Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল

রূপগঞ্জে অপরাধের স্বর্গরাজ্য চনপাড়া বস্তি

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডটি চনপাড়া বস্তিকে ঘিরে। হত্যা, অপহরণ, ভাড়াটে খুনি, মাদক, চাঁদাবাজি, পতিতাবৃত্তি, চোরাচালান, ছিনতাই, ডাকাতি, সুদের ব্যবসা, চুরিসহ হেন কোন অপকর্ম নেই যা এখানে সংঘটিত হয় না। মিছিল সমাবেশে লোক ভাড়া থেকে শুরু করে রাজধানীর শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আত্মগোপনের নিরাপদ আশ্রয় এ বস্তি। ইদানিং বহিরাগত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। বেড়ে গেছে অস্ত্রের ঝনঝনানি। বিভিন্ন স্থানে হামলা ভাঙচুর লুটপাটসহ আহতের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।

ছিন্নমূল মানুষদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র হলেও গত ৪ দশকের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয়ে এখানকার অর্ধশতাধিক বাসিন্দা হয়ে উঠেছেন অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতাধর। এখানে যারা নিরীহ মানুষ রয়েছেন, তারা ওই সব অপরাধী ও ক্ষমতাধরদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সহ্য করেই নিরীহ মানুষ বসবাস করছেন। এই এলাকায় মাসে অবৈধ আয় ১০ কোটি টাকা। রূপগঞ্জের কলঙ্কিত এক ভূখন্ডের নাম চনপাড়া বস্তি। রূপগঞ্জবাসীর অভিমত, চনপাড়াকে অপরাধমুক্ত রাখতে পারলেই গোটা রূপগঞ্জের চিত্র পাল্টে যাবে। সর্বশেষ গত রোববার রাতে রূপগঞ্জ থানার একদল পুলিশ চিরুনি অভিযান পরিচালনা করেছে। তবে খবর পেয়ে অপরাধীরা আগেই পালিয়ে গেছে। কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকার আসে, সরকার যায়; সবাই চনপাড়া বস্তির অপরাধ দমনে হয় ব্যর্থ। রাজধানীর মাত্র ৪ কিলোমিটারের মধ্যে রূপগঞ্জের এ চনপাড়া বস্তির অবস্থান হওয়ায় রাজধানী ঢাকার অপরাধ জগতের অনেকেই এ বস্তিকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিয়েছে। ঘিঞ্জি বস্তির কারণে অপরাধীরা অপরাধ করে এখানে দিনের পর দিন নির্বিঘ্নে পালিয়ে থাকতে পারে বলেই এ বস্তিটা তাদের এত পছন্দের। ওয়ান ইলিভেন, অপারেশন ক্লিনহার্ট, র‌্যাবের ক্রসফায়ার, পুলিশের চিরুনি অভিযান কোন কিছুরই প্রভাব এ বস্তিতে পড়ে না। এখানে রয়েছে সন্ত্রাস, মাদক, কিলার, নারী ব্যবসা ও ছিনতাইকারীদের একাধিক গ্রুপ। অপরাধের পাশাপাশি রয়েছে অন্তহীন সমস্যা। আবার এক শ্রেণির সমাজ সেবক ও ভালো মানুষদের আলোচ্ছটাও রয়েছে এখানে। তবুও চনপাড়া বস্তিকে কেউই ভালো চোখে দেখে না। মূলত চনপাড়া অপরাধের স্বর্গরাজ্য। এ বস্তিতে অবৈধভাবে মাসে আয় হয় প্রায় ১৫ কোটি টাকা। অবৈধ ব্যবসার বদৌলতে এখানে রাতারাতি কোটিপতি হয়েছে প্রায় শতাধিক ব্যক্তি। এসব ব্যক্তিদের বিষয়ে অনুসন্ধান করলে সকল তথ্য বেরিয়ে আসবে। গত বছর জেলা প্রশাসন ও যৌথবাহিনী ৩শ’ র‌্যাব পুলিশের সদস্য নিয়ে চনপাড়া বস্তিতে এক ঝটিকা অভিযান চালায়। বর্তমানে পুলিশের লোক দেখানো অভিযান চললেও অপরাধ দমনের প্রক্রিয়া অনেকটাই স্থবির।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় লাখ লোকের বসবাস এ চনপাড়ায়। চনপাড়ার বস্তির একাংশ হচ্ছে বেদে বহর। এখানে ১০ বেদে নানা অপরাধের সাথে যুক্ত হয়ে আজ কোটিপতি। অনুসন্ধানে জানা যায়, এরা এক সময় সাপ খেলা দেখাতো। তাবিজ কবজ বিক্রি করতো, একপর্যায়ে তারা মুক্তার ব্যবসা শুরু করে। ভারত থেকে তারা কৃত্রিম মুক্তা এনে বিক্রি করতো। তাদের সিন্ডিকেট বড় হওয়ার সাথে সাথেই তারা কোবরার (সাপ) বিষের চোরাচালানি ব্যবসায় নামে। মাদকস্পট, মলম পার্টি ও ছিনতাই গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছে এরা। এরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ছত্রছায়ায় রয়েছে।

চনপাড়ায় পেশাদার কিলার হিসেবে রয়েছে প্রায় ২০ জন। এ বস্তিতে আসতো নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী কামু, আনোয়ার। ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী টোকাই সাগর, মুরগি মিলন, পিচ্চি হান্নানসহ অনেকে। চনপাড়ায় পেশাদার পতিতা রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক। এসব পতিতা বিভিন্ন সময় ধর্ষণ মামলার ভয় দেখিয়ে জনসাধারণকে হুমকি দিয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতি রাতে বসে জুয়ার আসর। এখানে নারী ও মদ নিয়ে ফুর্তি চলে। চনপাড়াকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এক শ্রেণির সুদি মহাজন। এরা গরীবের রক্ত চুষে খাচ্ছে। সুদি মহাজনদের খপ্পরে পড়ে অনেকে সর্বস্বান্ত হয়েছে। বর্তমানে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে।

রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মহসিনুল কাদির বলেন, অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অপরাধী ও মাদক কারবারীরা কৌশলে পালিয়ে গেছে। তবে যে কোন সময় হঠ্যাৎ করেই অভিযান চালানো হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিরাপদ আশ্রয়স্থল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ