বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে আলু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে মহা কর্মযজ্ঞ দেখা গেছে কৃষকদের। তবে এবার আলুর দামে কৃষক খুশি হলেও হিমাগার সংরক্ষণে কৃষকদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। এ উপজেলায় এখনো ২০ পার্সেন্ট আলু উত্তোলন হয়নি। এরই মধ্যে অনেক হিমাগার মালিক মাইকিং করে আলু হিমাগারে না আনার জন্য কৃষকদের প্রতি অনুরোধ জানান।
কৃষকদের এই ভোগান্তির কারন উত্তরবঙ্গ থেকে কিছু মুনাফালোভী মজুতদার আলু আনায় সময়ের আগেই হিমাগার(কোল্ড স্টোর) গুলো ভরে যাচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই সবকটি হিমাগার আলু নেওয়া বন্ধ করে দেবে এমনটাই জানা যায় হিমাগার সূত্রে। তাই কৃষকরা এখন চিন্তিত তাদের আলু কিভাবে সংরক্ষণ করবে। আর এ কারনে কৃষক যে হিমাগারেই খালি পাচ্ছেন ভাড়া বেশি হলেও সেখানেই সাইকেল,অটোরিকশা,ট্রাক,ট্রলার দিয়ে আলু বস্তায় ভড়ে হিমাগারে নিয়ে যাচ্ছে। এবার ৫০ কেজির বস্তা প্রতি ভাড়া ২০০ থেকে ২১০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। যা গতবছরের ভাড়া ছিলো ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। এবছর আলুতে দাউদের(স্কেপ) পরিমান বেশি হওয়ায় অনেক কৃষক লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে ।
কৃষক ও হিমাগার সূত্রে জানা যায়, গত বছর হিমাগারের আলুর ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর প্রায় কৃষকই হিমাগার মুখী হচ্ছে। তবে এবছর উত্তরবঙ্গ থেকে আলু আশায় স্থানীয় কৃষক হিমাগারে আলু সংরক্ষণে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে ।এমনকি ঘুষ দিয়েও উত্তরবঙ্গের আলু হিমাগারে রাখছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেক কৃষক দেশীয় পদ্ধতিতে আলু গোলায় রাখতেন। তবে গোলায় রাখা আলু বেশি গরমে পচে যায় ও আলু শুকিয়ে ওজন কমাসহ পোকার আক্রমণে অনেক আলু নষ্ট হয়ে যায় এবং গোলার আলু গুলো বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় না বলেই কৃষক হিমাগার মুখি হচ্ছে।
এ উপজেলায় এখনো প্রায় ৩০ পার্সেন্ট আলু হিমাগার সংরক্ষণ করতে পারেনি কৃষক। আর এ কারণেই কৃষক এখন চিন্তিত। কৃষকরা বলছেন উত্তরবঙ্গ থেকে আলু আনা বন্ধ না হলে এখানকার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনিতেই বিগত বছরের লোকসান পুষিয়ে উঠতে পারেনি কৃষক । তাই কৃষকদের দাবি উত্তরবঙ্গের আলু যেন এ উপজেলায় আনা না হয়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় ১০ টি হিমাগারের ধারন ক্ষমতা ৭৮ হাজার ৯৬০ মেট্রিক টন। এ উপজেলায় এবছর ৯ হাজার ৩৫০ হেক্টর আলু আবাদ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ১৫০ হেক্টর বেশি । এবছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফলন ভলো হয়েছে।
সাইকেল চালক রিপন বলেন,রাজশাহী বাঘা থানা থেকে আমরা আসছি ১৬ জন। সারাদিনে ২৮ থেকে ৩০ টা বস্তা নিতে পারি। দূরত্ব অনুসারে বস্তাপ্রতি ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকি। প্রতিদিন জন প্রতি ১২শ থেকে ১৩শ টাকা থাকে।
অটোচালক খোরশেদ বলেন, আমরা যাত্রী নিলে যে পরিমান টাকা পাই আলু নিলে তার থেকে বেশি টাকা পাওয়া যায়। সারা দিনে আলু নিয়ে আমরা ৭ থেকে ৮ টি টিপ দিতে পারি। প্রতি দিন ১৪শ থেকে ১৬শ টাকা রোজি হয় আর যাত্রী নিলে থাকে ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা। এক টিপে ১০ টি বস্তা নিতে পারি।
কৃষক জয়নাল হাওলাদার বলেন,এবছর আমি ৫০ পাখি আলু চাষ করেছি। আমাদের আলু কোল্ড স্টোরেজে রাখতে খুব সমস্যা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের আলু এনে আমাদের কোল্ড স্টোরেজ ভরে ফেলছে। আর এ হিমাগারে জায়গা পাচ্ছিনা আলু রাখার জন্য । কিছু অসাধু ব্যবসায়ী লাভের জন্য উত্তরবঙ্গ থেকে আলু এনে প্রতি ট্রাকে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে কোল্ড স্টোরেজে রাখছে। আর এই কারণে আমাদের মত গরিব চাষি পড়ছে বেকায়দায়।
কৃষক রেজাউল করিম ফিরোজ বলেন,আমি ৩০ পাখি আলু চাষ করেছি। বাহিরের আলু আমাদের এ এলাকার স্টোরে আশায় আমরা এখন আলু রাখতে পারছিনা এবং ন্যায্য মূল্য পাচ্ছি না।
কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন,আমি কোল্ড স্টোরে অগ্রিম বুকিং দেওয়ার কারনে আমার আলুগুলো রাখতে পারছি। কৃষকের আলু জমিতে থাকা সত্বেও কোল্ড স্টোর গুলো ফিলাপ হয়ে যাচ্ছে। স্টোর কর্তৃপক্ষ বলছে ২ থেকে ৪ দিন পর আর আলু সংরক্ষণ করতে পারবেনা কেউ।
ফাইবস্টার কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার অজয় কৃষ্ণদে বলেন,আমাদের কোল্ড স্টোরেজের ধারণক্ষমতা এক লক্ষ নব্বই হাজার বস্তা।এরই মধ্যে এক লক্ষ আশি হাজার বস্তা এসে পড়ছে। বাকি বীজের জন্য রাখা হয়েছে। আর এই কারণে মাইকিং করে আলু না আনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি ।
হাসান কোল্ড স্টোরেজের হিসাব রক্ষক বাদল দেবনাথ বলেন, বাহিরের জেলা রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, জয়পুরহাট থেকে আলু আসছে এ এলাকায়। এখন প্রতিদিনি কমবেশি আলু আসছে এ অঞ্চল থেকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্যাণ কুমার সরকার বলেন,এবছর সিরাজদিখান উপজেলা ৯ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এবার আবহাওয়া ভাল ছিল। আলুতে কোন রোগ বা পোকার আক্রমণ চোখে পড়েনি। এখন পর্যন্ত ৮০ পার্সেন্ট জমির আলু উত্তোলন করা হয়েছে। তবে এখনই কিছু কিছু কোল্ড স্টোরেজে আলু দিয়ে ভরে গেছে। উত্তরবঙ্গের আলু দিয়ে কোল্ড স্টোরেজ ভড়ে গেছে এরকম কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেনি। যদি কোন অভিযোগ আসে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।