Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এলমে তাসাউফের আরকান পরিচিতি

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০২১, ১২:০৫ এএম

১০ সংখ্যাটি যৌগিক সংখ্যা। ১ এবং শূন্য মিলে ১০ হয়েছে। এই পৃথিবী ১০ দিকের দ্বারা বিন্যস্ত। ঈষাণ, বায়ু, অগ্নি, নৈঋত, পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ, ঊর্ধ্ব ও অধ:।

মহান আল্লাহপাক মানুষকে ১০ দিকেই চলাফেরার অধিকার দিয়েছেন। এই অধিকার মানুষ আত্মশুদ্ধি ও তাসাউকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। তাসাউফ ও আত্মশুদ্ধির আরকান ১০টি। এগুলোর পরিচিতি এই : ১. তাজরিদুত্ তাওহিদ : অর্থাৎ এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর সঙ্গে কোনো জিনিসের সাদৃশ্য ও অনুরূপ খেয়াল না করা এবং আল্লাহর বেকারত্বের চিন্তা মনে স্থান না দেয়া। ২. ফাহমুছ ছিমায়ি : অর্থাৎ আল্লাহ ও তার রাসুলের কালাম ও দ্বীনের হুকুম-আহকাম এবং দ্বীনের মাসায়েলগুলোর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা এবং আমল করা।

৩. হুছনুল আছরাতি : অর্থাৎ আন্তরিকতার সাথে নেক লোকের সংসর্গে বসা এবং পবিত্রভাবে স্বচ্ছন্দে জীবনযাপন করা।

৪. ইছারুল ইছারে : অর্থাৎ অন্যের মঙ্গল এবং সুবিধাকে নিজের উপর প্রাধান্য দেয়া। এতে করে পর হিতৈষণার ফযিলত লাভ করা সম্ভব হবে।

৫. তরকুল এখতিয়ারে : অর্থাৎ আল্লাপাক বান্দাহকে যে সকল কাজের অধিকার দিয়েছেন এর উপর বিশ্বাস রেখে আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা করত : কাজ কর্ম-সম্পাদন করা।

৬. ছুরয়াতুল ওয়াজদে : অর্থাৎ যে জিনিস ভালো বলে বোধ হবে সে বস্তু হতে নিজের অন্তরকে কখনও খালি না রাখা। যেমন জিকির, তিলাওয়াত, ইবাদত ইত্যাদি। আর যে সকল কাজ ও কথা আল্লাহর তরফ হতে নিষিদ্ধ তা হতে বিরত থাকা।

৭. আল কাশফু আনিল খাওয়াতের : অর্থাৎ মনের মধ্যে যে সকল ধারণা ঘুরপাক খাচ্ছে এগুলোর মধ্যে যে ধারণা আল্লাহর আদেশের অনুক‚ল হবে এর তাঁবেদারী করা এবং যা প্রতিক‚ল হবে, তা পরিত্যাগ করা।

৮. কাছরাতুল আছফার : অর্থাৎ আল্লাহর কুদরতের উদাহরণ পরিদর্শনের জন্য যথাসম্ভব অধিক বার দেশ ভ্রমণ করা।

৯. তরকুল একতেছাব : অর্থাৎ নিজের মনকে তাওয়াক্কুলে মনোনিবেশ করবার জন্য সুন্নাত তরিকার বিপরীতমুখি আয়-উপার্জন পরিহার করা।

১০. তাহারিমুল এদ্দেখার : অর্থাৎ মানুষের মধ্যে সংকট সৃষ্টির লক্ষ্যে ও অধিক মুনাফায় লোভে মাল সম্পদ গুদাম জাত না করা।

বিশ্লেষণ-১ : আসলে তাসাউফের অর্থ হলো- আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র বিদ্যমান এর উপর মনেপ্রাণে পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করা এবং মহান মাবুদের মোশাহাদা বা পর্যবেক্ষণ ও তার জাতপাকের মধ্যে ডুবে যাওয়া। হাদিসে জিব্রাঈলে সুস্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে যে, তাসাউফের উপর আমল করলে এহসানের মর্যাদা হাসিল হয়। উল্লিখিত হাদিসে এহসানের দুটি সংজ্ঞা বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথমটি মোশাহাদা বা পর্যবেক্ষণ। দ্বিতীয়টি মোরাকাবাহ বা আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হওয়া। আর মোশাহাদাকেই আইনুল একীন বলা হয়।

বিশ্লেষণ -২ : ঈমান দুই প্রকার। প্রথম ঈমানে তাকলিদী। অর্থাৎ অনুগামী ঈমান। তা হল নিজের মোমেন পিতা-মাতাকে দেখে অনুসন্ধান ও দলিল প্রমাণ ছাড়া ঈমান আনয়ন করা। দ্বিতীয় প্রকার ঈমানে তাহকিকী অর্থাৎ অনুসন্ধানের মাধ্যমে যে ঈমান লাভ করা হয়েছে।

অতঃপর ঈমানে তাহকিকী দুই প্রকার। প্রথম ইছতেদলালী : অর্থাৎ দলিল প্রমাণের মাধ্যমে যে ঈমান গ্রহণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় কাশফী অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তার উপর ঈমানকে খুলে দিয়েছেন এবং তার অন্তরে ঈমানের আলো ঢেলে দিয়েছেন।

ঈমানে ইছতেদলালীর নির্দিষ্ট সীমা আছে। এই সীমা অতিক্রম করা যাবে না। ইহাকে এলমুল একীন বলে। ঈমানে কাশফীর সমাপ্তি নেই, নির্দিষ্ট কোনো সীমা নেই। এই প্রকারের ঈমান দুই প্রকার।

প্রথমত : তা মোশাহাদা যাকে আইনুল ইয়াকীন বলে। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার সিফতে জালাল ও সিফতে রহমত বান্দাহর উপর খুলে যায়, এভাবে যে, সে যেন দেখতেছে। দ্বিতীয়ত : শুহুদে জাতি যাকে হাক্কুল ইয়াকীন বলে। অর্থাৎ আল্লাহ পাকের জাত পাককে যেন ঈমানের চক্ষুতে দেখতেছে। আর একে মোয়ায়েনাও বলে।



 

Show all comments
  • রহস্য মানব ১৯ মার্চ, ২০২১, ১:৫০ এএম says : 0
    এলমে তাসাউফ কাকে বলে ? এর উৎপত্তি কখন থেকে ?
    Total Reply(0) Reply
  • জাহিদ খান ১৯ মার্চ, ২০২১, ১:৫১ এএম says : 0
    যে বিজ্ঞান চর্চা করলে মানুষ সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌ তায়ালার পরিচয় লাভের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে উত্তম চরিত্রে চরিত্রবান হয়ে আল্লাহ্‌র প্রতিনিধি বা খলিফাতুল্লাহ্‌র মর্যাদায় পৌঁছতে পারে, তাকে এল্‌মে তাসাউফ বলে
    Total Reply(0) Reply
  • হোসাইন এনায়েত ১৯ মার্চ, ২০২১, ১:৫১ এএম says : 0
    এলমে তাসাউফ পৃথিবীর আদিমতম স্বর্গীয় মৌলিক জ্ঞান- যা মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা প্রথম মানব হযরত আদম (আঃ)-কে নিজে শিক্ষা দিয়েছিলেন
    Total Reply(0) Reply
  • রমজান আলি ১৯ মার্চ, ২০২১, ১:৫২ এএম says : 0
    মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা নিজে যে পদ্ধতিতে হযরত আদম (আঃ)-কে জ্ঞান দান করেছিলেন, তা-ই তাসাউফ । ঐ পদ্ধতিতে জ্ঞান অর্জন করেই হযরত আদম (আঃ) হতে হযরত মোহাম্মদ (সঃ) পর্যন্ত সমস্ত নবী-রাসুল আল্লাহ্‌র পরিচয় লাভ করতঃ তাঁর সাথে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে মানুষের কাছে তাওহীদের বাণী প্রচার করেছেন । বিশ্ব নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) একাধারে পনর বছর হেরা গুহায় তাসাউফের সাধনা তথা মোরাকাবা করার পর যখন তিনি চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হন, তখন আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে জিব্রাইল (আঃ)-এর মাধ্যমে রেসালাতের বাণী লাভ করেছেন । তা হযরত মোহাম্মদ (সঃ)-এর জন্য তাসাউফ সাধনার ফসল । পরবর্তীতে তিনি এল্‌মে তাসাউফের সাহায্যেই বর্বর আরব জাতিকে একটি আদর্শ জাতিতে পরিণত করেছিলেন ।
    Total Reply(0) Reply
  • Habibur Rahman Siam ১৯ মার্চ, ২০২১, ১:৫২ এএম says : 0
    অসাধারণ ব্যাখা, সকলেই এটা জানা উচিত
    Total Reply(0) Reply
  • Jack+Ali ১৯ মার্চ, ২০২১, ৫:২০ পিএম says : 0
    আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র বিদ্যমান এর উপর মনেপ্রাণে পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করা... this is wrong. Read Qur'an... Qur'an clearly stated that Allah Imam Ahmad[15] He was asked: "Is Allah above His 'Arsh, above the seventh heaven, separate from His creatures, and is His knowledge and power encompassing everything everywhere?" He replied: "Certainly, He is above His 'Arsh and nothing escapes His knowledge." [Al-Juyush al-Islamiyyah, Ibn Al-Qayyim, p. 123] All of the above show that the entire Muslim 'Ummah, in the past and present, is in unison regarding the belief in the Loftiness and Supremacy of Allah, the Exalted. He is above His 'Arsh, above the seventh heaven, and above all His creature essentially and realistically not allegorically.
    Total Reply(0) Reply
  • Monjur Rashed ১৯ মার্চ, ২০২১, ৬:৩০ পিএম says : 0
    Special thanks to the writer. Most of the people in this society are devoid of this exceptional & valuable knowledge. "Ilme Tasauf" is zest of the holy Quran.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন