পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চাল আমদানিতেও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজি অব্যাহত রয়েছে। তারা সরকারের বেঁধে দেয়া সময়সীমার মধ্যে চাল আমদানি করার বিষয়ে কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। ব্যবসায়ীরা চাল আমদানিতে ধীরগতির নীতি অবলম্বন করেছে। এতে চালের বাজারে চালের সরবরাহের ঘাটতির অজুহাতে দফায় দফায় দাম বাড়ানো হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের এ কারসাজি সরকার বুঝতে পেরেও কিছু করতে পারছে না। উল্টো তাদের কাছে সরকার বার বার অসহায় আত্মসমর্পণ করছে। ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে চালের আমদানি শুল্ক কমিয়েও এর সুফল ক্রেতারা পাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা মূল্যবৃদ্ধির সুবিধা এবং আমদানি শুল্ক কমানোর সুফল দুটোই ভোগ করছে। আর অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে ক্রেতাসাধারণের নাভিশ্বাস অবস্থা।
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে গত ২৭ ডিসেম্বর বেসরকারিভাবে আমদানি শুল্ক পূর্বের ৬২.৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। এরপরও বাজারে চালের দাম বাড়তে থাকায় সরবরাহ বাড়াতে এবং বাজার স্থিতিশীল রাখতে চালের আমদানি শুল্ক আরো ১০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
বেসরকারিভাবে ১০ লাখ টন চাল আমদানির টার্গেট থাকলেও এ পর্যন্ত দেশে চাল প্রবেশ করেছে এক থেকে দেড় লাখ টনের মতো। এতে বাজারে চালের সরবরাহ যেমন বাড়েনি তেমনি দামেও কোনো প্রভাব পড়েনি। চালের মূল্যবৃদ্ধি এখনো অব্যাহত রয়েছে। রাজধানীতে গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে নাজিরশাইল ও মিনিকেটের দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে। যে চালের দাম ছিল ৬৪ টাকা কেজি, বর্তমানে সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকা। যে চালের দাম ছিল ৬৫ টাকা তা বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকা কেজি। মোটা লতা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি।
গত ৫ জানুয়ারি বেসরকারিভাবে ৩ লাখ ৩০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। মোট ২৯টি প্রতিষ্ঠান এ চাল আমদানি করবে। এর মধ্যে প্রথম ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেয়া হয়। চাল আমদানির শর্তে বলা হয়েছে, এই বরাদ্দপত্র ইস্যুর সাত দিনের মধ্যে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে হবে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা পাঁচ হাজার টন বরাদ্দ পেয়েছেন, তাদের এলসি খোলার ১০ দিনের মধ্যে ৫০ শতাংশ চাল এবং ২০ দিনের মধ্যে পুরোটাই স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করতে হবে। এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান ১০ থেকে ৫০ হাজার টন বরাদ্দ পেয়েছে তাদের এলসি খোলার ১৫ দিনের মধ্যে অর্ধেক এবং ৩০ দিনের মধ্যে সব চাল বাজারজাত করতে হবে। কিন্তু সরকারের এ শর্ত কেউই মানছে না। এখন পর্যন্ত বেসরকারিভাবে দেশে ৫০ হাজার টন চালও আমদানি করা হয়নি। আমদানির এলসি খোলার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছাকৃত সময়ক্ষেপণ করছে এবং বাজারে চালের মূল্য বৃদ্ধি করছে। ব্যবসায়ীদের এ চালাকি সরকার বুঝতে পারলেও কিছুই করতে পারছে না। উল্টো বার বার আমদানির সময়সীমা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। প্রথমে এলসি খোলার সময়সীমা বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত করা হয়। এ সময়ের মধ্যে ব্যবসায়ীরা চাল আমদানিতে অত্যন্ত ধীরগতির নীতি অবলম্বন করে। ফলে সরকার আবারও এলসি খোলার সময়সীমা ১৫ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়েছে। সেই সাথে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে আমদানিকারক এই সময়ের মধ্যে এলসি খুলতে পারবে না তাদের বরাদ্দ প্রত্যাহার করা হবে। সরকারের কথামতো ১৫ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত সময়ে যারা এলসি খুলতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের বরাদ্দপত্র বাতিল করে অন্যদের ১৫ মার্চের মধ্যে চাল আমদানির সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু তাতেও ব্যবসায়ী চক্র তাদের কারসাজি থেকে সরে আসেনি। ১৫ মার্চের মধ্যে চাল আমদানি হয়নি। এতে সরকার ক্ষোভ প্রকাশ করলেও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। উল্টো চাল আমদানির সময়সীমা বাড়িয়ে ২৫ মার্চের মধ্যে বাজারজাত করতে বলা হয়েছে।
মিলারদের কারসাজিতে গত বছর জুন-জুলাই থেকে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছিল। পরে খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মিল মালিকদের দফায় দফায় বৈঠকের পর দাম কিছুটা কমে আসে। কিছুদিন নিশ্চুপ থাকার পর চলতি বছরের শুরুতে মিলাররা ফের তৎপর হয়ে ওঠায় বাড়তে শুরু করে চালের দাম। ধানের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে কিছুদিনের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) দাম বাড়ানো হয়েছে ১০০-২০০ টাকা। ফলে রাজধানীসহ সারা দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে বাড়ছে চালের দাম। এর ফলে খেটে খাওয়া ও নি¤œ আয়ের মানুষ পড়েছে বিপাকে।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ। তাদের কারসাজির কাছে সরকার অসহায়। ফলে বাজারে চালের দাম বেড়েই চলেছে। বাজারে চালের সরবরাহ বাড়াতে না পারলে চালের দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা বলা মুশকিল। তাই অসাধু ব্যবসায়ীদের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে।
কনসাস কনজুমার সোসাইটির নির্বাহী সভাপতি পলাশ মাহমুদ ইনকিলাবকে বলেন, ব্যবসায়ীরাই এখন সরকারের অংশ। তাই তারা ইচ্ছামতো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করলেও সরকার কিছুই করতে পারে না। চালের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়লেও সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। উল্টো আমদানি শুল্ক কমিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের লুটপাটের সুবিধা সরকার আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।