Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভাব-অনটন নিত্যদিনের সঙ্গী যমুনাচরে মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই

প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

টি এম কামাল, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে

এটা মাছ ধরার কোনো উৎসব না। সংসার জীবনের প্রতিদিনের কাজের অংশ। বাড়ির সকালের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে সেরে ফেলেন চরাঞ্চলের নারীরা। এরপর দল বেঁধে ছোটেন যমুনায়। চরের তীরবর্তী অংশে যমুনার পানিতে নেমে পড়েন তারা। সন্ধান করতে থাকেন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। বাদ থাকে না শিশু-কিশোররাও। তারাও বড়দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাছ খুঁজতে থাকে। তবে এসব নারীর মাছ ধরার কোনো সরঞ্জামাদি নেই। হাতের কারিশমায় মাছ ধরে ফেলেন তারা। সঙ্গে নেন শুধু মাছ রাখার পাতিল। দুপুর পর্যন্ত মাছ ধরে তারা বাড়ি ফেরেন। সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার মাইজবাড়ী, নাটুয়ারপাড়া, তেকানিসহ বেশ কয়েকটি চরাঞ্চল ঘুরে এমন দৃশ্য ওঠে আসে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গেল এক সপ্তাহ আগেও যমুনার বুক উপচে পানি এসব চরাঞ্চল ডুবিয়ে দিয়েছিল। পানি নেমে যাওয়ার পর সেই ক্ষত এখনো শোভা পাচ্ছে চরাঞ্চলগুলোতে। বন্যাকবলিত চরাঞ্চলের বানভাসি মানুষগুলো এখন বেঁচে থাকার নানামুখী লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় প্রত্যেক দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাছ ধরায় ব্যস্ত থাকেন নারীরা। শরীরের সঙ্গে পাতিল বেঁধে রেখে চরের তীরবর্তী অংশ থেকে শুরু করে যমুনার বেশ গভীরে চলে যান মাছ ধরতে। পানিতে ডুব মেরে মাটি হাতিয়ে তারা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরে পাতিলে ভরেন। আর পুরুষরা যখন সময় পান তখনই মাছ ধরতে নেমে পড়েন যমুনায়। অনেকেই বিভিন্ন চর এলাকায় সারিবদ্ধভাবে দ্বারকী পেতে রেখেছেন। বেশকিছু সময় অপেক্ষা করার পর এসব দ্বারকী উঠানো হয়। এরপর তা আবার নির্দিষ্ট স্থানে পেতে রাখা হয়। মাছ ধরার এ কার্যক্রম চলে রাত-দিন। আবার কেউ কেউ বেড় জাল দিয়ে মাছ ধরে থাকেন। এক্ষেত্রে তারা ছোট-বড় নৌকা ব্যবহার করেন। তোউরা (স্থানীয় ভাষায়) জাল দিয়েও মাছ ধরেন অনেকে। মাছ ধরার কাছে বড়শিও ব্যবহার করেন চরাঞ্চলবাসী। নাজমা খাতুন, আছিয়া বিবি, আসমত আরাসহ একাধিক নারী জানান, বংশ পরম্পরায় তারা মাছ ধরে আসছেন। কারণ যমুনা ছেড়ে যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। এমন সুযোগ অদূর ভবিষ্যতে হওয়ারও সম্ভাবনা নেই। তাই যমুনার সঙ্গে যুদ্ধ করেই বেঁচে থাকতে হবে। এসব নারীরা আরো জানান, জীবিকা নির্বাহের জন্য তারা মাছ ধরেন। কেননা অভাব-অনটন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরা যে আয় করেন তা দিয়ে সংসার চলে না। বন্যা হয়ে যাওয়ায় তাদের কাজও নেই। ফলে সংসারের অভাব আরো বেড়ে গেছে। এ কারণে বর্তমানে তাদের প্রত্যেক দিন মাছের সন্ধানে যমুনায় নামতে হয়ে বলেও জানান তারা। গোলসা, ট্যাংরা, পুঁটি, পবদা, পাতাশী, বাঁশ পাতারি, গচুঁই, শিং, মাগুর, শোল, বোয়াল, চিংড়ি, রুই, কাতলা, মৃগেল, চিতল, ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ হাত ও জালে ধরা পড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অভাব-অনটন নিত্যদিনের সঙ্গী যমুনাচরে মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ