বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বাংলাদেশের ‘তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলুন উত্তরবঙ্গ তথা বাংলাদেশকে মরুভূমি হওয়ার বিপদ থেকে রক্ষা করুন ’ এই আহ্বানে ঢাকা-তিস্তা রোডমার্চ কর্মসূচি উপলক্ষে- বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের উদ্যোগে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ব বগুড়া শহরের সাতমাথায় ঢাকা-তিস্তা ব্যারেজ রোডমার্চ উপলক্ষে মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ বগুড়া জেলা আহ্বায়ক কমরেড এ্যাড. সাইফুল ইসলাম পল্টুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ, কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন, কেন্দ্রীয় পাঠচμের সদস্য নিখিল দাস, জয়নাল আবেদীন মুকুল, নব কুমার কর্মকার, আলফাজ হোসেন যুবরাজ, বাসদ বগুড়া জেলা সদস্য মাসুদ পারভেজ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বগুড়া জেলা সভাপতি ধনঞ্জয় বর্মন, সভা পরিচালনা করেণ বাসদ বগুড়া জেলা সদস্যসচিব সাইফুজ্জামান টুটুল। সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজুল হক দুলু, সিপিবি বগুড়া জেলা সাধারণ সম্পাদক কমরেড আমিনুল ফরিদ প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, মানব দেহের শিরা-উপশিরার মতো ছড়িয়ে থাকা নদী ও পলি দিয়ে গঠিত বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি আজ পানির অভাবে মরুকরণের হুমকির মুখে।
তবে প্রাকৃতিক কারণে নয় এটা মানুষের সৃষ্টি। চীন, নেপাল, ভুটান ও ভারত থেকে আসা নদীগুলো বাংলাদেশে প্রবেশ করে জালের মতো ছড়িয়ে গেছে। এই নদীগুলোই বাংলাদেশের প্রাণ প্রবাহ। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইন ও নীতি লঙ্ঘন করে ভারত ৫৪টি নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে একতরফা পানি প্রত্যাহার করে নেয়ার আগ্রাসী তৎপরতার ফলে পানির প্রবাহ কমে গিয়েছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে দেশের অভ্যন্তরে নদী দখল ও দূষণ। এক সময় দেশে ১ হাজার ২০০টি নদী ছিল। সরকারসমূহের ভ্রান্তনীতি ও দখল-দূষণের কারণে নদী মরে গিয়ে এখন ২৩০-এ নেমে এসেছে। খরা মৌসুমে বেশিরভাগ নদীতেই পানি থাকে না। একসময়ের প্রমত্তা অনেক নদীই এখন খাল-নালায় পরিণত হয়েছে। দেশের চতুর্থ বৃহত্তম আন্তর্জাতিক নদী তিস্তা। ভূগর্ভস্থ ও ভূ-উপরিস্থিত জলপ্রবাহ নিয়ে এর অববাহিকার পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার বর্গ কি.মি.। যার মধ্যে বাংলাদেশে ২০ হাজার বর্গ কি.মি. আর ভারতে ১০ হাজার বর্গ কি.মি.। বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে প্রায় ৭০ কি.মি. উজানে গজলডোবায় বাঁধ দেয়ার কারণে শুস্ক মৌসুমে ২০১১ এর পর থেকে পানি পাচ্ছে না বাংলাদেশ। খরা মৌসুমে আসতে না আসতেই পানি প্রবাহ আশঙ্কাজনকভাবে কমে কখনো ৫০০ কিউসেক এর নিচে নেমে যায়। অথচ ঐতিহাসিক গড় (১৯৭৩-১৯৮৫) অনুযায়ী পানির প্রবাহ থাকার কথা কমপক্ষে ১০ হাজার কিউসেক। তিস্তা ব্যারেজের বিভিন্ন ক্যানেলের মাধ্যমে সেচ মৌসুমে রংপুর, দিনাজপুর ও নীলফামারী কমান্ড এলাকায় ১ লক্ষ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে যে সেচ সুবিধা প্রদান করা হতো; এখন তা কমে শুধু নীলফামারীতে ৮ হাজার হেক্টরে নেমে এসেছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাবার কারণে বিকল্প সেচ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। তাই এই আগ্রসনের অবসান করতে রোডমার্চে দেশের সর্বস্তরের জনগণকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা।
তারা বলেন, ৩১৫ কি.মি. দীর্ঘ তিস্তা আন্তর্জাতিক নদী হওয়া সত্বেও ভারত বাংলাদেশের স্বার্থ উপেক্ষা করে একতরফা বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ৫ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের জন্য পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ পানি পাচ্ছে না। ভারত থেকে আগত সকল আন্তর্জাতিক নদীর পানি বণ্টনের বিষয়টি ভারতের শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগিয়ে সমস্ত প্রকার বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করে চলেছে। বাংলাদেশের বর্তমান ভোট ডাকাতির সরকারসহ অতীতের সকল সরকার নির্লজ্জভাবে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতের প্রতি নতজানু থেকেছে। আমাদের শাসক শ্রেণির একাংশ ভারতকে বন্ধু রাষ্ট্র এবং আরেকাংশ হিন্দু রাষ্ট্র বলে ভোটের রাজনীতিতে ফায়দা তুলতে চায়। কিন্তু বাস্তবে ভারত বন্ধু বা হিন্দু রাষ্ট্র নয় এটি একটি সা¤্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র। ফলে সা¤্রাজ্যবাদী চরিত্র অনুযায়ী ভারত পাশর্^বর্তী দেশের উপর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামরিক-সাংস্কৃতিক কর্তৃত্ব ও প্রভাব বিস্তার করতে চায়। সুন্দরবন ধ্বংস করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, বাংলাদেশের উপর দিয়ে ট্রানজিট ও বন্দর ব্যবহারে একের পর এক চুক্তি করে যাচ্ছে। অথচ তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা এবং নেপাল-ভুটানের সাথে যোগাযোগের জন্য মাত্র ৩০ কি.মি. করিডোর করতে দিচ্ছে না। সীমান্ত হত্যা, বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি দূর করতে কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। আবার বাংলাদেশে নজরদারি করার জন্য উপকূলে রাডার স্থাপন করছে, তাছাড়া সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর, তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প যা চীন নিজ খরছে সমীক্ষা করে দিয়েছে সেটাও না করতে ভারত বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে। এই হলো বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বের নমুনা! তাই বন্ধুত্বের দোহায় দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে ভারতকে সব উজাড় করে দিবেন জনগণ তা মেনে নিবে না।
সমাবেশে জাতীয় নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার আর সরকারের নতজানু নীতির প্রতিবাদে তিস্তাসহ সকল নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা, তিস্তা বাঁচাতে, নদী, পানি ও প্রাণ-প্রকৃতি বাঁচাতে সকল বাম প্রগতিশীল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, পরিবেশ ও নাগরিক আন্দোলনের প্রতিনিধি এবং সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি আহবান , আসুন ভারতের পানি আগ্রাসন,নদী দুষণ ও দখলদারদের রুখে দাঁড়াতে তিস্তা রোডমার্চ এ অংশগ্রহণ করে সফল করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।