Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুমিন বেপরোয়া হতে পারে না

মাওলানা শিব্বীর আহমদ | প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর একটি বাণী আছে এরকম। তিনি বলেন : সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ হচ্ছে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে শিরক করা, আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া আর আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়া। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক : ১৯৭০১)।

হাদীসের ভাষ্যে কোনো অস্পষ্টতা নেই- আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে শিরক করা যেমন অনেক বড় একটি গোনাহ, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়াও যেমন একটি বড় গোনাহ, তেমনি আল্লাহ তাআলার শাস্তি সম্পর্কে উদাসীন হয়ে থাকা, তাঁর পাকড়াওয়ের বিষয়ে বেপরোয়া হয়ে যাওয়াও একটি বড় গোনাহ।

‘রাহীম, রাহমান, গাফফার’ যেমন আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম, তেমনি ‘কাহ্হার’ও তাঁর গুণবাচক নাম। সীমাহীন ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ তাআলার দয়া ও অনুগ্রহ যেমন সীমাহীন, দান ও করুণা যেমন অফুরান, তেমনি তাঁর শাস্তির কঠোরতাও বর্ণনাতীত। আখেরাতে যাকে তিনি পুরস্কৃত করবেন, তাকে নিজ শান মোতাবেকই পুর¯ৃ‹ত করবেন।

আবার যাকে শাস্তি দেবেন, সেই শাস্তিও হবে তাঁর কুদরত ও ক্ষমতানুসারে। মুমিন বান্দার পুরস্কার নিয়ে যত বর্ণনা কোরআন ও হাদীসের পাতায় পাওয়া যায় সবকিছুর সারকথা তো এই একটি হাদীসেই আমরা পেয়ে যাই-আল্লাহ তাআলা বলেছেন : আমি আমার নেক বান্দাদের জন্যে এমন কিছু প্রস্তুত করে রেখেছি, যা কোনো চোখ কখনো দেখেনি, কোনো কান যার কথা কখনো শোনেনি, এমনকি কোনো হৃদয় যা কখনো কল্পনাও করেনি! এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) পবিত্র কোরআনের সূরা সেজদার ১৭ নং আয়াতটি তিলাওয়াত করে শোনান। ‘তাদের জন্যে চোখ-জোড়ানো কত কিছু যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে তা কেউ জানে না।’ (সহীহ বুখারী : ৩২৪৪)।

মুমিন বান্দাদের পুরস্কারের ক্ষেত্রে যেমন তিনি তাঁর কুদরতের প্রকাশ ঘটাবেন, অকল্পনীয় সব পুরস্কারে তাদের ভ‚ষিত করবেন, একইভাবে তাঁর কুদরত প্রকাশিত হবে কাফেরদের শাস্তির ক্ষেত্রেও। পবিত্র কোরআন ও হাদীসে জাহান্নামের অনেক রকম শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। কোথাও জাহান্নামের আগুনের তীব্রতা ও ভয়াবহতার কথা, কোথাও জাহান্নামিদের কষ্টদায়ক খাদ্য ও পানীয়ের কথা, কোথাও শাস্তি বেশি ভোগ করার জন্যে তাদের বিশালাকৃতির শরীরের কথা। সবকিছু মিলিয়ে সেখানেও একই কথা-জাহান্নামের শাস্তির আসল রূপও আমাদের চিন্তা ও কল্পনার বাইরে।

এ তো মৃত্যু-পরবর্তী জগতের কথা। সেখানকার যাবতীয় ক্ষমতা কেবলই আল্লাহর। দুনিয়াতে আল্লাহ কিছু মানুষকে কিছু সময়ের জন্যে নির্দিষ্ট কোনো এলাকার রাজা বানিয়ে দেন। সামান্য ক্ষমতা তিনি দিয়ে থাকেন। কিন্তু সে জগতে সকল প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ক্ষমতা একমাত্র তাঁর হাতেই থাকবে। সকল রাজত্ব সেদিন তাঁরই।

আর এই দুনিয়ার জগতে তিনি যে কিছু মানুষকে সামান্য কিছু ক্ষমতা দিয়ে থাকেন, এখানকার আসল ক্ষমতাও তাঁরই হাতে। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দিয়ে থাকেন, যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নেন। জগতের যাবতীয় কিছুর চাবি তো তাঁরই নিয়ন্ত্রণে।

পবিত্র কোরআনের বর্ণনা : বলো, হে আল্লাহ! সকল রাজ্যের মালিক! আপনি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন এবং যার থেকে ইচ্ছা রাজত্ব ছিনিয়ে নেন, যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন এবং যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করেন, আপনার হাতেই তো কল্যাণ, নিশ্চয় আপনি সর্বশক্তিমান। আপনি রাতকে দিনে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতে প্রবেশ করান, আপনি প্রাণবান থেকে প্রাণহীনকে বের করে আনেন এবং প্রাণহীন থেকে প্রাণবানকে বের করে আনেন, আর যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিজিক দান করেন। (সূরা আলে ইমরান : ২৬-২৭)।

আল্লাহ পাকের সীমাহীন কুদরত দুনিয়াতে প্রত্যক্ষ করার পরও যারা তাঁর শাস্তির বিষয়ে বেপরোয়া হয়ে পড়ে, অবিরাম পাপ যারা করতেই থাকে, তারা যে নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনছে-এ নিয়ে আর কোনো দ্বিমত থাকতে পারে! তাদের এ ক্ষতিগ্রস্ততার কথাও স্বয়ং মহান প্রভু আল্লাহরই।

লক্ষ করুন : সেসব জনপদবাসী যদি ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি অবশ্যই তাদের জন্যে আকাশ ও জমিনের সমূহ বরকত উন্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা অস্বীকার করেছে, তাই তাদের কৃতকর্মের কারণে আমি তাদের পাকড়াও করেছি। জনপদবাসী কি তাদের কাছে রাতের বেলা তারা ঘুমে থাকা অবস্থায় আমার আজাব আসা থেকে নির্ভয় হয়ে গেছে? আর জনপদবাসী কি তাদের কাছে প্রভাতে তারা খেলাধুলায় থাকা অবস্থায় আমার আজাব আসা থেকে নির্ভয় হয়ে গেছে? তারা কি আল্লাহর কৌশল থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে? আল্লাহর কৌশল থেকে তো ক্ষতিগ্রস্ত স¤প্রদায় ছাড়া আর কেউ নিশ্চিন্ত হয় না। (সূরা আ‘রাফ : ৯৬-৯৯)।



 

Show all comments
  • তোফাজ্জল হোসেন ১৫ মার্চ, ২০২১, ১২:৪৬ এএম says : 0
    উপকারি একটা লেখা। ধন্যবাদ লেখককে।
    Total Reply(0) Reply
  • গাজ ওয়া তুল হিন্দ ১৫ মার্চ, ২০২১, ১২:৪৬ এএম says : 0
    আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদাতের জন্য। পবিত্র কোরআনে তিনি বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না।’
    Total Reply(0) Reply
  • হোসাইন এনায়েত ১৫ মার্চ, ২০২১, ১২:৪৭ এএম says : 0
    যিনি পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করেন তিনিই মুমিন। মুমিনদের কিছু বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তায়ালা কোরআনে জানিয়ে দিয়েছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • মেহেদী হাসান শাওন ১৫ মার্চ, ২০২১, ১২:৪৭ এএম says : 0
    যারা অনর্থক কথাবার্তায় নির্লিপ্ত তারাই মুমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • নাসিম ১৫ মার্চ, ২০২১, ১২:৪৮ এএম says : 0
    প্রকৃত ঈমানদার তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ওপর ঈমান এনেছে এবং এ ব্যাপারে পরে আর কোন সন্দেহ পোষণ করেনি। তারপর প্রাণ ও অর্থ-সম্পদ দিয়ে জিহাদ করেছে। তারাই সত্যবাদী। -(সূরা আল হুজুরাতঃ ১৫)
    Total Reply(0) Reply
  • জোহেব শাহরিয়ার ১৫ মার্চ, ২০২১, ১২:৪৮ এএম says : 0
    প্রকৃত ঈমানদার তো তারাই, আল্লাহকে স্মরণ করা হলে যাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে। আর আল্লাহর আয়াত যখন তাদের সামনে পড়া হয়, তাদের বিশ্বাস বেড়ে যায় এবং তারা নিজেদের রবের ওপর ভরসা করে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন