যথারীতি আমরা সজাগ দৃষ্টি রেখেছি। ইতোমধ্যে আমরা জেলা প্রশাসনের সাথে কয়েকটি সভা করেছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গোপালগঞ্জ সফর যাতে ভাল ভাবে সম্পন্ন হয়, সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা আইনশৃঙ্খলা সভায় উপস্থিত সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।