বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
প্রথম ধাপে খুলনার ৩৫ ইউনিয়ন পরিষদে আগামী ১১ এপ্রিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ নয়, খুলনাঞ্চলে বিরাজ করছে থমথমে ভীতিকর অবস্থা। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থী ও সমর্থকদের মাঝে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ ও উত্তেজনা। ইতোমধ্যে এ অঞ্চলের কয়েকটি স্থানে কমপক্ষে ৫ টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্বাচন কেন্দ্রিক কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা মেনে নেয়া হবে না। তারপরও আশ্বস্ত হতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। ঘটেই চলেছে একের পর এক অনাকাঙ্খিত ঘটনা।
সূত্র জানায়, খুলনার ৫ উপজেলার ৩৫ ইউনিয়নের প্রত্যেকটিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে কমপক্ষে ৩ জন করে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া রয়েছে দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে সকল নেতা কর্মীকে কাজ করার জন্য। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। গত শুক্রবার মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের দিন দেখা গিয়েছে আওয়ামী লীগের যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, প্রত্যেকেই দলীয় নেতা কর্মীদের নিয়ে ব্যাপক শোডাউন করেছেন। এলাকায় প্রচার প্রচারণামূলক কর্মকান্ডে তৃণমূল পর্যায়ে বিভাজন সুস্পষ্টভাবে চোখে পড়ছে। হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কায় কোনো কোনো এলাকায় দল মনোনীত প্রার্থী এলাকায় যাচ্ছেন না। অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে, বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের সমর্থকেরা প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীকে ভোট না দেয়ার জন্য ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
খুলনার দিঘলিয়ার যোগিপোল ইউনিয়ন, গাজীরহাট ইউনিয়ন এবং কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নে মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই লাগাতার আন্দোলন চলছে। গাজীরহাটের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা পর্যন্ত হয়েছে। এ মামলার আসামিরা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী। মনোনয়ন ঘোষণার পর দিঘলিয়া উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আলী রেজার উপর হামলার চেষ্টা হয়েছে। এঘটনায় থানায় জিডি হয়েছে। পাইকগাছা ইউপি সদস্য আবুল কাশেম সরদারের উপর হামলা হয়েছে। হামলায় তিনি গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বটিয়াঘাটা উপজেলার তিন ইউনিয়নে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে রয়েছে ক্ষোভ। মনোনয়ন প্রক্রিয়া চলাকালীন বটিয়াঘাটার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ মনোনয়নকে কেন্দ্র করে নিজদলের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উত্থাপন করে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা গিয়েছে ১৩ মার্চ মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত খুলনায় কমপক্ষে ৫টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। মহাসড়ক অবরোধ, অনশন, বিক্ষোভ সমাবেশ, সড়কে অগ্নিসংযোগ, ভাঙ্গচুরসহ বিভিন্ন ধরণের ভীতিকর কর্মকান্ড অব্যহত রয়েছে।
খুলনার ৩৫ টি ইউনিয়নে ৩৫ টি চেয়ারম্যান পদের বিপরীতে ১৮০ জন জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, এর মধ্যে ১২৯ জনই আওয়ামী লীগের। এর বাইরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা রয়েছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে কমপক্ষে ৩ জন করে দলীয় প্রার্থী মাঠে রয়েছেন।
সরেজমিনে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার যোগিপোল ইউনিয়নে কয়েকজন ভোটারের সাথে কথা বলে জানা গিয়েছে, তারা ভোট নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে রয়েছেন। তাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকেরা ভোট দেয়ার জন্য তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে, ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তারা ওই চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ভোট দিতে চান না। কিন্তু তিনি ক্ষমতাসীন দলের একটি বড় পদে রয়েছেন। ভোট না দিলে আগামীসময় কী হবে-এ শঙ্কায় তারা রয়েছেন। একই রকম কথা জানিয়েছেন কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের ভোটাররা। তারা বলছেন, নেতাদের সাথে নেতাদের সংঘাত হয়, ক্ষতিগ্রস্ত হই সাধারণ মানুষ। এখন ভোট দিলেও বিপদ, না দিলেও বিপদ।
খুলনা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ বলেছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছোটখাটো ঝামেলা হতে পারে, এটা স্বাভাবিক। এ বিষয়ে দলীয় নেতা কর্মীদের সাবধান করে দেয়া হয়েছে। কোন্দল ভুলে যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছে, তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য তিনি সকল নেতা কর্মীর প্রতি আহবান জানান।
খুলনা জেলা প্রশাসক মো. হেলাল হোসেন বলেছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক ঝুঁকি চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্টদের সজাগ থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খুলনার নবাগত পুলিশ সুপার মো. মাহবুব হাসান বলেছেন, ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিন্দুমাত্র বিশৃংখলা করতে দেয়া হবে না। সমগ্র জেলায় যে কোনো বিশৃংখলা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্কবস্থায় থাকবে পুলিশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।