Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শেয়ারবাজারে টানা পতন

আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের শেয়ারবাজারে বড় পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা দুই কার্যদিবস তনের মধ্যে থাকল শেয়ারবাজার। এই টানা ধসের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই বিক্রির চাপ দেখা দেয়ায় সূচকের নেতিবাচক প্রবণতাও লক্ষ করা যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিক্রির এই চাপ বাড়তে থাকায় সূচকের পতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। দিনের লেনদেন শেষে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্য সূচকের বড় পতন হয়। সেই সঙ্গে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা বাজার মূলধন হারিয়েছে ডিএসই। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবস শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ৭২ হাজার ৯৭ কোটি টাকা। এ হিসাবে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৭ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা।

এর মাধ্যমে টানা দুই দিনের ধসে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১৩ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা। বাজার মূলধন বাড়া বা কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে বা কমেছে। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লেনদেনের শুরু থেকে শেষ পর্যাপ্ত অহেতুক বিক্রির চাপ অব্যাহত থাকে। মূলত বিনিয়োগকারীদের এই বিক্রির চাপেই শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে।

এ বিষয়ে লেনদেন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত একটি ব্রোকারে হাউজের এক কর্মকর্তা বলেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ায় শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এমন গুজবে বৃহস্পতিবার বড় দরপতন হয়। কিন্তু বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) স্পষ্ট করেছে করোনার প্রকোপ বাড়লেও শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ হবে না। এরপরও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অহেতুক প্যানিক সেল (আতঙ্কে বিক্রি) প্রবণতা দেখা যায়। মূলত এ কারণেই আজও বড় দরপতন হয়েছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় প্রথম ছয় মিনিটের লেনদেনেই ডিএসইর প্রধান সূচক ২৪ পয়েন্ট কমে যায়। সময়ের সঙ্গে সূচকের পতন প্রবণতা বাড়ে। ফলে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৩৪৯ পয়েন্টে নেমে গেছে। এর মাধ্যমে দু’দিনেই ডিএসইর প্রধান সূচক কমল ১৬৫ পয়েন্ট।

প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি বড় পতন হয়েছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকের। আগের দিনের তুলনায় এই সূচকটি ৩৯ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৩৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক ২১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২২৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
দিনভর বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া মাত্র ৩১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৩৯টির। আর ৭৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বাজারের এই দরপতন সম্পর্কে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, শেয়ারবাজারে এখন দরপতনে কোনো কারণ নেই। তবে বিভিন্ন জায়গায় কথা বলে জানতে পেরেছি করোনাভাইরাস নিয়ে নতুন করে দেখা দেয়া আতঙ্কের কারণেই দরপতন হচ্ছে।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে যেভাবে দরপতন হচ্ছে তাতে আমরা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত। এরপরও বিনিয়োগকারীদের বলবো- কেউ প্যানিক সেল করবেন না। প্যানিক সেল না হলে বাজার সহসা ঘুরে দাঁড়াবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

ডিএসইর এক সদস্য বলেন, এখন বাজারে যে দরপতন হচ্ছে তার জন্য বড় বিনিয়োগকারী এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ জড়িত। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির উচিত ঊর্ধ্বমুখী বাজারে কারা শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে চলে গেছে তাদের খুঁজে বের করা। সেই সঙ্গে তাদেরকে আবার বিনিয়োগ করতে বাধ্য করতে হবে। তা না হলে এই বাজারের ওপর থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা উঠে যাবে।

এদিকে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হওয়ায় পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬১৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৬৮৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ৬৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৮৪ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রবির ৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২৮ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মা।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৬৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৩১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬৭টির এবং ৪৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শেয়ারবাজার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ